সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির (বার এসোশিয়েশনের) নবনির্বচিত সভাপতি ও সদস্যসহ চারজনকে বারের দায়িত্ব গ্রহণ না করার জন্যে চিঠি দিয়েছেন জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম কেন্দ্রীয় কমিটি। কিন্তু বিএনপির বিজয়ীদের দায়িত্ব গ্রহণে বিরত থাকার চিঠি ও দায়িত্ব গ্রহণের বিষয়ে ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন বলছেন ভিন্ন কথা।
Advertisement
তিনি জানান, আমি নির্বাচিত সভাপতি, তাই সম্ভবত আবারও নির্বাচন না হওয়া পর্যন্ত দায়িত্ব গ্রহণ না করার জন্যে বলেছে। পূর্ণ নির্বাচনের দাবিতেই সম্ভবত আমাদের ফোরাম থেকে এরকম সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে।
এ সময় নির্বাচনে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম কেন্দ্রীয় কমিটির একজন শক্তিশালী নেতার রহস্যময় আচরণের কথা বলেছেন ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন। রহস্যময়ী আচরণ নিয়ে আওয়ামীলীগের ভোট গণনাসহ বিভিন্ন ঘটনা ঘটেছে।
তবে সংগঠনের দেওয়া চিঠিতে পুনঃনির্বাচনের দাবির সঙ্গে একমত পোষণ করলেও দায়িত্ব গ্রহণ থেকে বিরত থাকবেন কি না সে বিষয়ে পরিস্কার করে কিছু বলেননি নব নির্বাচিত সভাপতি ব্যারিস্টার এএম মাহবুব উদ্দিন খোকন।
Advertisement
এর আগে গত ৬ ও ৭ মার্চ দুদিনব্যাপী সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনের ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। এই নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আইনজীবীদের মধ্যে মারামারি, হামলা মামলার ঘটনাও ঘটে। পরবর্তীতে ৯ মার্চ ভোট গণণা করে ফল ঘোষণা করা হয়। যেখানে সভাপতিসহ চারটি পদে বিএনপি ও ১০ পদে আওয়ামী লীগ জয় পায়। আগামী ৩১ মার্চের পরে নতুন কমিটির কাছে দায়িত্ব হস্তান্তরের কথা রয়েছে।
এ অবস্থায় বুধবার (২৭ মার্চ) জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি সিনিয়র আইনজীবী ও সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল এজে মোহাম্মদ আলী ও মহাসচিব ব্যারিস্টার কায়সার কামাল স্বাক্ষরিত একটি চিঠি ইস্যু করেন।
চিঠিতে নতুন নির্বাচিত সভাপতিসহ চারটি পদে বিজয়ীদের দায়িত্ব গ্রহণ থেকে বিরত থাকতে অনুরোধ করা হয়েছে।
চিঠিতে বলা হয়েছে, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ভোট ডাকাতি জায়েজ করতে আপনাদের নামকাওয়াস্তে বিজয়ী দেখানো হয়েছে। বিজ্ঞ আইনজীবী সমাজ ও দেশের আপামর জনগণ নির্বাচনের ফলাফল প্রত্যাখান করেছে।
Advertisement
সামগ্রিক অবস্থা বিবেচনায় নিয়ে গত ২৪ মার্চ জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের এক যৌথসভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় ঘোষিত ফলাফল প্রত্যাখান করে পুননির্বাচনের দাবিতে ন্যায়সঙ্গত যৌক্তিক আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
দলীয় এ চিঠির বিষয়ে জানতে চাইলে সভাপতি পদে নির্বাচিত মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, আমি নির্বাচিত, দায়িত্ব নেওয়া বা না নেওয়ার কি আছে। কে কি বললো, সেটার দেখার বিষয় নয়। এটা তো শপথ গ্রহণের কিছু না।
তিনি বলেন, আমার জীবনে পরাজয়ের কোনো ইতিহাস নাই। তবে পুনঃনির্বাচনের দাবির সঙ্গে আমি একমত।
দলীয় সিদ্ধান্তের আলোকে আপনি দায়িত্ব গ্রহণ থেকে বিরত থাকবেন কি না জানতে চাইলে সরাসরি কোনো জবাব দেননি।
ভোট গণনার সময় দলীয় লোকদের উপস্থিত থাকা থেকে বিরত থাকার সিদ্ধান্তের সমালোচনা করে বিএনপির এই যুগ্ম মহাসচিব বলেন, সে সময় (ভোট গণনার) তারা ভুল সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, তা না হলে সংখ্যাগরিষ্ট হিসেবে আমরা জয়ী হতে পারতাম। এ সময় তিনি জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের একজন নেতার (নাম উল্লেখ করেননি) ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। তিনি বলেন, তার ভূমিকা রহস্যজনক।
বারের ভোট গণনায় জালিয়াতি হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমি কিন্তু ওই দিনই ভোট পুনঃগণনার দাবি করেছি। আমার সেই আবেদন তখন কমিশন গ্রহণ করেনি। পুরো প্যানেলে আমরা কমপক্ষে ১৩ জন এগিয়ে ছিলাম। পুনঃনির্বাচনের দাবিতে আমরা এখনোও অটল। আমার সভাপতি পদেও আমি পুনঃনির্বাচন চাই। পুনঃনির্বাচন হলে আমি খুশি হবো, আইনজীবীরা খুশি হবেন। আর পুনঃনির্বাচন যদি না হয়, আমি সভাপতি পদসহ চারটি পদে বিজয় হয়েছি, এখনতো আর পদত্যাগের সুযোগ নাই, শুধু এই চারপদে পুনঃনির্বাচনেরও সুযোগ নাই।
বিএনপি থেকে সদস্য পদে বিজয়ী ফাতিমা আক্তার বলেন, চিঠি মাত্র পেয়েছি। এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি। যদি সিদ্ধান্ত হয় তাহলে আপনারা জানতে পারবেন।
গত ৬ ও ৭ মার্চ দুই দিনব্যাপী সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়।
নির্বাচনে সভাপতি পদে বিএনপি-জামায়াত সমর্থিত ব্যারিস্টার এএম মাহবুব উদ্দিন খোকন নির্বাচিত হন। অন্যদিকে সম্পাদক পদে আওয়ামী লীগ তথা সরকার-সমর্থিত বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ (সাদা প্যানেল) থেকে অ্যাডভোকেট শাহ মঞ্জুরুল হক নির্বাচিত হয়েছেন।
এফএইচ/এমএসএম