দেশজুড়ে

জানালাবিহীন দরগায় মুগ্ধ করে চাঁদের আলো

চারদিকে সবুজ গাছপালা। মাঝে দাঁড়িয়ে দৃষ্টিনন্দন এক দালান। এতে নির্মাণশৈলী ফুটে উঠেছে নান্দনিক কারুকাজে। স্থাপনাটি দেখে চলার পথে থমকে দাঁড়ায় পথিক।

Advertisement

মানিকগঞ্জ শহরের পাশেই পৌরসভার হিজুলি এলাকায় অবস্থিত স্থাপনাটিকে বলা হয় একটি দরগা বা মাজার। ৫২ হাজার ইট দিয়ে তৈরি এ দরগায় কোনো জানালা নেই। তারপরও চাঁদ আর সূর্যের আলো মুগ্ধতা ছড়ায় দিনরাত।

চলতি বছর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ক্যাটাগরিতে স্বাধীনতা পুরস্কারপ্রাপ্ত বিজ্ঞানী ড. মোবারক আহমেদ খান তার পৈতৃক ভিটায় বাবা-মা ও দাদার স্মৃতি ধরে রাখার জন্য দরগাটি নির্মাণ করেন।

নবনির্মিত এ স্থাপনার নির্মাণশৈলীতে প্রাধান্য পেয়েছে পরিবেশবান্ধব আধুনিকতা। আটটি পিলারের ওপর দাঁড়িয়ে আছে ভবনটি। ৩৬টি বৃত্তের সমন্বয়ে নির্মাণ করা হয়েছে ছাদ। অভ্যন্তরীণ সজ্জায় মাথায় রাখা হয়েছে প্রকৃতি ও আধ্যাত্মিকতা।

Advertisement

সিলিংয়ের ৩৬টি বৃত্তাকার ১৬টি নলাকার ফোটায় পরিণত হয়েছে। সেগুলো নিচের দিকে কিছুটা ঝুলে থাকায় সৌন্দর্যের মুগ্ধতা ছড়ায়। কবর তিনটি মোড়ানো হয়েছে সাদা মারবেল পাথরে। জানালাবিহীন এ দরগার চারপাশে রয়েছে ইস্পাতের চারটি দরজা।

ছাদের বৃত্তাকারে রয়েছে তাপরোধক স্বচ্ছ কাচের ছাউনি। সেই কাচ ভেত করে দিনরাত আলো খেলা করে দরগার ভেতরে। রাতে জ্যোৎস্নার আলো মুগ্ধতা ছড়ায় পুরো দরগায়। দাবি করা হচ্ছে, সারা দুনিয়ায় এমন নঁকশায় আর একটিও স্থাপনা নেই। শতভাগ দেশীয় সামগ্রী দিয়ে নির্মাণ করা হয়েছে এ দরগা।নির্মাণ ব্যয় হয়েছে প্রায় কোটি টাকা।

দুই হাজার ২৮০ বর্গমিটার জায়গার ওপর নির্মিত এবং প্রায় ২৫ ফুট উচ্চতার দরগাটির নকশা করেছে নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ‘স্থপতি’।

বিজ্ঞানী ড. মোবারক আহমেদ খান জানান, তার বাবা শাহ মুহাম্মদ মুহসীন খান ওয়াইয়েছিয়া তরিকার একজন সুফি সাধক ছিলেন। মানিকগঞ্জ সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। তার মৃত্যুর পর স্বপ্ন ছিল বাবার কবরে একটি দরগা নির্মাণ করবেন। যেটা হবে ইউনিক। যার সঙ্গে বিশ্বের অন্য কোনো স্থাপনার মিল থাকবে না। এজন্য বিভিন্ন নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কথা হয়েছে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন তিনি।

Advertisement

নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ‘স্থপতি’র এ মডেলটা দেখানোর পর পছন্দ হয় মোবারক আহমেদের। তিনি বলেন, ‘একটা নতুন জিনিস হওয়ায় তাদেরকেও এটা নিয়ে রিসার্চ করতে হয়েছে। আমাদের সময় দিতে হয়েছে। দরগার কাজ শেষ করতে প্রায় দুই বছর সময় লেগে গেছে। এখনো ইলেক্ট্রিক্যাল ডিজাইন এবং বাইরের গেটসহ বেশকিছু কাজ বাকি আছে।’

‘৫২ হাজার ইট লেগেছে দরগাতে। তার প্রায় ৫০ হাজার ইট-ই সাইজ করে কাটতে হয়েছে মেশিনের মাধ্যমে। দরগাটির বিশেষত্ব হলো এর কোনো জানালা নেই। আলো আসে ওপর থেকে’, যোগ করেন বিজ্ঞানী ড. মোবারক আহমেদ খান।

মোবারক আহমেদ বলেন, ‘ভাইবোনদের সহযোগিতায় বাবা-মা ও দাদার সমাধিক্ষেত্রে দরগাটি করতে পেরে আমাদের খুবই ভালো লাগছে। বুকে বিশাল একটা প্রশান্তি। ওনাদের জন্য কিছু করতে পেরেছি। কারণ ওনারা সারাজীবন আমাদের জন্য করে গেছেন।’

বি এম খোরশেদ/এসআর/এমএস