জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে ২০১৪ সালের শ্রেষ্ঠ ছবি হিসেবে মুরাদ পারভেজের কাহিনি, চিত্রনাট্য পরিচালনায় ‘বৃহন্নলা’ চলচ্চিত্রটি নির্বাচিত হয়েছিলো। কিন্তু গল্প চুরির অভিযোগের মুখে অবশেষে সেই পুরস্কার প্রত্যাহার করে নিয়েছে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে জুরি বোর্ড।গেল সপ্তাহে জুরি বোর্ডের এক সভায় চিত্রনায়ক ফেরদৌস ও সোহানা সাবা অভিনীত এই ছবির পুরস্কারটি বাতিলের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়েছে। জুরি বোর্ড সদস্য বিটিভির বর্তমান মহাপরিচালক হারুন অর রশিদ বলেন, ‘জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার কেবল মৌলিক ভাবনার উপরই দেয়া হয়। চাইলে কোনো গল্প বা উপন্যাস থেকে অনুপ্রাণীত হয়ে ছবি বানানো যায়। কিন্তু এক্ষেত্রে যে গল্প বা উপন্যাসটি মূল তার নাম ও সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো উল্লেখ করতে হয়। কিন্তু মুরাদ পারভেজ সেটি করেননি। তিনি অন্যের গল্প নিজের বলে চালানোর চেষ্টা করেছেন। কিন্তু সচেতন পাঠক ও দর্শকদের তৎতপরতায় তিনি ধরা পড়ে গেছেন। তাই তার ‘বৃহন্নলা’ ছবির সবকয়টি (তিনিট) শাখায় পুরস্কারই বাতিল করা হয়েছে।’মুরাদের শাস্তি প্রসঙ্গে তিনি আরো বলেন, ‘ওই নির্মাতার সবচেয়ে শাস্তিটা তার নিজের বিবেক থেকেই পাবেন। অনুশোচনাই হবে তার প্রায়শ্চিত্ত। তবু সৃষ্টিশীলতাকে এভাবে প্রশ্নবিদ্ধ করায় মুরাদ পারভেজের কাছ থেকে ‘বৃহন্নলা’ নির্মাণের জন্য সরকারি অনুদানের ২৪ লাখ টাকা সুদে-আসলে জরিমানা করা হবে। তবে নির্মাতা আবেদন করলে হয়ত জরিমানার অর্থে কিছুটা ছাড় দেওয়া হতে পারে।’জুরি বোর্ডের আরো কর্মকর্তা জানান, অভিযোগ ভিত্তিতে তদন্তে প্রমাণিত হয়েছে ‘বৃহন্নলা’ চলচ্চিত্রটির মূল কাহিনি পশ্চিমবঙ্গের সাহিত্যিক সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজের ছোট গল্প ‘গাছটি বলেছিল’ থেকে নেয়া। কিন্তু মুরাদ পারভেজ কাহিনিকার হিসেবে নিজের নাম ব্যবহার করেছেন।প্রসঙ্গত, মুরাদের পুরস্কারটি বাতিল হওয়ায় দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা ‘সেরা চলচ্চিত্র হচ্ছে ‘নেক্কাবরের মহাপ্রয়াণ, ‘সেরা কাহিনিকার’ হচ্ছেন ‘মেঘমল্লা`র জন্য আখতারুজ্জামান ইলিয়াস এবং একই ছবির জন্য জাহিদুর রহিম অঞ্জন ‘সেরা সংলাপ রচয়িতা’ পুরস্কার পাচ্ছেন। এদিকে যাছাই বাছাই না করেই একটি চুরি গল্পের ছবিকে সরকারি অনুদান দিয়ে সমালোচনার মুখে পড়েছে চলচ্চিত্রের সরকারি অনুদানের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা। সেইসঙ্গে প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে জুরিবোর্ডও। অনেকেই মুরাদ পারভেজের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করে বলছেন, ‘দেশে প্রথমবারের মতো এমন বিব্রতকর ঘটনা ঘটলো জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের ক্ষেত্রে। চলচ্চিত্রে এই কলঙ্ক লেপে দেয়ার জন্য ‘বৃহন্নলা’ ছবির শাস্তিকে দৃষ্টান্ত করে রাখা উচিত। যাতে কোনোদিন আর কেউ সৃষ্টিশীলতাকে এভাবে অভিযোগগের কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে না পারে।’তবে পুরস্কার বাতিলের বিষয়ে কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি মুরাদ পারভেজের। বেশ কয়েকবার যোগাযোগ করেও তার মোবাইল ফোনটি বন্ধ পাওয়া গেছে।এনই/এলএ
Advertisement