দেশে মোবাইল ফোনের উৎপাদন কমছে। বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) সর্বশেষ প্রকাশিত তথ্যে তিন মাসে স্থানীয়ভাবে প্রায় সাড়ে ৫ লাখ মোবাইল ফোন কম উৎপাদন হয়েছে। এতে দেশে মোবাইল ফোনের উৎপাদন ২০ লাখের নিচে নেমে গেছে। এর মধ্যে বেশি কমেছে স্মার্ট ফোনের উৎপাদন।
Advertisement
উৎপাদনকারীরা বলছেন, অর্থনৈতিক অবস্থা ও অবৈধ মোবাইল ফোনের বাজারের কারণে দেশে উৎপাদিত মোবাইল ফোনের চাহিদা কম। এজন্য উৎপাদনও কমিয়ে দিয়েছেন তারা।
বিটিআরসি প্রতিমাসে মোবাইল ফোনের উৎপাদন কত, তার তথ্য প্রকাশ করে থাকে। সর্বশেষ জানুয়ারি মাসের তথ্য প্রকাশ করেছে নিয়ন্ত্রণ সংস্থাটি।
প্রকাশিত তথ্যানুযায়ী, গত বছরের নভেম্বরে দেশে মোবাইল ফোন উৎপাদন করা হয়েছিল ২৪ লাখ ৩২ হাজার। জানুয়ারিতে সেই সংখ্যা নেমেছে ১৮ লাখ ৯২ হাজারে। অর্থাৎ তিনমাসে ৫ লাখ ৪০ হাজার মোবাইল ফোন উৎপাদন কমেছে। এর মাঝে ডিসেম্বর মাসে উৎপাদন হয়েছিল ২১ লাখ ১০ হাজার।
Advertisement
এদিকে স্মার্ট ফোনের উৎপাদন বেশি কমেছে। গত নভেম্বরে দেশে উৎপাদিত মোবাইল ফোনের ২৮ দশমিক ৪৩ শতাংশ ছিল স্মার্ট ফোন। জানুয়ারিতে সেই অনুপাত কমে ১৮ দশমিক ৮০ শতাংশে নেমেছে।
একই সময়ে ফিচার ফোন (টু-জি) উৎপাদন বেড়েছে। নভেম্বরে ফিচার ফোনের উৎপাদনের হার ছিল ৭১ দশমিক ৫৭ শতাংশ। জানুয়ারিতে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮১ দশমিক ২০ শতাংশ।
জানুয়ারিতে উৎপাদিত মোবাইল ফোনের মধ্যে ১৫ লাখ ৩৭ হাজার টু-জির। ৩ লাখ ৫৩ হাজার ফোর-জি এবং ২ হাজার ৬৭৮টি ফাইভ-জি মোবাইল ফোন উৎপাদন হয়েছে দেশে।
জানা গেছে, বাংলাদেশে বর্তমানে ১৭টি প্রতিষ্ঠান মোবাইল ফোন উৎপাদন করছে। দেশে যে পরিমাণ চাহিদা, তার প্রায় ৯০ শতাংশই এ উৎপাদনকারীরা মেটাতে পারেন বলে দাবি তাদের। ২০১৭ সালে উৎপাদনের অনুমোদন পাওয়ার পর থেকে শুরুতে ভালো অবস্থা থাকলেও এখন উৎপাদন কমতির দিকে। এ নিয়ে হতাশ উৎপাদকরা।
Advertisement
মোবাইল ফোন ইন্ডাস্ট্রি ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (এমআইওবি) নেতাদের দাবি, মোবাইল ফোনের অবৈধ বাজারের কারণে তাদের ব্যবসার ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।
জানতে চাইলে সংগঠনটির সভাপতি জাকারিয়া শহীদ বলেন, দেশের মানুষের সার্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতির কারণে প্রয়োজনের বাইরে কেউ কিছু কিনছেন না। এটা গ্রাহক কমার একটি অন্যতম কারণ। পাশাপাশি অবৈধ মোবাইল ফোনের বাজার এখনো বেশ রমরমা। এটা নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে দেশীয় উৎপাদকরা আরও কোণঠাসা হয়ে পড়বে।
তবে ঈদের মৌসুমে মোবাইল ফোনের চাহিদা বেড়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, মার্চ-এপ্রিলের হিসাব সামনে আসলে, সেখানে দেখা যাবে উৎপাদন বেড়েছে। পরপর দুটি ঈদ, পূজাসহ বিভিন্ন উৎসব রয়েছে। অর্থাৎ বছরের দ্বিতীয় ও তৃতীয় প্রান্তিক চাহিদার সঙ্গে উৎপাদনও বাড়বে।
উৎপাদন কমা এবং অবৈধ মোবাইল ফোনের বাজার নিয়ে জানতে বিটিআরসির দুজন মহাপরিচালকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা এ নিয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে অবৈধ মোবাইল ফোন বন্ধে বিটিআরসি কাজ করছে বলে জানান তারা।
অন্যদিকে এ নিয়ে বিটিআরসির চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মো. মহিউদ্দিনের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।
এএএইচ/এসআইটি/এএসএম