ক্যাম্পাস

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে নেই ফার্মেসি, রাতবিরাতে ভোগান্তি

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) ছাত্রদের ১৩টি এবং ছাত্রীদের পাঁচটি আবাসিক হলসহ বেশকিছু হোস্টেল ও ছাত্রাবাসে কমপক্ষে আঠারো থেকে বিশ হাজার শিক্ষার্থীর বসবাস। তবে এই বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থীর স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য আবাসিক হল ও হোস্টেলগুলোতে নেই কোনো ফার্মেসি বা মেডিসিন কর্নার। পুরো বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে রয়েছে একটি মাত্র ওষুধের দোকান। যেটি অবস্থিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্লাবে এবং এই একটি ওষুধের দোকানের ওপরই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে কর্মকর্তা-কর্মচারী সবাই নির্ভরশীল।

Advertisement

হলের দোকানগুলোতে নাপা কিংবা প্যরাসিটামলজাতীয় কিছু ওষুধ পাওয়া গেলেও প্রয়োজনীয় বেশিরভাগ ওষুধই সেখানে মেলে না। ফলে হলপাড়ার (বিজয় একাত্তর হল, বঙ্গবন্ধু হল, জিয়া হল, কবি জসীমউদদীন হল) একজন অসুস্থ শিক্ষার্থীকে ওষুধ কেনার জন্য যেতে হয় শাহবাগ, কাঁটাবন বা বিশ্ববিদ্যালয় ক্লাবে। সূর্যসেন হল, মুহসীন হল, জহুরুল হক হলের শিক্ষার্থীদের ওষুধ কিনতে যেতে হয় শাহবাগ, পলাশী বা আজিমপুরে।

এছাড়া কবি সুফিয়া কামাল হল, ফজলুল হক মুসলিম হল, শহীদুল্লাহ্ হল ও অমর একুশে হলের শিক্ষার্থীদের ওষুধের প্রয়োজন হলে যেতে হয় আনন্দবাজার, ঢাকা মেডিকেল অথবা চাঁনখারপুল এলাকায়। বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হল, কুয়েত মৈত্রী হল ও শাহনেওয়াজ হোস্টেলের একজন অসুস্থ শিক্ষার্থীর ওষুধ কেনার জন্য আজিমপুরের ওষুধের দোকানগুলোই একমাত্র ভরসা।

ছাত্রী হলগুলোতে আলাদা করে বিশেষ স্বাস্থ্যসেবার কোনো আয়োজন দেখা যায় না। ছাত্রদের হলে ফার্মেসি না থাকলেও ‘সিক বয়’ হিসেবে দু-একজন কর্মচারী থাকেন। যারা অসুস্থ শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন সেবা দেন। যদিও তাদের নিয়েও অভিযোগ আছে ছাত্রদের। কিন্তু ছাত্রীদের হলে ‘সিক গার্ল’ হিসেবে কোনো কর্মচারীই নেই

Advertisement

অথচ অসুস্থ অবস্থায় শিক্ষার্থীদের হাতের নাগালে ওষুধের ব্যবস্থা রাখার কথা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন, একজন অসুস্থ শিক্ষার্থীকে ওষুধ কেনার জন্য সহ্য করতে হয় আরেক ধকল। ফলে নিয়মিত চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয় শিক্ষার্থীদের। সবচেয়ে বেশি ভোগান্তির শিকার হতে হয় আবাসিক হলের ছাত্রীদের।

আরও পড়ুন

ওষুধ শিল্প চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে ২০২৬ সাল থেকে কমিউনিটি ক্লিনিকের জন্য ১৫০ কোটি টাকার ওষুধ কিনছে সরকার ৬ মাসে ৫ হাজার ৯০০ কোটি টাকার ওষুধ রপ্তানি

স্বভাবতই পুরুষদের চেয়ে নারীদের প্রাথমিক চিকিৎসার সরঞ্জামাদি বেশি প্রয়োজন হয়। কিন্তু ছাত্রী হলগুলোতে আলাদা করে বিশেষ স্বাস্থ্যসেবার কোনো আয়োজন দেখা যায় না। ছাত্রদের হলে ফার্মেসি না থাকলেও ‘সিক বয়’ হিসেবে দু-একজন কর্মচারী থাকেন। যারা অসুস্থ শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন সেবা দিয়ে থাকেন। যদিও তাদের নিয়েও অভিযোগ আছে ছাত্রদের। কিন্তু ছাত্রীদের হলে ‘সিক গার্ল’ হিসেবে কোনো কর্মচারীই নেই।

শামসুন নাহার হলের শিক্ষার্থী মুহাইমিনা খাতুন জাগো নিউজকে বলেন, আমাদের হলের স্টেশনারি দোকানে শুধু প্যারাসিটামল আর গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ পাওয়া যায়। যে কারণে বাধ্য হয়ে ঢাকা মেডিকেলের সামনে, বিশ্ববিদ্যালয় ক্লাবে অথবা শাহবাগে গিয়ে ওষুধ আনতে হয়। এতে অনেকটা সময় অপচয় হয়। এক্ষেত্রে বিশেষত মেয়েদের হলগুলোতে একটা করে মেডিসিন কর্নার থাকা অত্যন্ত প্রয়োজন। হঠাৎ কোনো ওষুধ প্রয়োজন হলে রাতবিরাতে বাইরে যেতে হয়। আমি মনে করি, প্রত্যেক হলে একটি ফার্মেসি থাকা দরকার।

Advertisement

বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারেও শিক্ষার্থীরা সর্বোচ্চ প্যারাসিটামল বা সমমানের ওষুধ পান। এর বেশি কিছু সেখানেও সরবরাহ করা হয় না। ফার্মেসির দাবি শিক্ষার্থীরা জানিয়ে আসছেন দীর্ঘদিন ধরেই। কিন্তু এ বিষয়ে হল প্রশাসন ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কোনো কার্যকরী পদক্ষেপ দেখা যায় না।

জহুরুল হক হলের শিক্ষার্থী সুজন আলী বলেন, আমাদের হলের বিশাল এলাকার ভেতরে মুচির দোকান থেকে শুরু করে সেলুন, ধোপা, স্টেশনারি ও বিভিন্ন ধরনের খাবারের দোকান রয়েছে। কিন্তু একটা প্যারাসিটামলের জন্য আমাকে হয় পলাশী অন্যথায় ঢাবি ক্লাবে যেতে হয়। হলের ভেতর নির্দিষ্ট একটি ওষুধের দোকান বা কর্নার থাকা দোষের কেন?

বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারেও শিক্ষার্থীরা সর্বোচ্চ প্যারাসিটামল বা সমমানের ওষুধ পান। এর বেশি কিছু সেখানেও সরবরাহ করা হয় না। ফার্মেসির দাবি শিক্ষার্থীরা জানিয়ে আসছেন দীর্ঘদিন ধরেই। কিন্তু এ বিষয়ে হল প্রশাসন ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কোনো কার্যকরী পদক্ষেপ দেখা যায় না

গত বছরের আগস্টে ফার্মেসি স্থাপনের দাবিতে মানববন্ধন ও স্মারকলিপি দিয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল শিক্ষার্থী। তারা কার্জন হল এলাকায় ফার্মেসি ও ভেন্ডিং মেশিনের দাবিতে মানববন্ধন করেন। এসময় শিক্ষার্থীরা জানিয়েছিলেন, দীর্ঘদিন ধরে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে নারী শিক্ষার্থীদের জরুরি সেবার জন্য ফার্মেসি চাওয়া হয়েছে। কিন্তু প্রশাসন নির্বিকার। এ এলাকায় ছাত্রীদের জরুরি প্রয়োজনে ফার্মেসি সেবার দরকার হয়। শুধু ছাত্রীরাই নন, যে কোনো জরুরি সমস্যায় ছাত্রদের জন্যও ফার্মেসি প্রয়োজন। জনস্বাস্থ্যের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে এ এলাকায় ফার্মেসি/ভেন্ডিং মেশিন স্থাপন করলে শিক্ষার্থীরা উপকৃত হবেন।

এ বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে কি না- জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. সীতেশ চন্দ্র বাছার জাগো নিউজকে বলেন, এটা সাধারণ শিক্ষার্থীদের একটি দাবি। কিন্তু আমরা আসল জায়গাটিই তো এখনো ঠিক করতে পারিনি। আমরা প্রথমত চেয়েছিলাম আমাদের মেডিকেল সেন্টারের সার্ভিসটি অত্যাধুনিক করতে। সেটি শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের দ্বারা পরিচালিত করতে পারলে, সেই সাপোর্ট তৈরি করতে পারলে আমরা হলগুলোতে এ সার্ভিস এক্সটেন্ড করতে পারবো।

আরও পড়ুন

দেশে বিনামূল্যে মাত্র ১.৬২ শতাংশ ওষুধ পায় রোগীরা বেশিরভাগ অ্যান্টিবায়োটিক অকার্যকর হয়ে গেছে শহীদ বুদ্ধিজীবীর স্বীকৃতি পেলেন সেই ‘চা দোকানি’ মধুদা

‘উপাচার্যের এ বিষয়ে পরিকল্পনা রয়েছে। মেডিকেল সেন্টারটি আধুনিক ও উন্নতমানের করার জন্য তার অভিপ্রায় রয়েছে। এ বিষয়ে আমাদের গত সিনেট অধিবেশনে মোটামুটি আলোচনা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে আমরাও সিরিয়াসলি ভাবছি’- বলেন তিনি।

হলে হলে ফার্মেসি করাটা একটু মুশকিলই। জরুরি ওষুধের প্রয়োজনে কল করলে মেডিকেল সেন্টার সার্ভিসটি যেন সরাসরি নির্দিষ্ট হলের গেটে পৌঁছে যায়, সে ব্যবস্থা আমরা ধীরে ধীরে তৈরি করবো। তার আগে মেডিকেল সেন্টার ক্যাপাবল করতে, ক্যাপাসিটি বাড়াতে উপাচার্যের সঙ্গে শিগগির কথা বলবো

ড. সীতেশ চন্দ্র বাছারের ভাষ্য, আমরা যদি মেডিকেল সেন্টারের সেবা বাড়াতে পারি তাহলে সেখান থেকেই শিক্ষার্থীদেরও প্রয়োজনীয় সেবা দেওয়া সম্ভব হবে। কিন্তু হলে হলে ফার্মেসি করাটা একটু মুশকিলই। জরুরি ওষুধের প্রয়োজনে কল করলে সার্ভিসটি যেন সরাসরি নির্দিষ্ট হলের গেটে পৌঁছে যায়, সে ব্যবস্থাটা আমরা ধীরে ধীরে তৈরি করবো।

‘তার আগে মেডিকেল সেন্টার ক্যাপাবল করতে, ক্যাপাসিটি বাড়াতে আমরা উপাচার্যের সঙ্গে শিগগির কথা বলবো। এর আধুনিকায়নে যে প্ল্যান আছে তা বাস্তবায়ন করতে পারলে ভবিষ্যতে হাতের নাগালে ওষুধ বা সেবা পেতে কোনো সমস্যা হবে না। শিক্ষক-শিক্ষার্থীদেরও বর্তমান অবস্থা থেকে পরিত্রাণ মিলবে’- যোগ করেন উপ-উপাচার্য।

হাসান আলী/এমকেআর/এমএস