মিয়ানমারের রাখাইনে চলমান সংঘাতে এবার সেন্টমার্টিন-সাবরাং ও শাহপরীর দ্বীপ সীমান্তে ভেসে আসছে মর্টারশেল ও গোলার বিকট শব্দ। গত সোম ও মঙ্গলবার (২৫ ও ২৬ মার্চ) টেকনাফের পৌরসভা, হ্নীলা ও হোয়াইক্যং সীমান্তে রাতে ও দিনে বিস্ফোরণের বিকট শব্দে কেঁপে ওঠে এপার।
Advertisement
সর্বশেষ বুধবার (২৭ মার্চ) ভোর এবং বিকেলেও দ্বীপের মানুষ বিস্ফোরণের বিকট শব্দে আতঙ্কিত হন। একইভাবে সীমান্তের হোয়াইক্যংয়ের ওপারে ধোঁয়ার কুণ্ডলী দেখা যায় বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। স্থানীয় সূত্র জানায়, স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মির দখলে থাকা রাখাইনের অধিকাংশ অঞ্চলসহ বিজিপির ক্যাম্প ও চৌকি পুনরুদ্ধার করতে দেশটির সেনাবাহিনী প্রাণপণ চেষ্টা চালাচ্ছে। রাখাইনের আকিয়াব, মংডু শহরের বলি বাজারের আশপাশে দেশটির সেনা ক্যাম্পগুলোতে আরাকান আর্মি দখল নিতে হামলা চালাচ্ছে। পাশাপাশি দেশটির সেনাবাহিনীও সেগুলো নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে পাল্টা আক্রমণ করছে। এতে হেলিকপ্টার থেকে নিক্ষেপ করা হচ্ছে গোলা ও ফায়ার করা হচ্ছে মর্টারশেল ও ভারী গোলা। এমন ঘটনায় ওপার থেকে সীমান্তের এপারে থেমে থেমে রাতে ও দিনে ভেসে আসছে বিস্ফোরণের বিকট শব্দ।
শাহপরীর দ্বীপের বাসিন্দা রফিক উদ্দিন বলেন, শাহপরীর দ্বীপ থেকে মিয়ানমারের সীমানার মধ্যে প্রায় তিন কিলোমিটারের দূরত্ব নাফ নদীর। এরপরও স্থালভাগ থেকে আরও দুই-তিন কিলোমিটার ভেতরে মংডু শহরের বলিবাজারে আরাকান আর্মি ও মিয়ানমার সেনাবাহিনীর মধ্যে গোলাগুলি চলছে। সেখানে চলা সংঘাতের বিকট শব্দ শাহপরীর দ্বীপের এপারে ভেসে আসে। এতে দ্বীপের মানুষের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়।
সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান আক্তার কামাল বলেন, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সংঘাত চললেও দ্বীপের পরিস্থিতি স্বাভাবিক ছিল। কিন্তু মাঝে মাঝে বিকট শব্দ আসছিল সেন্টমার্টিন দ্বীপেও। তবে চারপাশে সাগর হওয়ায় দ্বীপে তেমন আতঙ্ক নেই।
Advertisement
আরও পড়ুন
বাংলাদেশে আশ্রয়ের অপেক্ষায় তিন শতাধিক বিজিপি সদস্য ফের ভেসে আসছে গোলার বিকট শব্দ, আতঙ্কে সীমান্তবাসীহোয়াইক্যং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ নুর আহমেদ আনোয়ারী বলেন, মিয়ানমারের রাখাইনে সংঘাতে এপারের সীমান্তের বাসিন্দারা আতঙ্কে দিন কাটান। রোহিঙ্গা আসার পর থেকে নাফনদী বন্ধ থাকলেও সীমান্তের বেড়িবাঁধের কাছে হোয়াইক্যং ইউনিয়নের বহু মানুষের চিংড়ি ও কাঁকড়া ঘেরসহ চাষাবাদের জমি ও ক্ষেত রয়েছে। ওপারে সংঘাত চলায় ঘের ও ক্ষেতে যেতে ভয় পান চাষিরা। চলতি সপ্তাহে প্রায় প্রতিদিন রাত থেকে ভোর পর্যন্ত থেমে থেমে মর্টারশেলের বিস্ফোরণসহ গুলি ফায়ারের শব্দ এপারে স্পষ্ট শোনা যাচ্ছে। টেকনাফ (২ বিজিবি) ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, রাখাইন পরিস্থিতি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। অনুপ্রবেশ ঠেকাতে নাফ নদীসহ সীমান্তে বিজিবির টহল জোরদার রয়েছে।
টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আদনান চৌধুরী বলেন, রাখাইন রাজ্যে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটলেও টেকনাফ সীমান্তের গ্রামগুলোতে বিশেষ নজর রাখা হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্ত লোকজনকে সহায়তা প্রদানের বিষয়ে উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে বলেও উল্লেখ করেন ইউএনও।
এফএ/এএসএম
Advertisement