ফিচার

‘আমি টানছি সংসারের ঘানি আর গরু তেলের’

‘বাবা গরুটির চোখে কাপড় বেঁধে রেখেছে কেন? বার বার চক্কর দেয়ায় ওর মাথা ঘুরাচ্ছে না? ওই যে ফোঁটা ফোঁটা তেল পড়ছে, ওটা কোথা থেকে? কিভাবে হচ্ছে?’ গত শুক্রবার সকালে বিজিবি সদর দফতরে বৈশাখী মেলা দেখতে গিয়ে তেলের ঘানির (তেল বানানোর মেশিন) সামনে দাঁড়িয়ে এভাবেই বাবাকে একনাগাড়ে প্রশ্ন করছিলো আট বছরের শিশু আহনাফ। বাবা-মা মেলার অন্য স্টলগুলোতে যাওয়ার জন্য তাড়া দিলেও আহনাফ তার প্রশ্নের উত্তর না জেনে কোথাও যাবে না বলে সেখানেই ঠায় দাঁড়িয়ে ছিল। সন্তানের প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে অদূরে দাঁড়িয়ে থাকা গরুর মালিকের দিকে এগিয়ে যান জুলহাস হোসেন।  পাবনা জেলার বাসিন্দা চাঁদ আলী সাভারে গত ১২ বছর যাবত ঘানিতে সরিষা ভেঙ্গে তেল বানানোর কাজ করেন। বৈশাখী মেলা উপলক্ষে দৈনিক আট হাজার টাকা ভাড়ায় দুইদিনের জন্য পিলখানায় এসেছেন সরিষা ভাঙ্গানোর কাজে । তিনি জানান, দুটি গরু দিয়ে ঘানিতে সরিষা ভেঙ্গে দৈনিক ৪০কেজি তেল বানান। প্রতিটি গরু দিনে ছয় ঘণ্টা করে ঘানি টানে। বিশেষভাবে স্থাপিত কাঠের তৈরি গামলা জাতীয় পাত্রে প্রথমে সরিষা রাখেন। এরপর জোয়ালের একপাশে দুই মন ওজনের বস্তা অন্যপাশ গরুর কাঁধে বেঁধে চক্রাকারে ঘুরানো হয়। ক্রমাগত ঘুর্ণনে গামলা জাতীয় পাত্রে রাখা সরিষা পিষে ফোঁটায় ফোঁটায় তেল বের হয়। এ কাজে কখনো কখনো গরুর সঙ্গে নিজেও ঘুরেন। আবার অনেক সময় চোখ অবস্থায় গরু একাই ঘুরতে থাকে। চোখ বাঁধার কারণ জানতে চাইলে তিনি জানান, প্রতিদিন একই কাজ করার কারণে গরু সব সময় বৃত্তাকারে ঘুরতে থাকে। চোখ বাঁধা না থাকলে অনেক সময় থমকে দাঁড়ায়। চোখ বাঁধা থাকলে কেউ তার সঙ্গে সঙ্গে হাঁটছে মনে করে ঘুরতে থাকে। ঘানি টানার কাজ অত্যন্ত পরিশ্রমের উল্লেখ করে চাঁদ আলী আরো জানান, গরুগুলোকে উন্নতমানের ঘাস, ভূষি, কুঁড়া, গুড় ইত্যাদি ভালমন্দ নিয়মিত খেতে দিতে হয়।বিজিবির এক কর্মকর্তা জাগো নিউজকে বলেন, প্রতি বছর তারা প্রদর্শনী ও বিক্রির জন্য তেলের ঘানি বসিয়ে থাকেন। শহরের অনেকেই কিভাবে ঘানিতে তেল ভাঙ্গানো হয় তা জানেন না। তাছাড়া ঘানি থেকে নির্গত তেল খাঁটি হয় বলে অনেকেই মেলায় এসে কিনে নিয়ে যায়। তাই তারা এ আয়োজন রাখেন। চাঁদ আলী জানান, তার পরিবারে স্ত্রী, ছেলেমেয়েসহ সদস্য সংখ্যা ছয়জন। তাদের মুখে অন্ন তুলে দিতে তিনি নিরন্তর পরিশ্রম করে চলেছেন। চলে আসার সময় চাঁদ আলী গরু দুটিকে দেখিয়ে ছোট্ট শিশু আহনাফকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘আমাগো দুইজনের কাজ একই, আমি সংসারের ঘানি টানি। আর ওরা তেলের ঘানি টানে।’ এরপর হাসতে হাসতে গরুর জন্য খাবার তৈরি করতে চলে যান তিনি।এমএমজেড/এবিএস

Advertisement