জাতীয়

বৈশাখী টিভির সাংবাদিক পরিচয়ে বাসায় ঢোকে পুলিশ

জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক ও উপস্থাপক শফিক রেহমানকে গ্রেফতার করতে বৈশাখী টেলিভিশনের সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে বাসায় ঢোকে ডিবি পুলিশ। টিভি ইন্টারভিউয়ের কথা শুনে শফিক রেহমান ফ্রেশ হওয়ার জন্য সময় নিলে তর সয় না ডিবি পুলিশের। পরে ডিবি পুলিশের পরিচয় দিয়ে শফিক রেহমানকে সঙ্গে যেতে বলেন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।শনিবার সকালে রাজধানীর ১৫ ইস্কাটনস্থ শফিক রেহমানের বাসার বাবুর্চি আলী আজম এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, সকাল সাড়ে ৭টায় হঠাৎ মাইক্রোতে (মাইক্রোবাস) করে ৩ জন বাসার নিচে নামেন। আমাকে বাসার নিচ থেকে দারোয়ান মতিন মোল্লা জানালেন বৈশাখী টিভির সাংবাদিক আসছে। স্যারের (শফিক রেহমান) ইন্টারভিউ নেবে। ওরা নাকি আগেও এসেছিলেন।তিনি আরো বলেন, এমন কথা শুনে আমি তাদের নিচে বসতে দিতে বলে স্যারকে জানাই। স্যার বললেন, ‘ওহ রিপোর্টারদের তাহলে নাস্তা দাও। আমি ফ্রেস হয়ে নিচে নামতেছি।’ কিছুক্ষণ পর ৩ জন উপর আসেন। স্যার (শফিক রেহমান) থাকেন তিন তলায়। ওরা স্যারের দেরি দেখে তাড়াহুড়া শুরু করেন। আমি বললাম, আপনারা বসেন, অস্থির হবেন না স্যার ফ্রেশ হচ্ছেন। উপরে গিয়ে দেখি স্যার শেইভ করতেছেন।বাবুর্চি আলী আজম বলেন, নিচে নেমে তাদের বলি আরো একটু সময় লাগবে, বসেন। তাদের একজন উপরে যাওয়ার চেষ্টা করলে আমি থামতে বলে নিচে নেমে যাই। ম্যাডামও অসুস্থ। আমি ম্যাডামের জন্য মালটার সরবত বানাতে যাই। তাকিয়েই দেখি স্যার নিচে নামতেছেন। ভাবলাম, স্যার কিছু না খেয়ে নিচে নামতেছেন কেন? গিয়ে জিজ্ঞেস করতেই একজন আমাকে ঘুষি মেরে বলেন, আমরা বৈশাখী টিভির রিপোর্টার না। আমরা ডিবির লোক। এই বলে স্যারকে নিয়ে যায়।বাসার গলির দারোয়ান মতিন মোল্লাহ বলেন, সকালে বৈশাখী টিভির রিপোর্টার পরিচয়ে তিনজন হৃষ্টপুষ্ট মানুষ ভেতরে যেতে চেয়ে অনুমতি নেন। আমি উপরে জানিয়ে দিলে তারা উপরে যান। এরপর আমি গেইটের গিয়ে দেখি আরো ৭ জন দাঁড়িয়ে আছেন। কাউকে সাংবাদিক মনে হচ্ছিল না। সাদা মাইক্রোবাসের সামনে সবাই বসা। এর কিছুক্ষণ পরেই স্যারকে (শফিক রেহমান) নিয়ে যায় ওরা। পরে জানতে পারি ডিবি পুলিশ আসছিল, সাংবাদিক নয়।বাসার গৃহকর্মী হনুফা বেগম বলেন, কয়েকদিন ধরে স্যার ও ম্যাডাম দুজনই অসুস্থ। স্যারের হার্টের সমস্যা, ডায়াবেটিস, রক্ত চাপ। ম্যাডামও জ্বর বমির কারণে শারীরিকভাবে খুবই দুর্বল।হনুফা বেগম আরো জানান, সকাল সাড়ে ১১টার দিকে বাসা থেকে স্যারের জন্য সকালের খাবার ও ঔষধ নিয়ে ডিবি অফিসে গেছেন ম্যাডাম (তালেয়া রেহমান)।এদিকে, ডিবি পুলিশ আটক করে নিয়ে যাওয়ার পর অস্বীকার করায় ও টিভি ও গণমাধ্যমের খবরে নিশ্চিত না হওয়ায় শফিক রেহমানের পরিবার ও সাংবাদিক মহলে নানা গুঞ্জন উঠে। পরে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ডিবি পুলিশ নাস্তা ও ঔষধ চেয়ে ফোন করলে পরিবার নিশ্চিত হয়।তবে, ঢাকা মহানগর পুলিশের উপ কমিশনার মারুফ হোসেন সরদারের কাছে জানতে চাইলে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, কোনো গণমাধ্যমের পরিচয়ে পুলিশ তার (শফিক রেহমান) বাসায় যায়নি। পুলিশ নিজের পরিচয় দিয়ে বাসায় ঢোকে।ঢাকা মহানগর পুলিশ জানায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে ও তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়কে যুক্তরাষ্ট্রে অপহরণের পরিকল্পনার অভিযোগে দায়ের করা মামলায় এ জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক ও উপস্থাপককে গ্রেফতার করা হয়েছে। বর্তমানে তাকে রাজধানীর মিন্টু রোডের গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) কার্যালয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। উল্লেখ্য, ২০১৫ সালে জয়কে অপহরণের পরিকল্পনার পল্টন থানায় দায়ের করা একটি মামলার এজাহারভুক্ত আসামি শফিক রেহমান। সেই মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে।জেইউ/আরএস/এমএস

Advertisement