দীর্ঘ নয় বছর পর বাংলাদেশ বিমান (বলাকা) আবারও ইতালির আকাশে উড়ছে। এরই মধ্যে হাঁক-ডাক করে আনুষ্ঠানিকভাবে শুভ উদ্বোধন করা হয়। ৩৪ বছর ধরে ইতালির আকাশে বলাকা প্রবাসী বাংলাদেশিসহ অন্যান্য দেশের যাত্রীদের সেবা দিয়ে অবশেষে লোকসানের কারণে ২০১৫ সালের ৬ এপ্রিল বন্ধ করে দেওয়া হয়।
Advertisement
জানা গেছে, লোকসানের কারণ তদন্ত না করে এরই মধ্যে নতুন করে আবার চালু করল রোম-ঢাকা রোম ফ্লাইট। ২৭ মার্চ এমপি, সাংবাদিক ও বিমান কর্তৃপক্ষের একটি বহর নিয়ে রোমের আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণের মধ্য দিয়ে আবার ইতালির আকাশে বলাকা উড়া নিশ্চিত করা হয়।
প্রবাসীরা বলছেন, যদি সঠিক সেবা পায় বিমান থেকে তবে এ রুটে নতুন করে যাত্রী চলা শুরু করবে। ইতালিতে প্রায় দুই লাখ বাংলাদেশি বসবাস করছেন। তারা তাদের সেবা নিশ্চিতের মাধ্যমে পুনরায় এই রুট দীর্ঘমেয়াদি হবার সম্ভাবনা রয়েছে।
যদি বিমান কর্তৃপক্ষ যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে ব্যর্থ হয় তবে এ যাত্রায় দীর্ঘমেয়াদি বিমান থাকা অসম্ভব হবে। তাই অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা রোধ না করতে পারলে যে লক্ষ্যমাত্রা তা পূরণ সম্ভব হবে না।
Advertisement
এ ব্যাপারে ইতালি প্রবাসী আনিচুজ্জামান আনিস বলেন, দীর্ঘদিন পর বাংলাদেশ বিমানের ফ্লাইট চালু হওয়ায় আমরা আনন্দিত। সাথে সাথে শঙ্কা রয়েছে আবার যেন অব্যবস্থপনায় ফ্লাইট বন্ধ হয়ে না যায়। আমরা প্রবাসীরা লক্ষ্য করেছি বিমান বাংলাদেশের ফ্লাইট উদ্বোধনে বিমান কর্মকর্তা, এমপি, সাংবাদিকসহ অধিক মেহমান রাষ্ট্রীয় খরচে এসে অহেতুক রাষ্ট্রের এত টাকা খরচ না করলেও পারতেন। এক্ষেত্রে কৃচ্ছসাধন করলে রাষ্ট্রীয় এত টাকা অপচয় হত না।
তিনি বলেন, আমরা আরও অবগত হয়েছি বাংলাদেশ বিমান ইরানের আকাশসীমা ব্যবহার করলে আট ঘণ্টায় আমরা ঢাকা পৌঁছাতে পারবো। এ রুটে অবরোধের কারণে হয়তো সমস্যা হতে পারে। এটা কূটনৈতিকভাবে সমাধান করলে বিমান ভাড়া আরও কম হবে। অন্য রুট ব্যবহার করলে সময় বেশি লাগবে ভাড়াও বাড়বে। এতে ইতালি প্রবাসীদের আগ্রহ কমে যাবে, বিমান লোকসানের সম্মুখীন হবে।
এ প্রসঙ্গে, ইতালি থেকে প্রকাশিত দেশপ্রিয় নিউজ সম্পাদক ও প্রকাশক সোহেল মজুমদার শিপন বলেন, বিমান বাংলাদেশ স্বাধীনতার ৫০ বছর পরেও বাংলাদেশিদের আস্থা অর্জন করতে পারেনি, এটি বেদনার। ২০১৫ সালে কেন রোম-ঢাকা-রোম পথে বিমান চলাচল বন্ধ করতে হয়েছে, এজন্য দায়ী কে? এখন আবার বিমানে করে এমপি, আমলা, সাংবাদিক ইতালিতে এনে কোটি কোটি টাকা অপচয় করা হয়েছে, কয়েক বছর পর দেখা যাবে এমন অপচয় ও অনিয়মের জন্য আবারো বিমান চলা বন্ধ হয়ে যাবে।
এ নিয়ে অভিবাসী পরামর্শক মাইনুল ইসলাম নাসিম সামাজিকযোগাযোগ মাধ্যমে লিখেছেন, বিমানের ইতালি ফ্লাইট পুনরায় চালুর নামে রাষ্ট্রের কোটি কোটি টাকা অপচয় করে এয়ারক্রাফট বোঝাই করে এমপি, কর্মকর্তা, সাংবাদিকদের প্রমোদ ভ্রমণে রোমে নিয়ে আসা ইতালি প্রবাসী ২ লক্ষাধিক বাংলাদেশির জন্য কলংকের, রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের জন্য চরম লজ্জার। বিমানের ঢাকা-রোম-ঢাকা ফ্লাইট অতীতের মতো আবারও লস-প্রজেক্ট হলে, সিট খালি রেখে সিন্ডিকেটের হাতে পুনরায় ধরা দিয়ে বসলে, লুটপাটের পুনরাবৃত্তি ঘটলে দায়ভার অবশ্যই নিতে হবে ঢাকা থেকে রোমে আসা সাংবাদিক ও কর্মকর্তাদের।
Advertisement
তিনি আরও লেখেন, প্রতি ফ্লাইটে ৮৮ লাখ টাকা করে লোকসানের পরিণতিতে যখন ২০১৫ সালে বিমানের ঢাকা-রোম-ঢাকা রুট বন্ধ হয়ে যায়; প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঠিক সিদ্ধান্তে তখন কোথায় ছিল গণমাধ্যম? কোটি কোটি টাকা লোকসান, পুকুরচুরি, সিট/টিকিট নির্ভর সিন্ডিকেট বাণিজ্য তুলে ধরতে ঢাকা থেকে সাংবাদিকদের বিশাল বহরকে কিন্তু তখন রোমে নিয়ে আসেনি বিমান।
এ ব্যাপারে নজরুল ভুইয়ান নামে এক ব্যক্তি লেখেন, ২০১৫ সালে কেন বন্ধ হলো? লস হলে কেন হলো? কাদের কারণে লস হলো? সেগুলো আলোচনা বা সমাধান না করে আবারো লুটপাটের প্রস্তুতি। এবারও আগের মতই হওয়ার সম্ভাবনা।
ইতালিতে, ৩৪ বছর বিমান চলার পরে বন্ধ হয়ে আবার দীর্ঘ ৯ বছর পর ঢাকা রোম-ঢাকা বুধবার (২৭ মার্চ, ২০২৪) থেকে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স ফ্লাইট চালু করেছে।
এমআরএম/জিকেএস