• ঈদের কেনা-কাটায় ব্যস্ত ক্রেতারা • বিক্রি নিয়ে সন্তুষ্ট বিক্রেতারা • ফুটপাতের দোকানপাট সড়কে যানজট • সক্রিয় মোবাইল চোর, ১০ দিনে ৪০ জিডি • মার্কেটের পরিবেশ সুষ্ঠু রাখতে সতর্ক মালিক সমিতি
Advertisement
রাজধানীর নিউমার্কেট এলাকায় ছোট-বড় মিলিয়ে ১৯টি মার্কেট। সারাবছরই ক্রেতা সমাগম থাকে এসব মার্কেটে। তবে ঈদ, পূজাসহ অন্য উৎসব-অনুষ্ঠান কেন্দ্র করে হাজারো ক্রেতায় মুখরিত থাকে পুরো নিউমার্কেট এলাকা। ঢাকা ও এর আশপাশের এলাকা থেকে পছন্দের পোশাকসহ অন্য জিনিসপত্র কিনতে এসব মার্কেটে আসেন ক্রেতারা। উৎসব কেন্দ্র করে ক্রেতা-বিক্রেতাদের ব্যস্ততায় জমজমাট থাকে রাজধানীর ঐতিহ্যবাহী নিউমার্কেট এলাকা।
তবে লোকসমাগমের কারণে কিছু ভোগান্তির সৃষ্টি হয় ব্যস্ততম এই এলাকায়। সড়কে তীব্র যানজটের পাশাপাশি মার্কেটগুলোতে অপরাধমূলক কাজকর্ম বেড়ে যায়। এর মধ্যে চুরি-ছিনতাইয়ের ঘটনা বেশি ঘটে। এসব কারণে অন্য সময়ের তুলনায় আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে বেশি সতর্ক থাকতে হয় পুলিশকে। এসব নিয়ন্ত্রণে নানান উদ্যোগও নেওয়া হয়।
গত কয়েক দিনে নিউমার্কেট এলাকায় অবস্থিত মার্কেটগুলো ঘুরে দেখা যায়, ঈদের কেনাকাটা করতে ঢাকা ও আশপাশের এলাকা থেকে বিভিন্ন বয়সী মানুষ আসছেন। ঈদ কেন্দ্র করে বেচা-বিক্রিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন ব্যবসায়ীরা।
Advertisement
ব্যবসায়ীরা বলছেন, এবার দেশে রাজনৈতিক পরিবেশ স্থিতিশীল থাকায় মার্কেটে ক্রেতা সমাগম বেড়েছে। গত কয়েক বছরের ক্ষতি পুষিয়ে এবার লাভের দেখা পাবেন বলে আশা করছেন তারা।
তবে দাম নিয়ে অভিযোগ রয়েছে ক্রেতাদের। তাদের অভিযোগ, আগের তুলনায় কাপড়ের দাম অনেক বেড়েছে। বাজেটের বাইরে হওয়ায় অনেকে পছন্দের কাপড় কিনতে পারছেন না। বাধ্য হয়ে বাজেটের মধ্যেই কেনাকাটা সারতে হচ্ছে অনেককে।
আরও পড়ুন
ঈদের কেনাকাটা: এক্সপোর্ট কোয়ালিটির কাপড়েই আস্থা তরুণদের গাউসিয়ায় জমে উঠেছে ঈদের বেচা-কেনা, টার্গেট কয়েকশ কোটিনিউমার্কেটে কাপড় কিনতে আসা যাত্রাবাড়ী এলাকার বাসিন্দা রাউফুল আলম জাগো নিউজকে বলেন, ‘প্রতিবার ঈদে পরিবার এবং আত্মীয়স্বজনদের জন্য নিউমার্কেট থেকে কেনাকাটা করি। এখানে অনেকগুলো মার্কেট আছে। পছন্দমতো ঘুরে কেনাকাটা করা যায়। তবে গত কয়েক বছরের তুলনায় এবার কাপড়ের দাম বেশি মনে হচ্ছে, যা বাজেট করে নিয়ে আসছিলাম তা দিয়ে সবার কাপড় কেনা সম্ভব হচ্ছে না।
Advertisement
নিউমার্কেটের গ্লোব সুপার মার্কেটের বিক্রেতা আজিজ মিয়া বলেন, ‘এবার রমজানের প্রথম থেকেই ক্রেতারা আসছেন। বিক্রিও বেশ ভালো। ঈদে ভালো ব্যবসা হবে আশা করছি। অনেক ক্রেতা দাম বেশির অভিযোগ করছেন, কী করবো! আমরা বেশি দামে কিনে আনি, বেশি দামেই বিক্রি করতে হবে।’
তবে এই এলাকায় কেনাকাটা করতে এসে ভোগান্তিতে পড়তে হয় ক্রেতাসহ নিউমার্কেটের সামনের মিরপুর সড়ক দিয়ে যাতায়াতকারীদের। শুধু সাইন্সল্যাব মোড় থেকে নীলক্ষেত মোড় পার হতেই অনেক সময় পার হয়ে যায়। অবশ্য এ যানজটের অন্যতম মূল কারণ ফুটপাতের দোকানপাট। ফুটপাতে থাকা দোকানগুলোর কারণে পথচারীরা বাধ্য হয়ে রাস্তা ব্যবহার করে যাতায়াত করেন। এছাড়া নিউমার্কেটের নিউ সুপার মার্কেট এবং গাউছিয়া মার্কেট সংযোগকারী ফুটওভার ব্রিজের নির্মাণকাজ চলমান থাকায় পথচারীরা বাধ্য হয়ে রাস্তার মাঝে থাকা লোহার ব্যারিকেডের ভাঙা অংশ দিয়ে রাস্তা পারাপার হচ্ছেন। এতে সড়কে চলাচলকারী গাড়ির গতি আরও কমে যাচ্ছে।
আরও পড়ুন
ঈদ বাজারেও ক্রেতা সংকটে বেনারসি পল্লি চাঁদপুরে জমে উঠেছে ঈদ বাজারএদিকে ঈদ কেন্দ্র করে ক্রেতাদের বাড়তি চাপ সামাল দেওয়া ও মার্কেটের পরিবেশ ঠিক রাখতে তৎপর ব্যবসায়ী মালিক সমিতি। মার্কেটগুলোতে অগ্নিনিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার, নিজস্ব পাহারাদার দিয়ে সার্বক্ষণিক পাহারা দেওয়া, সিসি ক্যামেরাসহ নানান উদ্যোগ নিয়েছে সংগঠনগুলো।
মার্কেটে ক্রেতা হয়রানি বন্ধ ও সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে চন্দ্রিমা সুপার মার্কেট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. আনোয়ার হোসেন টুটুল জাগো নিউজকে বলেন, ‘মার্কেট পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। মার্কেট হাঁটা-চলার জন্য উন্মুক্ত রাখা হয়েছে। এখানে তিনটি ব্লকে ৯৬টি সিসি ক্যামেরা মালিক সমিতির অফিস থেকে মনিটরিং করা হয়। এছাড়া অধিকাংশ দোকানের নিজস্ব সিসি ক্যামেরা আছে। মার্কেটে মোট ৪০৬টি দোকান আছে। অগ্নিনিরাপত্তা ব্যবস্থাও জোরদার করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেনি।’
নিউমার্কেট বণিক সমিতির সভাপতি ডা. দেওয়ান আমিনুল ইসলাম শাহীন বলেন, ‘মার্কেট ও আশপাশের এলাকার নিরাপত্তা নিশ্চিতে পুলিশের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে। যানজট নিয়ন্ত্রণে পুলিশ কাজ করছে। আমরা মার্কেটের গেটগুলোতে যেন ভিড় না জমে সেদিকে খেয়াল রাখছি। এছাড়া শিশুরা যেন বাবা-মায়ের সঙ্গে শপিংয়ে এসে হাত থেকে ছুটে হারিয়ে না যায় সেদিকে আমাদের গার্ডরা খেয়াল রাখছেন। ক্রেতারা যেন তাদের ব্যাগ সতর্কভাবে রাখেন সেজন্য সতর্ক করা হচ্ছে। মার্কেটে ক্রেতা আসছেন। আশা করি সামনে বিক্রি আরও ভালো হবে।’
আরও পড়ুন
গরমে শিশুদের ঈদের পোশাক যেমন হবে কম দামের পোশাক-জুতার বড় বাজার গুলিস্তানঈদ কেন্দ্র করে অতিরিক্ত লোকসমাগমে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের ঘটনাও ঘটছে। প্রতিদিনই মোবাইল চুরির ঘটনায় থানায় একাধিক সাধারণ ডায়েরি (জিডি) হচ্ছে। রমজানের গত ১০ দিনে মোবাইল চুরির ঘটনায় নিউমার্কেট থানায় জিডি হয়েছে ৪০টি। তবে অনেকেই মোবাইল খোয়া গেলেও থানায় জিডি করেন না। নারীদের ব্যাগ এবং ছেলেদের পকেট থেকে মানিব্যাগ চুরির ঘটনাও ঘটছে৷ এসব অপরাধ ঠেকাতে সচেতনামূলক কার্যক্রম পরিচালনাসহ পুলিশ তৎপর। প্রতিটি মার্কেটে অডিও রেকর্ড দেওয়া হয়েছে। এতে চুরি বা ছিনতাই ঘটনা এড়াতে সতর্কতার পাশাপাশি পুলিশি সহায়তা নেওয়ার কথাও বলা হচ্ছে। এছাড়া গাউছিয়া মার্কেটের সামনে ২৪ ঘণ্টা অস্থায়ী পুলিশ কন্ট্রোল রুম স্থাপন করা হয়েছে। সেই সঙ্গে এসব এলাকায় থাকা বিভিন্ন ব্যাংক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানসহ ব্যবসায়ী মালিক সমিতির নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছে নিউমার্কেট থানা পুলিশ।
পুরো এলাকার পুলিশের মনিটরিং কার্যক্রমের বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএমপির নিউমার্কেট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে প্রতিদিন ৫০ জন পুলিশ সদস্য দায়িত্ব পালন করছেন। অতিরিক্ত ট্রাফিক পুলিশও রয়েছে। ক্লোজ মনিটরিংয়ের জন্য পুলিশের কন্ট্রোল রুম স্থাপন করা হয়েছে। জনগণের সচেতনতায় অডিও রেকর্ড বাজানো হচ্ছে। ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠানসহ মার্কেটের ব্যবসায়ী সমিতির সঙ্গে একাধিকবার বৈঠক করেছি। অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এড়াতে পুলিশ সতর্ক।’
আরও পড়ুন
ধীরে ধীরে জমছে ঈদের কেনাকাটা, শাড়িতে আগ্রহ কম জাকাতের শাড়ি-লুঙ্গির কদর কমেছে, টাকা দিয়ে দেন ধনীরাযানজট এবং ফুটপাতে দোকানের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এ এলাকায় অতিরিক্ত ক্রেতা সমাগম এবং অতিরিক্ত যানবাহনই যানজটের মূল কারণ। ফুটপাত দখলমুক্ত করতে পুলিশের অভিযান চলমান। ফুটপাত দখলমুক্ত করতে শুধু থানা পুলিশ নয়, সিটি করপোরেশনের সমন্বয় প্রয়োজন।’
মোবাইল চুরির বিষয়ে বলেন, ‘নারীদের ব্যাগ এবং ছেলেদের পকেট থেকে মোবাইল চুরির ঘটনা ঘটছে। মূলত ভিড়ের মধ্যে এ ধরনের ঘটনা ঘটে। আমরা এসব নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছি।’
এনএস/ইএ/জেআইএম