ভ্রমণ

সীতাকুণ্ড ভ্রমণে একদিনেই যা যা ঘুরে দেখবেন

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড যেমন আকর্ষণীয় তেমনই রোমাঞ্চকর। এ কারণেই পর্যটকদের পছন্দের তালিকায় শীর্ষস্থানে আছে সীতাকুণ্ড। সেখানে গেলে একই সঙ্গে আপনি পাহাড়, সমুদ্র সৈকত, মন্দির, ঝরনা, ট্রেইল, ট্রেকিং ঝিরিপথ, কৃত্রিম লেক প্রকৃতির সব বিস্ময়কর রূপ উপভোগ করতে পারবেন।

Advertisement

কর্মব্যস্ত জীবনে অনেকেই বেশ কয়েকদিন হাতে নিয়ে ঘুরতে যাওয়ার সময় পান না, তারা ডে লং টুর বা একদিনের ভ্রমণেই সীতাকুণ্ডে ঘুরতে পারবেন। জেনে নিন একদিনেই সীতাকুণ্ডের কোন কো কোন স্থানে ভ্রমণ করতে পারবেন-

গুলিয়াখালী সি বিচ

প্রকৃতির অপার বিস্ময় লুকিয়ে আছে স্থানটিতে। সমুদ্রসৈকতের পাশে অনেকটা সোয়াম্প ফরেস্ট ও ম্যানগ্রোভ বনের মতো স্থানটি। দূর থেকে দেখলে মনে হবে, সৈকত জুড়ে সবুজ গালিচা বিছানো। সমুদ্র পাড়ের এই মনোরোম সৌন্দর্য বোধ হয় অন্য কোথায় দেখতে পাবেন না!

এ কারণেই গুলিয়াখালী সি বিচে হাজারও পর্যটক গিয়ে ভিড় জমায়। সবুজ গালিচা বিছানো ছোট ছোট গাছের টিলার মাঝখান দিয়ে এঁকে-বেঁকে গেছে সরু নালা। এই নালাগুলো জোয়ারের সময় পানিতে ভরে উঠে।

Advertisement

গুলিয়াখালী সমুদ্র সৈকত সীতাকুণ্ড বাজার থেকে ৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। সেখানকার বিস্তৃত জলরাশি আর কেওড়া বন আপনাকে মুগ্ধ করবে। যদিও গুলিয়াখালী সৈকতটি এখনো সরকারিভাবে পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেনি। তবে প্রচুর মানুষের সমাগম ঘটে সেখানে।

কীভাবে যাবেন?

দেশের যে কোনো স্থান থেকে প্রথমে সীতাকুণ্ড শহরে যেতে হবে। ঢাকামুখী রাস্তার বাম পাশ দিয়ে একটু হেঁটে নিচে নামলেই সিএনজি পাবেন। জনপ্রতি ৩০ টাকা ভাড়া নেবে। আর রিজার্ভ যেতে চাইলে ১০০-১৫০ টাকা।

বেড়িবাঁধ এসে সিএনজি আপনাকে নামিয়ে দেবে। সেখান থেকে হেঁটে গিয়ে নৌকা বাঁধা স্থানে যেতে হবে। সাগরের বুকে ঘুরতে চাইলে জেলেদের নৌকায় ভাসতে পারেন। সুলভ মূল্যেই ঘুরতে পারবেন। আবার চাইলে হেঁটেও সমুদ্র পর্যন্ত পৌঁছাতে পারেন। সর্বোচ্চ ১৫ মিনিট লাগবে।

মহামায়া লেক

গুলিয়াখালী সমুদ্র সৈকত দর্শনের পর যত দ্রুত সম্ভব দুপুরের খাবার শেষ করে রওনা দিতে হবে মহামায়া লেকের উদ্দেশ্যে। এটি দেশের অন্যতম নবীন কৃত্রিম লেক হলো মহামায়া। ১৯৯৯ সালে মহামায়া খালের ওপর স্লুইস গেট স্থাপনের মাধ্যমেই এর সৃষ্টি।

Advertisement

চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলার ৮ নম্বর দুর্গাপুর ইউনিয়নের ঠাকুরদিঘীর বাজার থেকে দুই কিলোমিটার পূর্বে পাহাড়ের পাদদেশে গড়ে তোলা হয়েছে মহামায়া লেক। ১১ বর্গ কিলোমিটার জায়গা জুড়ে এটি অবস্থিত। মূলত এটি একটি সেচ প্রকল্প। মহামায়া প্রকল্পে আছে লেক, পাহাড়, ঝরনা ও রাবার ডেম।

চট্টগ্রাম জেলা সদর থেকে ৬০ কিলোমিটার উত্তরে মীরসরাই উপজেলার অবস্থান। একে চট্টগ্রামের প্রবেশদ্বারও বলা যায়। মীরসরাইয়ের ঠাকুরদিঘির পাড়ের ঠিক উল্টো পাশের রাস্তা রাবারডেম থেকে সিএনজিতে করে পৌঁছাতে হবে মহামায়া ইকো পার্কের গেটে। ভাড়া জনপ্রতি ১৫ টাকা। চাইলে হেঁটেও যেতে পারেন। সময় লাগবে ১৫ মিনিট।

আরও পড়ুন

‘নায়াগ্রা ফলস’ এর মতোই সুন্দর ভারতের এই জলপ্রপাত নেপালের নিষিদ্ধ রাজ্য ‘মুস্তাং’ ভ্রমণের আকর্ষণীয় ৫ স্থান 

গেট থেকে ইকো পার্কে প্রবেশের জন্য টিকিট কাটুন। জনপ্রতি টিকিট পড়বে ২০ টাকা। ইকো পার্কে প্রবেশ করতেই চারদিকের সবুজের নিপোবনে নিজেকে আবিষ্কার করে এক স্বর্গীয় অনুভূতি অনুভব করবেন। এর আশেপাশে মাঝারি উচ্চতার পাহাড়ের দেখা মিলবে।

মাঝখান দিয়ে চলে গেছে মহামায়া লেকে যাওয়ার রাস্তাটি। মহামায়া লেক দর্শনের পর সন্ধ্যা হতেই ফেরার পথ ধরুন। আর যদি রাত কাটাতে চান তাহলে সীতাকুণ্ড শহরে গিয়ে পছন্দসই কোনো হোটেলের সন্ধান করুন।

চন্দ্রনাথ পাহাড়

পর্যটকদের জন্য রোমাঞ্চকর এক স্থান চন্দ্রনাথ পাহাড়। এই পাহাড়ের সৌন্দর্য দেখতে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পর্যটকরা ভিড় করেন। অনেকেই বিশাল এই পাহাড়ে উঠতে গিয়ে ক্লান্ত হয়ে নিচে নেমে যান। আবার অনেকেই পাহাড় জয় করার আনন্দ নিয়ে সেখান থেকে ফেরেন।

চট্টগ্রাম শহর থেকে ৩৭ কিলোমিটার উত্তরে, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক থেকে সাড়ে ৩ কিলোমিটার পূর্বে চন্দ্রনাথ পাহাড়ের অবস্থান। এর সর্বোচ্চ চূড়ার উচ্চতা ১১৫২ ফুট বা ৩৬৫ মিটার। চন্দ্রনাথ পাহাড়ের চূড়ায় আছে এক শিব মন্দির।

তবে মন্দির দর্শনের জন্য আপনাকে পাড়ি দিতে হবে ২২০০টিরও বেশি সিঁড়ি। কোনো কোনো স্থানের সিঁড়িগুলো এতোটাই পিচ্ছিল ও সংকীর্ণ যে ওঠা বিপজ্জনক হতে পারে। আর বুঝতেই পারছেন, সামান্য এদিক-সেদিক হলে পা পিছলে পড়বেন পাহাড়ের খাদে।

১৫ মিনিট ওঠার পর একটি ছোট ঝরনা দেখতে পাবেন। যার দুই পাশে দুটি পথ যা উঠে গেছে একদম পাহাড়ের চূড়োয়। বামপাশের পথ দিয়ে ওঠা সহজ। ডানপাশের পথ দিয়ে নামা সহজ। তাই বামপাশের পথ ধরে উপরে উঠতে থাকুন।

প্রায় দেড় ঘণ্টা আরোহণের পর চন্দ্রনাথ মন্দির পৌঁছানোর আগে বিরুপাক্ষ নামের আরেকটি মন্দির পড়বে। চাইলে সেখানে কিছু সময় বিশ্রাম নিয়ে নিতে পারেন। সেখান থেকে সীতাকুণ্ড শহরের ও সমুদ্রের এক অদ্ভুত দৃশ্য আপনি দেখতে পাবেন।

একদিনেই যদি আপনি আরও ২টি স্থান ভ্রমণ করতে চান তাহলে সীতাকুণ্ড পৌঁছে নাস্তা সেরে আগে চন্দ্রনাথ পাহাড় দর্শনে চলে যান। সকাল ৮টা নাগাদ সেখানে পৌঁছালে ১১টার মধ্যেই পাহাড় জয় করে ফিরতে পারবেন।

কীভাবে যাবেন?

ঢাকা থেকে চট্টগ্রামের বাসে গেলে সীতাকুণ্ড নামা যায়। চট্টগ্রাম শহরের অলঙ্কার মোড় থেকেও বাসে আসা যায়। জনপ্রতি ভাড়া ৩০-৪০ টাকা। সিএনজি চালিত অটো রিকশা নিয়েও যেতে পারেন চট্টগ্রাম শহর থেকে। ভাড়া পড়বে ৩০০-৪০০ টাকা।

জেএমএস/জিকেএস