জাতীয়

চট্টগ্রামের স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধার প্রথম ফুল

প্রথমবারের মতো স্মৃতিসৌধে বীর শহীদদের শ্রদ্ধা জানালো চট্টগ্রামের মানুষ। মঙ্গলবার ভোরে নগরের উত্তর কাট্টলীতে বানানো অস্থায়ী স্মৃতিসৌধে ৩১ বার তোপধ্বনির মাধ্যমে কর্মসূচি শুরু হয়। সেখানে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করেন জেলা প্রশাসক আবুল বাশার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামানসহ জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা।

Advertisement

চট্টগ্রাম নগরীতে একটি শহীদ মিনার থাকলেও কোনো স্মৃতিসৌধ নেই। গত বছরের ২৮ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধু টানেল উদ্বোধনের সময় উত্তর কাট্টলীতে ৩০ একর জায়গায় নতুন মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতিসৌধ ও জাদুঘর নির্মাণের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। আর এবার স্বাধীনতা দিবস ঘিরে সেখানেই আপাতত ১৫০ ফুট দৈর্ঘ্য ও ১৩০ ফুট প্রস্থের অস্থায়ী স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করা হয়।

প্রথমবারের মতো সেই অস্থায়ী স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা জানাতে আসেন বীর মুক্তিযোদ্ধারা। আশপাশের এলাকার বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দও স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা জানান।

অন্যদিকে মিউনিসিপ্যাল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ প্রাঙ্গণের শহীদ মিনারে সোমবার গভীর রাতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানায় চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগ। সকালে শ্রদ্ধা জানাতে আসেন মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী। এরপর বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী চট্টগ্রাম জেলা সংসদ, বোধন আবৃত্তি পরিষদ, প্রমা আবৃত্তি সংগঠন, মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ডসহ বিভিন্ন সংগঠন ফুল নিয়ে শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করে।

Advertisement

এছাড়াও দুই স্থানেই পুষ্পস্তবক অর্পণ করে সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, রাজনৈতিক-সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠন। অনেকেই পরিবার নিয়ে এসেছেন বীর শহীদদের শ্রদ্ধা জানাতে। পরে এম এ আজিজ স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হয় স্বাধীনতা দিবসের কুচকাওয়াজ। কুচকাওয়াজে অংশ নেন ফায়ার সার্ভিস, আনসার ভিডিপি, কারারক্ষী এবং স্কাউটসহ বিভিন্ন সংস্থার সদস্যরা।

মিউনিসিপ্যাল স্কুল প্রাঙ্গণের শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা জানাতে এসে মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, ‘বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে চট্টগ্রামের ঐতিহাসিক ভূমিকা থাকলেও পর্যাপ্ত গবেষণা ও প্রচারের অভাবে জনগণের কাছে পৌঁছায়নি। কালুরঘাট বেতারকেন্দ্র থেকে জাতির পিতার স্বাধীনতার ঘোষণা ছড়িয়ে পড়ে সারাদেশে। পাকিস্তানিদের ভিত কাঁপিয়ে দেওয়া অপারেশন জ্যাকপট, যার মাধ্যমে পাকিস্তানিদের তিনটি বড় অস্ত্রবাহী জাহাজ পানিতে তলিয়ে যায়, তাও পরিচালিত হয় চট্টগ্রাম বন্দরে।’

‘শুধু নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ নয়, স্বাধীনতা আন্দোলনের পটভূমি তৈরি করতে চট্টগ্রাম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। ১৯৬৬ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রামের লালদীঘি মাঠে আওয়ামী লীগের ডাকে বিশাল জনসভায় প্রথম জনতার সামনে বঙ্গবন্ধু ছয় দফা কর্মসূচির ঐতিহাসিক ঘোষণা প্রদান করেন। তবে পর্যাপ্ত গবেষণা ও প্রচারের অভাবে চট্টগ্রামের এতসব ঐতিহাসিক ভূমিকা ও অর্জন জনগণের কাছে সেভাবে পৌঁছায়নি।’ - বলেন মেয়র।

স্বাধীনতা দিবসের কুচকাওয়াজে সালাম গ্রহণ করেন বিভাগীয় কমিশনার মো. তোফায়েল ইসলাম, জেলা প্রশাসক আবুল বাশার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান, পুলিশ কমিশনার কৃষ্ণ পদ রায় ও জেলা পুলিশ সুপার এস এম শফিউল্লাহ।

Advertisement

এসময় বিভাগীয় কমিশনার মো. তোফায়েল ইসলাম বলেন, ‘আজ থেকে ৫৩ বছর আগে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জন করে। গৌরবময় লাল সবুজের পতাকা বাংলাদেশ এবং বহির্বিশ্বে বাঙালির শাশ্বত অর্জনকে বিশ্ববাসীর কাছে তুলে ধরতে সক্ষম হয়েছে। সেই থেকে বাংলাদেশ উন্নয়নের অপ্রতিরোধ্য অগ্রযাত্রায় এগিয়ে যাচ্ছে।’

এর আগে সোমবার রাতে আলোক প্রজ্বলনের মাধ্যমে একাত্তরের ভয়াল ২৫ মার্চের কালরাত স্মরণ করে চট্টগ্রামের মুক্তিযোদ্ধা, প্রশাসনের কর্মকর্তা-কর্মচারী, সংস্কৃতিকর্মীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ।

নগরের পাহাড়তলী বধ্যভূমিতে মোমবাতি প্রজ্বলনে অংশ নেন প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি নূরে আলম মিনা, চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান, পুলিশ সুপার এস এম শফিউল্লাহসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

এএজেড/বিএ/এএসএম