মতামত

বিশ্ববিদ্যালয়ে নিরাপত্তাহীন পরিবেশ নারীর উচ্চশিক্ষায় বড় অন্তরায়

সুন্দর জীবন গড়ার লক্ষ্য নিয়ে একটি মেয়ে জীবনের অনেক চড়াই-উৎরাই পার হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে আসেন, সেখানে এসে যৌন হেনস্থার শিকার হতে নয়। আমাদের মতো দেশে খুব অল্প সংখ্যক মেয়েশিশু সোনার চামচ মুখে নিয়ে জন্মগ্রহণ করে। এরপর যতজন প্রাথমিক শ্রেণি পর্যন্ত পড়ার সুযোগ পায়, এদের অর্ধেক আবার মাধ্যমিকে এসে ঝরে পড়ে। বাল্যবিয়ে, অভাব-অনটন, অসময়ে গর্ভধারণ, নিরাপত্তার অভাব, সমাজের চাপ, শ্বশুরবাড়ির অনিচ্ছা প্রভৃতি কারণে অধিকাংশ মেয়ে তাদের স্বপ্ন নিয়ে আর এগুতে পারেন না। যারা খানিকটা এগিয়ে এসে বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে পা রাখেন, তাদেরকে ভাগ্যবান মনে করা হয়। অথচ এত যুদ্ধ করে, অনেকটা সামনে এগিয়ে আসার পরেও কি মেয়েরা পারছেন শান্তিতে পড়াশোনা শেষ করতে? শিশুকাল থেকে যে যৌন হয়রানির শুরু, বিশ্ববিদ্যালয়ে এসেও এর হাত থেকে মুক্তি নেই কেন? সেখানেও ছাত্রীদের নানাধরণের হয়রানির মুখে পড়তে হচ্ছে। শুধু অবন্তিকা আর মিম নয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক ছাত্রী এবং নারী শিক্ষকও যৌন নিপীড়ণের শিকার হচ্ছেন এবং অভিযোগ করতে ভয় পাচ্ছেন।

Advertisement

বিশ্ববিদ্যালয় এমন একটি পীঠস্থান সেখানে যারা পড়তে আসেন, তারা প্রায় সবাই দেশ সেরা। অভিভাবকরা অনেক কষ্ট করে সন্তানের পেছনে বিনিয়োগ করেন, যেন সন্তান নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারে। আর যেসব ছাত্রছাত্রী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারেন, তারাও অনেকটা পথ পাড়ি দিয়ে সর্বোচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়ার সুযোগ পান। এই পথ পাড়ি দেয়ার যে কষ্ট তা ছাত্রদের চাইতে ছাত্রীদের দ্বিগুণ।

এখনো এদেশের অধিকাংশ পরিবার মনে করেন মেয়েদের এত পড়াশোনা করে কী হবে? মেয়েদের পড়ার পেছনে বিনিয়োগ মানে অপচয়। কন্যাসন্তানতো আর জজ-ব্যারিস্টার হয়ে বাবা-মায়ের দায়িত্ব নেবেনা। এরকম অনেক ভুল বোঝাবুঝি, কুসংস্কার, গৃহযুদ্ধ, অভিযোগকে পাশ কাটিয়ে একটি মেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে পা রাখেন, জজ-ব্যারিস্টার হওয়ার জন্যই। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও এটা সত্য যে একটা সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো উন্মুক্ত পরিবেশেও মেয়েটিকে যৌন নিপীড়নের শিকার হয়ে জীবন থেকে পালাতে হয়। যেমনটা পালিয়েছে ফাইরুজ সাদাফ অবন্তিকা। মেয়েটি ছিল জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ছাত্রী। বেঁচে থাকলে একদিন হয়তো সে আইনজীবী বা জজ-ব্যারিস্টার হতেন। বাবা হারা সংসারের মূল চালিকাশক্তি হতেন, হতেন ভাইয়ের অভিভাবক, মায়ের সাথী। কিন্তু এর কোনোটাই হলো না। যৌন হয়রানির বিচার না পেয়ে মেয়েটি আত্মহত্যা করলেন।

অবন্তিকার এই অকালে চলে যাওয়া রাজনৈতিক প্রশ্রয়, উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান, প্রশাসন, ছাত্র ও শিক্ষক রাজনীতি, ছাত্রছাত্রীদের মানসিকতা নিয়ে আমাদের সামনে অনেকগুলো প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিচারহীনতার সংস্কৃতি, যৌন হয়রানির পরিবেশ, রাজনৈতিক প্রভাব, শিক্ষকদের অসহযোগিতা, লোকলজ্জা, ট্যাবু, স্টিগমা ও সামাজিক চাপ ছাত্রছাত্রীদের মনের উপর কতটা প্রভাব ফেলে, সেটা নিয়ে তাদের শিক্ষক ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কতটা ভাবছেন? তারা কি জানেন যে যৌন হয়রানির অভিযোগ করলে পরিবার পড়াশোনা বন্ধ করে দিতে পারে, এই ভয়ে কতজন ছাত্রী যৌন হয়রানির অভিযোগ না করে পড়ালেখা শেষ করার চেষ্টায় থাকেন। ভিক্টিমদের অনেকে জানেনই না যে বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌন হয়রানি ও নিপীড়ন নিরোধ সেলের দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি কারা, কোথায় এবং কখন তাদের পাওয়া যাবে? অথচ ভিক্টিমকে এসব সম্বন্ধে জানানো বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষেরই দায়িত্ব নয় কি?

Advertisement

অবন্তিকা আত্মহত্যা করার পরেই উঠে এসেছে একই বিশ্ববিদ্যালয়ের মিম এর প্রতি ভয়াবহ অন্যায়-অবিচারের কথা। অবন্তিকার মৃত্যু যে তারই সহপাঠি কাজী ফারহানা মিমকে বাঁচিয়ে দিয়ে গেছে, সে কথা এখন অনেকে বলছেন। অবন্তিকা যদি আত্মহত্যা না করতেন তাহলে হয়তো মিমকেও মৃত্যুর পথ খুঁজে নিতে হতো। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন বিভাগে মিমের প্রতি আরো কী নির্দয় আচরণ করা হতো, তা বেশ কল্পনা করতে পারছি। হয়তো ভাগ্য তাঁর প্রতি সুপ্রসন্ন হয়েছে অবন্তিকার প্রাণের বিনিময়ে। ২০২১ সালের ঘটনায় ২০২৪ সালে এসে তাঁর বিচার পাওয়ার সুযোগ তৈরি হয়েছে।

এ তো মাত্র দুটি ঘটনা, যা আলোচনায় এসেছে বলে আমরা জানতে পারছি। এরকম অসংখ্য ঘটনা ঘটছে বিভিন্ন কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে। ২০২৩ এর ডিসেম্বরে প্রকাশিত এক গবেষণা রিপোর্ট বলছে, যৌন নিপীড়নের শিকার হলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের ৯০ শতাংশ ছাত্রীই অভিযোগ করেন না। গবেষণা প্রতিবেদনের এই পরিসংখ্যান অবিশ্বাস্য মনেহলেও, এটিই সত্য এবং আমাদের জন্য ভীতিকর বার্তা। স্বপ্ন চোখে নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে আসা কত মেয়ের জীবন এভাবেই এলোমেলো হয়ে যায়।

প্রায় প্রতিটি সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে যৌন নিপীড়ন রোধে ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌন হয়রানি ও নিপীড়ন নিরোধ কেন্দ্র’ রয়েছে। কিন্তু নির্যাতনের শিকার ছাত্রী বা নারী শিক্ষকেরা সেখানে অভিযোগ দিতে আগ্রহী নন। ভয়াবহ অন্যায়ের শিকার হওয়ার পরেও কেন তারা অভিযোগ করতে চান না? কারণ অন্যায়ের শিকার হওয়ার পরেও ছাত্রীরা দেখেছে অভিযুক্ত ব্যক্তি যদি প্রভাবশালী বা ক্ষমতাসীন দলের কেউ হয়, তাহলে বিচার পাওয়া কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। উপরন্তু পরিবার উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ে, লোকে হাসাহাসি করে, বন্ধুরা এড়িয়ে চলে। এই ভয় থেকে মেয়েরা অভিযোগ দায়ের করা থেকে বিরত থাকতে চান। অধিকাংশ ভিক্টিম মেয়েই অপেক্ষায় থাকেন কবে পড়াশোনা শেষ হবে এবং তারা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ত্যাগ করে বেরিয়ে যেতে পারবেন। কারণ বড়ধরণের মানসিক ট্রমা নিয়ে তাদের পড়াশোনা চালিয়ে যেতে হয়।

পাঁচটি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অভিযোগ যাচাই করতে গিয়ে অভিযোগ চাপা দেওয়ার নানা নজির পাওয়া গেছে। শিক্ষক নম্বর বাড়িয়ে দেওয়ার কথা বলে অনৈতিক সম্পর্ক গড়তে চেয়েছিলেন। তদন্ত হয়েছিল, প্রতিবেদন জমা দেয়া হয়েছিল, সিন্ডিকেটে তুলতে সময়ক্ষেপণ হয়েছিল। এবং আলটিমেটলি সেই অভিযুক্ত শিক্ষক বিদেশে চলে যায়। একজন ছাত্রী শিক্ষাবর্ষের শুরু থেকেই নিপীড়নের শিকার হলেও, পরিবার জানতে পারলে তাঁকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাড়িতে ফিরিয়ে নিতে পারে, সেই আশঙ্কায় এই কথা বলেননি। শিক্ষাজীবনের শেষ সময়ে যখন ছাত্রীটি অভিযোগ করেন, ছাত্রটির পড়াশোনা ততোদিনে শেষ। ফলে বিচারিক কমিটির সদস্যরা ছাত্রকে শুধু মৌখিকভাবে সতর্ক করেন। অভিযোগ দায়ের করতে দেরি করা, অভিযুক্তের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়া, দীর্ঘ নীতিমালা, অভিযোগ আমলে না নেওয়া, দুর্বল কমিটি, প্রভাব খাটিয়ে অভিযোগ ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা, ভুক্তভোগীদের প্রতি শিক্ষকদের অসহযোগিতামূলক মনোভাব ও সিন্ডিকেটে প্রতিবেদন জমা দেয়ার ক্ষেত্রে নয়-ছয় ছাত্রীদের অসহায় করে তোলে।

Advertisement

২০২২-২৩ সালের ‘বাংলাদেশের উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পুরুষতান্ত্রিক ও লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা প্রতিরোধের কৌশল (স্ট্র্যাটেজিস ফর প্রিভেন্টিং মাসকুলিনিটি অ্যান্ড জেন্ডার বেজ্‌ড ভায়োলেন্স ইন হায়ার এডুকেশনাল ইনস্টিটিউশন ইন বাংলাদেশ: আ স্টাডি অব রাজশাহী ইউনিভার্সিটি)’ শীর্ষক গবেষণায় বলা হয়, ৫৬ শতাংশ নিপীড়কই ছাত্রীদের সহপাঠী। ২৪ শতাংশ তাঁদের চেয়ে ছোট বা বড়। ১১ শতাংশ বহিরাগত ও ৯ শতাংশ শিক্ষক। ১০ শতাংশ ছাত্রী জানান, নির্যাতনের ৩০ শতাংশ বাজে মন্তব্য ও ৬০ শতাংশ সাইবার হয়রানির শিকার হয়েছেন। নিপীড়নের ঘটনায় মাত্র ১০ শতাংশ ছাত্রী অভিযোগ করেছিলেন। এর মধ্যে ৫ শতাংশ বিভাগের শিক্ষকদের কাছে এবং বাকি ৫ শতাংশ সেলে। ৯২ শতাংশ জানান, ন্যায়বিচার না পাওয়া ও চরিত্র হননের ভয়ে তাঁরা সেলে অভিযোগ করেননি। (সূত্র: প্রথম আলো)

বিচার না পাওয়ার দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতি আছে। এতে অনেক ছাত্রী আত্মহত্যা করতে চান, কেউ করে ফেলেন, কেউ বিষন্নতায় ভোগেন, কেউ ভীতু হয়ে যান, কেউ পালিয়ে বেড়ান, কারো রেজল্ট খারাপ হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি বিভাগে ভুক্তভোগী ছাত্রীদের সহায়তা দিতে পরামর্শক কেন্দ্র খোলা উচিত। বিচার যেন ধামাচাপা না পড়ে, সেজন্য ঘটনার প্রতিবেদন স্বল্পতম সময়ে সিন্ডিকেটের সভায় তুলতে হবে। প্রসঙ্গত উল্লেখ যে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের এক সভায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের তৎকালীন বিভাগীয় প্রধান (এখন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য) অধ্যাপক সাদেকা হালিম নিজেই বলেছেন, ‘অভিযোগকারী নারীর দিকেই অনেক সময় আঙুল তোলা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের সেলে একটি অভিযোগ দেড় বছর ধরে আটকে আছে। দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা অপেক্ষা করেন, যেন মেয়েটি মাস্টার্স শেষে চলে যান। তাঁরা মনে করেন, ছাত্রীর বিদায়, যৌন হয়রানির মামলারও বিদায়।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার অভিজ্ঞতা থেকে বলছি ছাত্রছাত্রীদের কম নাম্বার দেয়ার অভিযোগ নতুন কিছু নয়। কোন কোন শিক্ষকের বিরুদ্ধে কাউকে কাউকে বেশি নম্বর দেয়ারও অভিযোগ ছিল। কিন্তু শিক্ষক কর্তৃক মাইনাস বা নেগেটিভ মার্কিংয়ের ঘটনা কখনো শুনিনি। শিক্ষক-ছাত্র সম্পর্ক কি তাহলে এতটাই নাজুক হয়ে দাঁড়িয়েছে যে একজন শিক্ষক চাইলে একজন ছাত্র বা ছাত্রীকে পুরো ডুবিয়ে দিতে পারেন? কোন ক্রস মার্কিং কি নেই, ট্যাবুলেশন শীট নেই? নেই কোন জবাবদিহিতা? বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কি এতটাই দুর্বল যে ছাত্রীর প্রতি যৌন হয়রানির অভিযোগ আমলে নিতে চান না? কোন শিক্ষকের বিরুদ্ধে ইচ্ছা করে কাউকে ফেল করিয়ে দেয়ার অভিযোগ কিন্তু ভয়াবহ অপরাধ, এটা সাধারণ বিষয় নয়। এর চাইতেও বড় অপরাধ বিভাগ এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে না দাঁড়িয়ে, অভিযুক্ত শিক্ষককে সমর্থন করেছে। যে শিক্ষকরা এইসব অপরাধের সাথে জড়িত, তারা সংখ্যায় খুব বেশি না হলেও ক্ষমতাধর। তাই তারা বিভিন্নসময়ে অপরাধ করলেও পার পেয়ে যান নানাভাবে।

আমরা এখনো মনেকরি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সদিচ্ছা থাকলে এসব অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব। যৌন হয়রানির শিকার মেয়েটির পেছনে দাঁড়াতে হবে, যারা অন্যান্য অভিযোগ আনছেন তাদেরও সহযোগিতা করতে হবে, চাইলেই কেউ যেন এককভাবে কম নাম্বার দিতে না পারেন সেই ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। যৌন নিপীড়ন বিরোধী একটি কেন্দ্রীয় সেল তৈরি করা জরুরি হয়ে পড়েছে স্কুল থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত। সেই কেন্দ্রীয় সেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের পাশাপাশি আইনজীবী, অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ প্রতিনিধি, নারী ও মানবাধিকার কর্মী, সাংবাদিক, মনোবিজ্ঞানী থাকবেন।

শিক্ষকের অন্যায় আচরণ সইতে না পেরে অবন্তিকা আত্মহত্যা করেছেন। এই ঘটনার পর মিম আবারও তার আর্জি নিয়ে প্রশাসনের সামনে দাঁড়িয়েছেন। চারিদিক থেকে জোরালো দাবি উঠছে অপরাধীদের শাস্তির দাবিতে। কিন্তু শেষপর্যন্ত কী হবে? কত হত্যাকান্ডের তো বিচার হয় না। সেখানে অবন্তিকার অপমৃত্যুর কি বিচার হবে? মিম কি বিচার পাবেন? বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন কতটা নিরপেক্ষভাবে বিচার পরিচালনা করবে? বিচার খুব কম হয় বলেই বিভিন্নসময়ে ছাত্রীদের সঙ্গে যৌন হয়রানির হার বাড়ছে। এর আগেও ক্ষমতাশালী কারো কুনজরে পড়ে কোন কোন ছাত্রীকে বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়ে পালাতে হয়েছে, বিয়ে করে ফেলতে হয়েছে। অনেক মেয়েকেই ধারাবাহিকভাবে উত্ত্যক্ত করা হয়।

নারীর জন্য পড়াশোনা করাটা বিশেষ করে উচ্চশিক্ষা অর্জন জরুরি। নারীর শিক্ষা ও আয় এখন আর সেকেন্ডারি বিষয় না, এটা অপরিহার্য। শুধু পারিবারিক ও সামাজিক প্রয়োজনে নয়, দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্যও দরকার। জনশুমারি ও গৃহগণনা অনুসারে পুরুষের চেয়ে নারীর সংখ্যা বেশি। সংখ্যায় নারী বেশি হলেও শিক্ষা ও শ্রমে সুযোগ কম এবং নারীই অপদস্থ হচ্ছেন বেশি। বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে যদি ছাত্রীদের যৌন হেনস্তার শিকার হতে হয়, তাহলে তা সবারই লজ্জা। যে নির্যাতিত মেয়েটি ভয়ে ভয়ে লেখাপড়া করছেন, মানসিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়ছেন, সহপাঠি ও শিক্ষকদের প্রতি ঘৃণা নিয়ে বেঁচে আছেন এবং সর্বোপরি একজন অসুখী মানুষ হয়ে জীবন কাটাতে বাধ্য হচ্ছেন, সেই মেয়েটি কিন্তু অন্য কেউ না, সে আপনার বা আমার সন্তান।

সরকার নারীর চাকুরি ও শিক্ষা ক্ষেত্রে অধিক বিনিয়োগের পক্ষে নানা কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। বেসরকারি কর্মক্ষেত্রেও নারীকে অগ্রাধিকার দেয়ার কথাও বলা হচ্ছে। কিন্তু দেখছি ঘড়ির কাঁটা উল্টোদিকে ঘুরছে। অনেক প্রতিকূলতাকে পাশ কাটিয়ে যে মেয়েটি স্কুল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে এসেছে, সেই মেয়েটিকেই সেখানে অপমানিত ও লাঞ্ছিত হতে হচ্ছে। সেখানেই মেয়েটি কেন অনিরাপদ। তাকে কেন রাষ্ট্র নিরাপত্তা দিতে পারছে না?

বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া মেয়েরা অনেকেই সংসারের দায়িত্ব সামলে, সন্তান প্রতিপালন করে, গৃহ সহায়তাকরীর সংকট কাটিয়ে, সংসারের বয়স্ক মানুষের দেখাশোনা করার দায়িত্ব পালন করে পড়তে আসেন। কিন্তু বিভিন্ন কারণে মেয়েরা বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত এগুতে পারলেও একটা জায়গায় এসে প্রতিবন্ধকতার মুখে পড়ছেন। শিক্ষার বিভিন্ন স্তরে ছাত্রীর হার বাড়ছে, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে ছাত্রের চেয়ে ছাত্রীর হার বেশি, ফলাফলও ভালো, কলেজ পর্যায়ে ছাত্র ও ছাত্রীর হার প্রায় সমান এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রীর হার ৩৬ শতাংশের বেশি। অথচ সেখানেও ছাত্রীদের নিরাপত্তা নেই। এই নিরাপত্তাহীন পরিবেশই নারীর উচ্চশিক্ষার পথ রুদ্ধ করে দিতে পারে।

২৬ মার্চ, ২০২৪

লেখক: যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ ও কলাম লেখক।

এইচআর/এএসএম