টিউশনি করে পড়াশোনা করেছেন মেধাবী ছাত্র আসাদুল ইসলাম (২৭)। স্বপ্ন ছিল পড়াশোনা করে উচ্চ পদস্থ চাকরি করে ভ্যানচালক বাবার স্বপ্ন পূরণ করবেন। কিন্তু স্বপ্ন পূরণের আগেই শরীরে ধরা পড়লো কিডনিজনিত রোগ। এরপর পরীক্ষা-নীরিক্ষা করে দেখা গেলো দুইটি কিডনিই বিকল। দূরারোগ্য কিডনি রোগে আক্রান্ত হয়ে এখন মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন তিনি।
Advertisement
এখন বেঁচে থাকার জন্য একটি কিডনি চান মেধাবী ছাত্র আসাদুল ইসলাম। যেটুকু জায়গা জমি ছিল তা বিক্রি করে তার নিঃস্ব পরিবার।
আসাদুল ইসলাম লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার বড়খাতা ইউনিয়নের পূর্ব সারডুবী গ্রামের ভ্যানচালক আতোয়ার রহমান ও আজিমা বেগমের একমাত্র ছেলে। হাতীবান্ধা সরকারি আলিমুদ্দিন ডিগ্রি কলেজ থেকে ২০২৩ সালে গণিত বিভাগে বিএসসি পাস করেন তিনি।
জানা গেছে, ছেলের টিউশনি ও বাবার ভ্যান চালানোর টাকা দিয়ে চলতো অভাবের সংসার। কিন্তু ২০২২ সালের জুন মাসে শারীরিক সমস্যা দেখা দিলে রংপুরের ডক্টরস ক্লিনিকে চিকিৎসা শুরু করেন আসাদুল। পরবর্তীতে পরীক্ষা-নীরিক্ষায় ধরা পড়ে তার দুইটি কিডনিই বিকল।
Advertisement
একমাত্র ছেলের কিডনিজনিত রোগে দিশেহারা বাবা-মা। ৬৫ শতক জমির মধ্যে ৬০ শতকই বিক্রি করে ছেলের চিকিৎসা করিয়েছেন। এখন বাড়ির ভিটেটুকু ছাড়া কিছুই নেই।
এরপরও বাবা-মা ও স্ত্রী আসাদুল ইসলামকে একটি কিডনি দিতে চাইলেও তাদের রক্তের গ্রুপের সঙ্গে মিল না থাকায় কিডনি প্রতিস্থাপন করা সম্ভব হয়নি। আসাদুল ইসলামের রক্তের গ্রুপ বি পজেটিভ।
দীর্ঘ দুই বছর ধরে কিডনি ডায়ালাইসিস এবং রক্ত পরিবর্তন করতে গিয়ে খরচ হয়েছে প্রায় ১৭ লাখ টাকা। বর্তমানে সপ্তাহে দুইটি ডায়ালাইসিসের খরচ চালাতে না পেরে দেশ-বিদেশের বিত্তবান ব্যক্তিদের সহযোগিতা ও কেউ যদি একটি কিডনি দান করেন তাহলে প্রতিস্থাপন করে বেঁচে থাকার স্বপ্ন দেখছেন আসাদুল ইসলাম।
রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কিডনি বিশেষজ্ঞ ডাক্তার সুশান্ত কুমার বর্মন জানিয়েছেন, কিডনি প্রতিস্থাপন করলে আসাদুল সুস্থ হতে পারেন। এতে প্রচুর অর্থের প্রয়োজন। তা না হলে ডায়ালাইসিস করে চিকিৎসা নিতে হবে।
Advertisement
আসাদুলের মা আজিমা বেগম বলেন, ছেলের অসুস্থতার কথা শুনে ছেলেকে কিডনি দিতে ঢাকায় গিয়েছিলাম। কিন্তু আমার কিডনি মেলে না। একথা বলতেই অঝোরে কেঁদে ওঠেন তিনি।
কিডনি রোগে আক্রান্ত আসাদুল ইসলাম বলেন, কিডনির ডোনার না মেলায় বেঁচে থাকা কঠিন হয়ে পড়েছে। যদি কেউ মরণোত্তর বা স্বেচ্ছায় কিডনি দান করেন তাহলে আমার বেঁচে থাকা সম্ভব। সপ্তাহে দুইবার করে ডায়ালাইসিস করতে হয়। কিন্তু অর্থের অভাবে ১৫ দিন পর একবার রংপুর প্রাইম হাসপাতালে গিয়ে ডায়ালাইসিস করি।
আতোয়ার রহমান বলেন, একমাত্র ছেলের কিডনি রোগে আক্রান্ত হওয়ার পর আমরা নিঃস্ব হয়ে গেছি। বাড়ির ভিটা ছাড়া কিছুই নেই আমাদের। সব বিক্রি করে ছেলের চিকিৎসা করছি। বর্তমানে ছেলের ডায়ালাইসিস করতে প্রতি সপ্তাহে ৬ হাজার টাকার প্রয়োজন। এত টাকা আমি কই পাই। সমাজে বিত্তবানদের কাছে অনুরোধ করছি ছেলের চিকিৎসার জন্য আমাকে অর্থ দিয়ে সাহায্য করুন।
এ ব্যাপারে হাতীবান্ধা উপজেলার বড়খাতা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবু হেনা মোস্তফা জামাল সোহেল বলেন, আসাদুল ইসলাম অত্যন্ত মেধাবী শিক্ষার্থী। ছোটবেলা থেকে ধার্মিক প্রকৃতির। কিন্তু বর্তমানে পরিবারটি অসহায় হওয়ায় জীবনমৃত্যুর সন্ধিক্ষণে দিন পার করছেন। তিনি সমাজের বিত্তবানদের সহযোগিতা কামনা করেন।
রবিউল হাসান/এফএ/এএসএম