খেলাধুলা

বাঁহাতি স্পিনার থেকে আইসিসির এলিট প্যানেলে, সৈকতের অজানা গল্প

ভাগ্য ভালো থাকলে হয়তো জাতীয় দলের হয়ে বিশ্বকাপ খেলতে পারতেন, গায়ে পরতে পারেন টেস্টের সাদা জার্সিটিও। একটা সময় যে এই শরফুদ্দৌলা ইবনে শহীদ সৈকতই ছিলেন বাংলাদেশের এক নম্বর বাঁহাতি স্পিনার।

Advertisement

জাতীয় দলে স্বপ্ন পূরণ হয়নি। তবে নিজের ভেতরে পুষে রাখা দৃঢ় সংকল্পের বলে সৈকত ঠিকই বাংলাদেশের পতাকাকে উঁচু করে ধরেছেন বিশ্ব দরবারে। ক্রিকেটার নয়, আম্পায়ার হিসেবে।

আজ (২৮ মার্চ) সৈকতের স্বপ্নপূরণের দিন। প্রথম বাংলাদেশি আম্পায়ার হিসেবে তিনি জায়গা করে নিয়েছেন আইসিসির এলিট প্যানেলে। আইসিসি আজ আনুষ্ঠানিকভাবে এলিট প্যানেল আম্পায়ার হিসেবে শরফুদ্দৌলা ইবনে শহীদ সৈকতের নাম ঘোষণা করেছে।

টেস্ট মর্যাদা পাওয়ার আগে একটা সময় ছিল, যখন তাকেই ধরা হতো টিম বালাদেশের এক নম্বর বাঁহাতি স্পিনার। এনামুল হক মনি আর মোহাম্মদ রফিকের মত স্পিনারের আগমন না হলে হয়তো শরফুদ্দৌলা ইবনে শহীদ সৈকতই বাংলাদেশের ক্রিকেটের প্রথমদিকের স্পিনার হিসেবে সমাদৃত হতেন।

Advertisement

১৯৯৪ সালে কেনিয়ায় ফারুক আহমেদের নেতৃত্বে আইসিসি ট্রফিতে বাংলাদেশ দলের অন্যতম বাঁহাতি স্পিনার ছিলেন সৈকত। ওই আইসিসি ট্রফিতে বাংলাদেশ প্রথম তিন দলের মধ্যে জায়গা করে নিতে পারলে ১৯৯৬ সালেই বিশ্বকাপ খেলতো। হয়তো টেস্ট মর্যাদাও পেয়ে যেতো ২০০০ সালের আগেই।

সেটা হলে তখন অনিবার্যভাবেই দেশসেরা বাঁহাতি স্পিনার হিসেবে টেস্ট খেলা হয়ে যেতো সৈকতের। কিন্তু প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ১০ ম্যাচে ৩১ উইকেট নেওয়া সৈকতের বাংলাদেশ জাতীয় দলে খেলার সৌভাগ্য হয়নি।

তাতে কী? ক্রিকেটার হিসেবে বিশ্ব ক্রিকেটে পরিচিতি না পেলেও আম্পায়ার সৈকত ৩০ বছর পর আজ দেশের হয়ে ইতিহাস গড়লেন। আইসিসির আম্পায়ারদের অভিজাত ঘরানার সদস্য হলেন।

আইসিসি এলিট আম্পায়ার্স প্যানেলের প্যানেলের সদস্য হতে পেরে দারুণ খুশি সৈকত। নিজের প্রতিক্রিয়ায় বলেন, ‘আইসিসি এলিট প্যানেলে নাম আসাটা এক বিরাট সম্মানের। আমাদের দেশের প্রথম ব্যক্তি বলে এটি আরও বিশেষ ব্যাপার।’

Advertisement

তার ওপর আস্থা রাখার জন্য আইসিসিকে ধন্যবাদ জানিয়ে সৈকত বলেন, ‘আমার ওপর আস্থা রাখা হয়েছে, তার প্রতিদান দিতে মুখিয়ে আছি। বেশ কয়েক বছর ধরে খেলা পরিচালনার কারণে আমার কিছু অভিজ্ঞতা হয়েছে এবং আরও চ্যালেঞ্জিং দায়িত্ব নিতে প্রস্তুত আমি।’

আইসিসির এলিট প্যানেলের সদস্য হওয়ার আগেই এবার ভারতের মাটিতে হওয়া ওয়ানডে বিশ্বকাপে দেশের হয়ে ইতিহাস গড়েন সৈকত। বাংলাদেশের প্রথম আম্পায়ার হিসেবে ওয়ানডে বিশ্বকাপের ম্যাচ পরিচালনা করার সুযোগ পান। দেশের বাইরে টেস্ট ম্যাচেও বাংলাদেশের আম্পায়ারদের মধ্যে সবার আগে খেলা পরিচালনার কৃতিত্ব দেখিয়েছেন তিনি।

আন্তর্জাতিক আম্পায়ার হিসেবে সৈকতের অভিষেক হয় ২০১০ সালে দেশের মাটিতে। শেরে বাংলা স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কার ওয়ানডে দিয়ে যাত্রা শুরু হয় আম্পায়ার সৈকতের।

আইসিসি আম্পায়ারদের ‘ইমার্জিং’ প্যানেলের ওপরের দিকেই ছিল তার নাম। অল্প কিছুদিন আগে আইসিসির আম্পায়ার মারাইস ইরাসমাস অবসরে যাওয়ায় এলিট প্যানেলে শরফুদ্দৌলা সৈকতের এলিট প্যানেলের সদস্য হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। শেষ পর্যন্ত সুখবর এলো।

নিজের এই অর্জনে শরফুদ্দৌলা ধন্যবাদ জানালেন সংশ্লিষ্ট সবাইকে, ‘আইসিসি ও বিসিবিকে ধন্যবাদ, আমাকে সমর্থন জোগানোর জন্য। সহায়তা ও নির্দেশনার জন্য আমার অন্য সহকর্মীদেরও ধন্যবাদ। আমার পরিবার ও বন্ধুদেরও ধন্যবাদ দিতে চাই আমাকে সমর্থন দিয়ে যাওয়ার জন্য।’

এদিকে আইসিসির প্রধান নির্বাহী জিওফ এলার্ডিস বাংলাদেশের আম্পায়ারকে অভিনন্দন জানিয়ে বলেছেন, ‘আমি শরফুদ্দৌল্লাকে অভিনন্দন জানাতে চাই আম্পায়ারদের আইসিসি এলিট প্যানেলে যুক্ত হওয়ার জন্য। এই প্যানেলে নির্বাচিত হওয়া বাংলাদেশের প্রথম আম্পায়ার হওয়ার কৃতিত্ব তার। শরফদ্দৌলা বেশ কিছুদিন ধরে আইসিসি টুর্নামেন্ট ও বিভিন্ন সিরিজে ধারাবাহিকভাবে ভালো খেলা পরিচালনা করেছেন। সেই পারফরম্যান্সের জন্য এটি তার প্রাপ্য পুরস্কার।’

এদিকে সৈকতের পাশাপাশি আইসিসির প্যানেল আম্পায়ার হিসেবে বাংলাদেশের আরো তিন আম্পায়ার আছেন। তারা হলেন-গাজী সোহেল, তানভীর আহমেদ ও মাসুদুর রহমান মুকুল। ক্রিকেট অনুরাগীদের আশা, তারাও অচিরেই সৈকতের পথ ধরে এলিট প্যানেলে অন্তর্ভুক্ত হবেন।

এআরবি/এমএমআর/জেআইএম