দেশজুড়ে

অভিযানে বন কর্মকর্তাকে ডাম্পট্রাকের চাপায় হত্যা

রাতের আঁধারে পাহাড়ের মাটি কেটে পাচারে বাধা দেওয়ায় উখিয়ায় বন বিট কর্মকর্তাকে ডাম্পট্রাক চাপা দিয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে। শনিবার (৩১ মার্চ) রাত সাড়ে তিনটার দিকে উপজেলার রাজাপালং ইউনিয়নের হরিণমারা এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

Advertisement

হত্যার পর গাড়িটি ঘুমধুম হয়ে বান্দরবানে পালানোর সময় বিজিবি কর্তৃক জব্দ করা হয়েছে। তবে পালিয়েছেন ঘাতক চালক ও হেলপার।

রোববার (৩১ মার্চ) দুপুরে কক্সবাজার বিভাগীয় বন কার্যালয়ে নিহতের প্রথম জানাজা শেষে মরদেহ গ্রামের বাড়ি মুন্সিগঞ্জে পাঠানো হচ্ছে।

নিহত বন কর্মকর্তা সাজ্জাদুজ্জামান সজল (৩০) মুন্সিগঞ্জ জেলার গজারিয়া উপজেলার মোহাম্মদ শাহজাহানের ছেলে। তিনি কক্সবাজার দক্ষিণ বনবিভাগের উখিয়া রেঞ্জের দোছড়ি বনবিটের বিট কর্মকর্তার দায়িত্বে ছিলেন। দুবছর আগে বিয়ে করা সাজ্জাদের নয় মাসের একটি মেয়ে সন্তান রয়েছে।

Advertisement

তার সঙ্গে থাকা বনরক্ষী মোহাম্মদ আলীকে (২৭) আহত অবস্থায় উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করেছে স্থানীয়রা স্থানীয়রা।

উখিয়া বন রেঞ্জ কর্মকর্তা গাজী মুহাম্মদ শফিউল আলম জানান, উখিয়ায় রাতের আঁধারে কোথাও না কোথাও অবৈধভাবে পাহাড় কাটা চলে। তাই রেঞ্জের সকল বিট কর্মকর্তারা রাতে নিয়মিত অভিযানে নামেন। প্রতিদিনের মতো শনিবার সেহরির সময় অভিযান টহলে যান উখিয়া রেঞ্জের দোছড়ি বিট কর্মকর্তা সাজ্জাদুজ্জামান।

এ সময় খবর পান, এলাকার হরিণমারা লালুর বরোঘাটা এলাকা দিয়ে তুতুরবিল গ্রামের চিহ্নিত পাহাড়খেকো ছৈয়দ আলম ওরফে কানা ছৈয়দ পাহাড়ের মাটি ডাম্পট্রাক যোগে পাচার করছেন। মোটরসাইকেল চালিয়ে সাজ্জাদুজামান ও তার সহকারী সেখানে পৌঁছে ডাম্পট্রাকটি থামাতে সংকেত দেওয়ার সঙ্গে ঙ্গে মাটিভর্তি গাড়িটি তাদের চাপা দিয়ে চলে যায়। এতে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। আহত হন সঙ্গে থাকা অপর বনকর্মী।

তিনি আরও জানান, তাদের চাপা দেওয়ার পর ডাম্পট্রাকটি ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে ঘুমধুম সীমান্ত দিয়ে নাইক্ষ্যংছড়ি হয়ে লামা-বান্দরবানে আত্মগোপনে চলে যাচ্ছিল। এ সময় বিজিবির সহায়তায় গাড়িটি জব্দ করা হয়।

Advertisement

কক্সবাজার সদর রেঞ্জ কর্মকর্তা সমীর রঞ্জন সাহা জানান, ঘটনার খবর পেয়েই উখিয়া রেঞ্জ কর্মকর্তা গাজী শফিউল ও উখিয়া থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। নিহত সাজ্জাদের মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য কক্সবাজার সদর হাসপাতালে নেওয়া হয়।

দক্ষিণ বনবিভাগের হিমছড়ি বনবিট কর্মকর্তা মো. কামরুজ্জামান শোভন জানান, ময়নাতদন্তের পর দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে বিভাগীয় বন কার্যালয় মাঠে নিহত সাজ্জাদুজ্জামানের প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এতে সহকর্মী ও শুভার্থীরা অংশ নেন। জানাজা শেষে তার মরদেহ গ্রামের বাড়ি মুন্সিগঞ্জে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়।

উখিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শামীম হোসাইন বলেন, বন কর্মকর্তা হত্যার খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে যায় পুলিশ। হত্যায় জড়িতদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনতে কাজ করছে পুলিশ।

কক্সবাজার দক্ষিণ বনবিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মো. সারোয়ার আলম জানান, বনরক্ষা করতে গিয়ে সাজ্জাদ নিজের জীবন দিয়েছেন। তার নির্মম মৃত্যুতে আমরা একজন দক্ষ ও পরিশ্রমী বন কর্মকর্তাকে হারালাম। ঘাতক ডাম্পট্রাক চালক ও তার সহকারীর বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার পাশাপাশি তাদের গ্রেফতারে প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে।

২০২০ সালে ফরেস্টার হিসেবে বন বিভাগে যোগ দেন সাজ্জাদুজ্জামান সজল। দোছড়ি বনবিটে গত বছরের শেষ দিকে যোগ দেওয়ার পর থেকেই পাহাড় অধ্যুষিত উখিয়ায় পাহাড় ও বন রক্ষায় প্রায় প্রতিরাতেই অভিযান পরিচালনা করে আসছিলেন তিনি। গত তিন মাসে দুই ডজনের মতো ডাম্পট্রাক জব্দ করে মামলার আওতায় এনে রেঞ্জ অফিসে রেখেছেন তিনি। একরাতে চারটি মাটিভর্তি ডাম্পট্রাক জব্দের ঘটনাও আছে তার। এসব কারণে তার ওপর চরম ক্ষুব্ধ ছিল পাহাড়খেকো চক্র। যার ফলশ্রুতিতে তাকে গাড়িচাপায় হত্যার শিকার হতে হয়েছে বলে মনে করছেন তার সহকর্মীরা।

সায়ীদ আলমগীর/এফএ/এমএস