১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ ঘোষিত হয় আমাদের স্বাধীনতা, শুরু হয় প্রতিরোধ ও সংগ্রাম। আর এই সংগ্রাম রূপ নেয় মুক্তিযুদ্ধে। দেশ স্বাধীন করার প্রত্যয়ে বাঙালি জাতির ইতিহাসে এ দিবসটি বিশেষ স্থান দখল করে আছে। স্বাধীনতা এই শব্দটি শুরু থেকেই স্বাধীন ছিল না। প্রতিটা স্বাধীনতাই যে কোনো জাতির কাছে এক অর্জিত, গৌরবোজ্জ্বল এবং অবিস্মরণীয় অধ্যায়। স্বাধীনতা নিয়ে বর্তমান প্রজন্মের আছে ভিন্ন আগ্রহ। মহান স্বাধীনতার মাসে তিতুমীর কলেজে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীরা তাদের ভাবনা ও প্রত্যাশা তুলে ধরেছেন জাগো নিউজের কাছে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মামুনূর রহমান হৃদয়।
Advertisement
স্বাধীনতা শ্রদ্ধা জানানোতেই যেন সীমাবদ্ধ না থাকেএস এম সায়েম, ব্যবস্থাপনা বিভাগ
জে. আর লাওয়েল বলেছেন, ‘আমি একটি স্বাধীন দেশের নাগরিক, এর চাইতে বড় গৌরব আর কিসে হতে পারে?’। আসলেই তাই। তবে এই স্বাধীনতা নামক শব্দকে ফিরে পেতে মূল্য দিতে হয়েছে ত্রিশ লাখ বাঙালির জীবন দিয়ে। কিন্তু স্বাধীনতার আজ এতো বছর পর আমরা কি সত্যিই স্বাধীন! আমার কাছে সত্যিকার অর্থে স্বাধীনতা তখনই সার্থকতা পাবে, যখন মানুষ অনাহারে থাকবে না, পড়তে পারবে, মন খুলে হাসতে পারবে, মুক্তকণ্ঠে কথা বলতে পারবে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বলেছিলেন, ‘এই স্বাধীনতা তখনি আমার কাছে প্রকৃত স্বাধীনতা হয়ে উঠবে, যেদিন বাংলার কৃষক-মজুর ও দুঃখী মানুষের সব দুঃখের অবসান হবে।’ তাই এই স্বাধীনতা যেন শুধু ২৬ মার্চ স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়ে শহীদদের শ্রদ্ধা জানানোতেই যেন সীমাবদ্ধ না থাকে।
স্বাধীনতার সঠিক ব্যবহার সামনে এগিয়ে যাওয়ার সহায়কসাদিয়া রহমান তন্নী, ব্যবস্থাপনা বিভাগ
Advertisement
স্বাধীনতা অর্থ নিজের জন্য বাঁচা। সেখানে কারও হস্তক্ষেপ থাকবে না। স্বাধীনতার সঠিক ব্যবহার মানুষকে সামনে এগিয়ে যেতে সাহায্য করে। স্বাধীনতা আত্মনির্ভরশীল হতে শেখায়। আমার কাছে স্বাধীনতার মানে জীবনে কঠোর পরিশ্রম করে সামনে এগিয়ে যাওয়া। একেকজনের কাছে স্বাধীনতা একেক রকমের। কেউ চায় অর্থের স্বাধীনতা, কেউবা ধর্ম স্বাধীনতা। এখানে স্বাধীনতা শব্দটা আপেক্ষিক। তবে পুরোপুরি স্বাধীন কেও নয়। বিশাল জঙ্গলের মাঝে যে বাঘ রাজত্ব করে সেও সেই জঙ্গলের মাঝেই স্বাধীন, জঙ্গলের বাইরে তার রাজত্ব নেয়। তাই আমরা বলতে পারি সম্পূর্ণ স্বাধীনতা কারও নেই।
আরও পড়ুন
একাত্তরের ২৫ মার্চের কালরাত ও ২৬ মার্চের সকালস্বাধীনতা অর্জনের চেয়ে, রক্ষা করা কঠিনসাকিলা পারভীন, সমাজবিজ্ঞান বিভাগ
স্বাধীনতা অর্জনের চেয়ে, রক্ষা করা কঠিন। আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি, স্বাধীন নাগরিকত্ব পেয়েছি, স্বাধীন বাংলা ভাষা পেয়েছি কিন্তু বর্তমানে এই স্বাধীনতা কতটুকু রক্ষা করতে পেরেছি! আমাদের বিশ্বাস ছিল স্বাধীন বাংলাদেশ হবে সত্যিকার অর্থে একটি গণতান্ত্রিক দেশ, প্রতিষ্ঠিত হবে শোষণমুক্ত একটি অর্থনৈতিক ও সামাজিক ব্যবস্থা, যেখানে মানবাধিকারকে মূল্যায়ন করা হবে সবার ওপরে। প্রতিটি মানুষের অন্ন, বস্ত্র, আশ্রয়, শিক্ষা ও চিকিৎসায় জীবনধারণের মৌলিক উপকরণ প্রাপ্তি নিশ্চিত করা হবে। কিন্তু একটু লক্ষ্য করলে দেখা যায় এই স্বাধীন দেশে এখনো শোষণ এবং শোষিতের চিত্র অহরহ। স্বাধীন জাতির প্রত্যাশা বা বিশ্বাসের যতটুকু প্রাপ্তি আমাদের, তা কি আমাদের দ্বারা অর্জন হয়েছে। সবশেষে এই স্বাধীনতা দিবসে আমার একটাই চাওয়া একটি নিরাপদ দেশ ও জীবনের নিরাপত্তা।
Advertisement
আজো অনাহারে দিন কাটায় কিছু মানুষমোঃ তানভীর রহমান, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ
১৯৭১ সালের ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণা জাগ্রত করেছিল বাঙালি জাতির বিবেককে। দীর্ঘ নয় মাসের যুদ্ধ শেষে অর্জিত হয়েছিল বহু আকাঙ্ক্ষিত আজকের স্বাধীনতা। কত মা-বোনকে না দিতে হয়েছে সম্ভ্রম ,কত নারী হয়েছে বিধবা,কত যে শিশু হয়েছে অনাথ! স্বাধীনতাকে ছিনিয়ে আনার লড়াইয়ের এটা এক নির্মম দৃষ্টান্ত। বাঙালির জাতীয় জীবনে এই আত্মত্যাগের কথা কখনো ভোলার নয়। তবুও আফসোস হয় যখন দেখি আজও অনাহারে দিন কাটায় কিছু মানুষ। ক্রমাগত দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি,নারী ও শিশু নির্যাতন, শিক্ষার মান নিয়ে প্রশ্ন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গুলোতে হয়রানি, শত শত শিক্ষিত বেকার যুবকের ভবঘুরে জীবন-যাপন সহ হতাশায় নিমজ্জিত অগণিত শিক্ষার্থীর আত্মহনন আমাদের প্রশ্নবিদ্ধ করে ‘আমরা আদৌ কতটুকু স্বাধীন হতে পেরেছি?’ অতএব, স্বাধীনতা দিবসে আমাদের অঙ্গীকার হোক একটি সুখী, সমৃদ্ধশালী বাংলাদেশ গড়ার।
আরও পড়ুন
তারুণ্যের চোখে ‘স্বাধীনতা’ ২৫ মার্চ, বাঙালির ইতিহাসের কালো অধ্যায়কেএসকে/এএসএম