আতিকুর রহমান
Advertisement
ঝালকাঠির বিভিন্ন হাট-বাজারে ৮০টি (এক বিরা) পান ৪০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ৪ মাস আগেও যা ছিল ১৮০ থেকে ২২০ টাকার মধ্যে। স্থানীয়ভাবে উৎপাদন না হওয়ায় ঘাটতি মেটাচ্ছে রাজশাহীসহ পাহাড়ি এলাকার পান।
পান বাজার ঘুরে দেখা যায়, ব্যবসায়ীরা রাজশাহীসহ পাহাড়ি এলাকা থেকে আনা পান বিক্রি করছেন। একটু পুরু ধরনের এসব পানের রং স্বাভাবিক সবুজের চেয়ে একটু লালচে বর্ণের।
বিক্রেতা হামিদুর রহমান ও মো. ওসমান জানান, ৩ মাসে আগেও চাষিরা পানের দাম পাননি। এখন বাজারে পানের দাম বাড়ছে। উৎপাদন কম হওয়ায় দাম বাড়ছে বলে মনে করছেন তারা।
Advertisement
সদর উপজেলার ছত্রকান্দা গ্রামের চাষি সাব্বির আহমদ জানান, ৬০ শতক জমিতে পান চাষে সব মিলিয়ে তার প্রায় ২ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। বরজে পানের উৎপাদন প্রথমদিকে ভালো হলেও শীত মৌসুম আসার সঙ্গে সঙ্গেই উৎপাদন অনেকটাই কমে যায়। আবহাওয়া বদলাতে শুরু করলে বৃষ্টি হলে আবার নতুন পানের ভালো ফলন শুরু হবে। তখনও এমন দাম থাকলে ভালো মুনাফা হবে বলে তার আশা।
চাষিরা জানান, প্রতি একর জমিতে পাঁচ-ছয়টি পানের বরজ করা যায়। এক একর জমিতে পান চাষ করতে খরচ হয় ৩ থেকে সাড়ে ৫ লাখ টাকা। বছরে প্রতি একর জমিতে উৎপাদিত পান বিক্রি হয় গড়ে প্রায় ২০ লাখ টাকায়। এতে খরচ বাদ দিয়ে চাষিদের ১২-১৬ লাখ টাকার মতো মুনাফা থাকে। কিন্তু গত ২ মাসেরও বেশি সময় ধরে উৎপাদন না থাকায় লোকসান গুনতে হচ্ছে। বর্তমান বাজারের দাম অব্যাহত থাকলে প্রচুর লাভ করতে পারবেন।
আরও পড়ুন
শরীয়তপুরে বাড়ছে রবি ফসল ‘কালোজিরা’র চাষ নেত্রকোনায় ২৬ কোটি টাকার চাল কুমড়া বিক্রি হবেএদিকে ঝালকাঠির পান চাষিরা পড়েছেন আরেক বিপর্যয়ের মুখে। অজ্ঞাত রোগ এবং শীত দীর্ঘায়িত হওয়ায় পানের পাতা নতুন করে গজাচ্ছে না। পুরো দক্ষিণাঞ্চলের পান চাষিদের এমন অবস্থা বলে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে। ফলে চলতি মৌসুমে জেলার চাষিরা হেক্টর প্রতি ৫-৬ লাখ টাকারও বেশি লোকসান দিয়েছেন। কৃষি বিভাগের পরামর্শ মতো কীটনাশক দেওয়ার পরও পাতা ঝরার পরে বৃষ্টি না থাকায় নতুন করে পান পাতা আসছে না। চাষিদের দাবি, অজ্ঞাত কারণে পান পাতা ঝরে পড়া রোগে ঘূর্ণিঝড় সিডরের চেয়েও বেশি ক্ষতি হয়েছে।
Advertisement
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ঝালকাঠিতে বর্তমানে প্রায় ১০ হাজার হেক্টর জমিতে পান চাষ হচ্ছে। প্রতিনিয়তই তা সম্প্রসারিত হচ্ছে। ৪-৫ মাস আগেও ঝালকাঠির পান দক্ষিণাঞ্চলের জেলাগুলোর চাহিদা পূরণ করে রাজধানী এবং উত্তরাঞ্চলে সরবরাহ করা হতো। কিন্তু পরিস্থিতি বদলে যাওয়ায় এখন উল্টো রাজশাহীসহ অন্য পাহাড়ি এলাকায় উৎপাদিত পান চড়া দামে কিনে আনতে হচ্ছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. মনিরুল ইসলাম জানান, শীত মৌসুমে পান পাতা ঝরে যায়। আবহাওয়া পরিবর্তন হলে আবার পানের পাতা নতুন করে গজায়। বসন্তকাল শুরু হয়ে একমাস অতিবাহিত হলেও বৃষ্টি না হওয়ায় নতুন পাতা গজাচ্ছে না। বৃষ্টি হলেই নতুন পাতা আসবে। তাহলেই পানের সংকট থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে। বাজারে পানের সরবরাহ বাড়লেই দাম কমবে।
এসইউ/জিকেএস