ফিচার

তারুণ্যের চোখে ‘স্বাধীনতা’

মেহেরাবুল ইসলাম সৌদিপ

Advertisement

২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবস। ২০২৪ সালের ২৬ মার্চ বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫৩ বছর পূর্ণ হয়েছে। স্বাধীনতা দিবস আজও তরুণ প্রজন্মের কাছে এগিয়ে যাওয়ার প্রেরণা। স্বাধীনতা অর্জনের লক্ষ্যে রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধে আত্মদানকারী শহীদদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন এবং জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার শপথ গ্রহণের মধ্য দিয়ে গর্বিত জাতি ৫৪তম মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উদযাপন করছে।

দীর্ঘ নয় মাসের সংগ্রামের ফসল আমাদের স্বাধীনতা। স্বাধীনতা দিবস আজও তরুণ প্রজন্মের কাছে এগিয়ে যাওয়ার প্রেরণা। প্রেরণা যোগায় নিষ্ঠার পথে নির্ভীক যোদ্ধা হওয়ার। শুধু একটি দিবস হিসেবে নয়, এর বর্ণচ্ছটায় বদলে যায় জীবনের গতিপথ, সাহস যোগায় নতুন শপথ নেওয়ার। আর এ কারণেই স্বাধীনতা দিবসের তাৎপর্য এত বেশি। মহান স্বাধীনতা দিবসে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত কয়েকজন তরুণ মেধাবী শিক্ষার্থীর ভাবনা ও মতামত তুলে ধরেছেন মেহেরাবুল ইসলাম সৌদিপ।

স্বাধীনতা মানেই মুক্তি মিথিলা দেবনাথ ঝিলিক, শিক্ষার্থী, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ

বঙ্গবন্ধুর নির্দেশনায় ২৬ মার্চের স্বাধীনতার ঘোষণা ছিল বাঙালির জাতীয়তাবাদী চেতনার মূলমন্ত্র যা সমগ্র জাতিকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে লড়াই করতে অনুপ্রেরণা যোগায়। মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে লাখো শহীদের অজস্র রক্তের বিনিময়ে অর্জিত হয় স্বাধীনতা। দীর্ঘ নয় মাস সংগ্রাম ও আন্দোলনের মধ্য দিয়ে লড়াকু বাঙালি অর্জন করে স্বাধীনতা। তার ফলস্বরূপ বাঙালি পায় নিজস্ব ভূখণ্ড ও নিজ রাষ্ট্র শাসন কারার ক্ষমতা। ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে স্বাধীনতার ঘোষণা ছিল বাঙালির আপাময় মানুষের জাতীয়তাবাদ উদ্দীপ্ত করার মূলমন্ত্র যার ফলশ্রুতিতে বাঙ্গালি জাতি মুক্তিযুদ্ধে দেশের স্বার্থে নিজেদের সঁপে দেওয়ার মধ্য দিয়ে পায় তাদের কাঙ্ক্ষিত স্বাধীনতা। ২৬ মার্চের উদ্দীপ্তমান জাতীয়তাবাদ এর ধারাবাহিকতায় স্বাধীনতার ৫৪ বছরে এসেও রক্ষা করতে পারছে তাদের নিজস্ব ভূখণ্ড ও স্বাধীনতা। স্বাধীনতার ৫৪ বছরে এসে কথায় কথায় মিথ্যাচার স্বাধীনতার ঐতিহ্যের প্রতি অসম্মান এসব যেন জাতির লক্ষ্য না হয়। স্বাধীন হওয়ার জন্য যেমন প্রচেষ্টা ও আবেগ বিরাজমান ছিল, তেমনি স্বাধীনতা রক্ষার জন্য তৎপরতা ও সচেতনতাও জরুরি।

Advertisement

মানুষের স্বাধীনতার অধিকার প্রতিষ্ঠিত হোক নাজমুন নাহার মুনা, শিক্ষার্থী, ড্রইং অ্যান্ড পেইন্টিং বিভাগ

বাংলাদেশের স্বাধীনতার দীর্ঘ ৫৪ বছরের ইতিহাসের পাতায় আছে পাওয়া না পাওয়ার শত কথা। অতীতের সব দুঃখ কথা ভুলে আগামীর দিনে নতুন প্রত্যাশায় এগিয়ে যেতে হবে আমাদের। আমাদের জাতীয় জীবনে এ দিনটির প্রধান তাৎপর্য হচ্ছে এ দিন সমগ্র দেশবাসীর বহুকাল লালিত মুক্তি ও সংগ্রামের অঙ্গীকারে ভাস্বর। এই দিবসটি দারিদ্র্য, সামাজিক ও অর্থনৈতিক বৈষম্য দূর করে মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার মহান আদর্শে উদ্বুদ্ধ। এ দিন আমাদের আত্মপরিচয়ের গৌরবে উজ্জ্বল, ত্যাগে ও বেদনায় মহীয়ান। প্রতিবছর গৌরবময় এ দিনটি পালন করতে গিয়ে আমাদের কর্তব্য হয়ে ওঠে স্বাধীনতার স্বপ্ন ও সাধ আমরা কতটুকু বাস্তবায়ন করতে পেরেছি, জাতীয় জীবনে আমাদের অর্জন কতটুকু আর বিশ্বসভায় আমাদের অবস্থান কোথায় সেসব মিলিয়ে দেখা। এদিক থেকে এ দিনটি আমাদের আত্মসমালােচনার দিন, হিসাব মেলানোর দিন, আত্মজিজ্ঞাসার দিন। দেশের প্রত্যেক মানুষকে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে কাজ করে যেতে হবে। কারণ এই দেশ বঙ্গবন্ধুর, এ দেশ বাঙালির, এ দেশ আমার আপনার সবার। এজন্য দেশের উন্নয়নে সবাকেই দেশপ্রেমী হয়ে দেশের উন্নয়নে কাজ করতে হবে।

আরও পড়ুন

২৫ মার্চ, বাঙালির ইতিহাসের কালো অধ্যায়  স্বাধীনতা রক্ষায় তৎপর হওয়া জরুরি বিথী রানী মন্ডল, শিক্ষার্থী, নাট্যকলা বিভাগ

দীর্ঘ আন্দোলন সংগ্রাম আর মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে ২০২৪ সালে এসে স্বাধীন বাংলাদেশের ৫৩ বছর পূর্ণ হচ্ছে। স্বাধীনতা অর্জনের পর জনগণের মনে তৈরি হয় সমাজ নতুনভাবে গড়ে তোলার গভীর আকাঙ্ক্ষা। সেই সময় ভিন্ন সাংস্কৃতিক এবং রাজনৈতিক চর্চা প্রবর্তনের মাধ্যমে নাগরিকদের মনে সম্পূর্ণ নতুন চেতনা সৃষ্টি করা জরুরি। স্বাধীনতা লাভ করা একটি জাতির জন্য অত্যন্ত গৌরবের ব্যাপার। তবে স্বাধীনতা রক্ষায় অধিক সতর্ক, সচেতন এবং সৃষ্টিশীল হতে হয়। স্বাধীনতা অর্জিত হলেই চিরস্থায়ী হয় না। তা যে কোনো সময় হরণ হতে পারে। তাই স্বাধীনতা অর্জনই মূল উদ্দেশ্য নয়। একে সমুন্নত রাখা একটি সার্বক্ষণিক কাজ। স্বাধীনতা অর্জনের পর তার নানামাত্রিক আবেদন ও দাবি ধারণ করতে না পারলে প্রকৃত স্বাধীনতা টিকে থাকে না; বরং স্বাধীনতার নামে একটা মোড়ক শুধু অবশিষ্ট থাকে। ভেতরে ভেতরে রাষ্ট্রের হৃদয় ও আত্মায় পরাধীনতার সব আলামত স্পষ্ট হয়ে উঠে। এজন্য স্বাধীনতা রক্ষায় আমাদের তৎপর হতে হবে।

স্বাধীনতার চেতনায় কাটুক প্রতিটি দিন শারমিন আক্তার আয়শা, শিক্ষার্থী, পরিসংখ্যান বিভাগ

স্বাধীনতার মাস যতটা জমকালোভাবে পালন করা হয়, বছরের অন্য সময়টা ততটা স্বাধীনতার চেতনায় বলীয়ান না। এর মূলে রয়েছে আত্মকেন্দ্রিকতা এবং মূল্যবোধের অভাব। এই যুগে দেশের কিছু মানুষ কেবল নিজ স্বার্থ চিন্তায় ব্যস্ত যে নিজ গন্ডি থেকে বের হয়ে, দেশ ও জাতি এবং সমাজে অবদান রাখার সময়টুকো নেই। এজন্য আজ স্বাধীনতার এতকাল পরেও পাল্টায়নি দেশের চিত্র। দেশের স্বাধীনতা উপলব্ধির জন্য প্রয়োজন দেশের প্রতি মন থেকে ভালোবাসা, দেশকে অনুভব করা। তাই দরকার মানুষের চিন্তা ধারার আমূল পরিবর্তন। নতুন প্রজন্মকে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ, রাজনৈতিক ইতিহাস নিয়ে ধারণা দিতে হবে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় গড়ে তুলতে হবে। তবুও এখনো কিছু কিছু মানুষ আছে যারা মন থেকে স্বাধীনতার চেতনা ধারণ করে কিন্তু খুবই নগণ্য। সবার মধ্যে এই মনোভাব জাগ্রত হোক তা-ই কাম্য। আশা করি নতুন প্রজন্মের হাতে স্বাধীনতার চেতনায় দেশ এগিয়ে যাবে। তরুণ প্রজন্মের দেশপ্রেমই আগামীর উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় অবদান রাখতে পারবে।

Advertisement

স্বাধীনতা রক্ষা করাই হোক উদযাপনের মূলমন্ত্র শেখ শাহরিয়ার হোসেন, শিক্ষার্থী, সমাজকর্ম বিভাগ

স্বাধীনতা মানবজীবনের অমূল্য সম্পদ। কিন্তু আমাদের স্বাধীনতা শুধু কোনোরকমে বেঁচে থাকার জন্য করা হয়নি। আমরা স্বাধীনতা চেয়েছিলাম, মুক্তি চেয়েছিলাম, মর্যাদা চেয়েছিলাম, সাম্য চেয়েছিলাম, ন্যায়বিচার চেয়েছিলাম। সেই স্বাধীনতার বয়সও ৫৪ বছর! অর্ধ শতাব্দীর স্বাধীন হওয়া একটি দেশ হিসেবে আমাদের অর্জন কতটুকু সেই প্রশ্ন ঘুরেফিরেই তো আসে। আমরা নিজেদের স্বাধীন দেশের নাগরিক বলতে পারছি কিন্তু যে পরিমাণ ত্যাগ, ক্ষত আর রক্তের বিনিময়ে আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি, সেই আনুপাতিক হারে আমাদের অর্জন হয়নি। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বুকে ধারণ করি কিন্তু এই চেতনা ব্যবহার করে নতুন প্রজন্মকে যদি মুক্তিযুদ্ধের বাইরে থাকা সব শক্তির বিরুদ্ধে শুধু বিষোদগারই শেখানো হয়, তাহলে মুক্তিযুদ্ধের আদর্শিক অঙ্গীকার অন্ধকারে নিমজ্জিত হবে। পরাধীন জাতি পশুর চেয়ে অধম। এজন্য স্বাধীনতা এত আনন্দের, এত গৌরবের। স্বাধীনতা দিবসের আনন্দ জাতীয় জীবনে নতুন প্রাণের সঞ্চার করুক। স্বাধীনতাকে রক্ষা করার শপথই হোক স্বাধীনতা দিবস উদযাপনের মূলমন্ত্র।

অস্তিত্বের অনুভূতিই স্বাধীনতা সোহানুর রহমান সুবেল, শিক্ষার্থী, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ

স্বাধীনতা মানে নিজের অস্তিত্বের অনুভূতি, একই ভূখন্ডে ভালোবাসার মানুষজনের সঙ্গে পরম মমতায় থাকতে পারা, এদেশের মাটির গন্ধের সঙ্গে নিজের অস্তিত্বকে খুঁজে পাওয়ার সূক্ষ্ম টান অনুভব করা। নিজেকে খুঁজে পাওয়ার ইচ্ছে থেকেই আমরা লড়াই করে যাই নিজেদের ওপর হয়ে যাওয়া অন্যায়, অত্যাচারের বিরুদ্ধে। এই অন্যায়, নিষ্পেষণের মধ্যে থেকে নিজের অস্তিত্বকে আবিষ্কার করতে স্বাধীনতা শব্দটিকে ‘আমাদের’ করার জন্য সেই দুঃসাহসিক স্বপ্ন দেখার রাত ছিল ১৯৭১ এর ২৬ মার্চ। স্বাধীনতার ৫৪ বছর পর ডিজিটাল বাংলাদেশ, স্বপ্নের পদ্মাসেতু, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, পোষাক শিল্প, ঔষধ শিল্পের অগ্রগতি, মেট্রোরেলের মতো সরকারের বিভিন্ন প্রকল্প যেমন আমাদের ভবিষ্যৎ উন্নতশীল দেশের পরিচয়ের স্বপ্ন দেখায়। এই সোনার বাংলাকে দেশের প্রতিটি নাগরিকের স্বপ্নের সোনার বাংলা করতে চাই। সেজন্য আমাদের প্রত্যেককে যার যার জায়গা থেকে নিজেদের দায়িত্বগুলো সঠিকভাবে পালন করে যেতে হবে।তবেই সরকার ও জনগণের সম্মিলিত চেষ্টায় আমরা আমাদের সেই অস্তিত্ব গাঁথা বাংলাকে খুঁজে পাবো যার জন্য বাংলার বীরত্বের শ্রেষ্ঠ অধ্যায়ের রচনা হয়েছে।

স্বাধীনতায় বাঙালির মুক্তি রোমান আকন্দ, শিক্ষার্থী, ফিল্ম এন্ড টেলিভিশন বিভাগ

স্বাধীনতার ৫৩ বছর পূর্তিতে আমদা যেই মনের ভাবগুলো স্বাধীনভাবে লিখতে পারছি, এটাও স্বাধীনতারই অবদান। আজ থেকে ৫৩ বছর আগেও আমরা পরাধীন ছিলাম, না ছিল অধিকার, না ছিল স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ। ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ ঘোষিত হয়েছিল আমাদের স্বাধীনতা। দীর্ঘ নয় মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর বাঙালি লাভ করে স্বাধীন সার্বভৌম গৌরবের বাংলাদেশ। বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণও বাঙালিকে আরও সোচ্চার করেছিল তাদের অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে। সেদিন থেকেই বাঙালি স্বাধীনভাবে স্বাধীন দেশে বেঁচে থাকার স্বপ্ন বুনতে শুরু করেছিল এবং ২৬ মার্চের ঘোষণার পর সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নের লক্ষ্যে যুদ্ধে নেমেছিল। আজকের স্বাধীন বাংলাদেশ শহীদের রক্তের বিনিময়ে পাওয়া। তাদের এই আত্মত্যাগকে যথাযথ মর্যাদা দিয়ে বাংলাদেশকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাওয়া ও বিশ্বে একটি মর্যাদা পূর্ণ রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করাই হোক আজকের স্বাধীনতা দিবসে আমাদের প্রতিজ্ঞা।

স্বাধীনতার আহ্বান হোক তারুণ্যের অনুপ্রেরণা জাহিদ হাসান,শিক্ষার্থী, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ

স্বাধীনতার স্বপ্ন বাস্তবায়নের খুঁটি বোনা হয় ২৬ মার্চ দিনটির তাৎপর্য বাঙালি নামক জাতির কাছে অসীম। কারণ আজও এই দিন দেয় সামনে এগিয়ে যাওয়ার উৎসাহ ও উদ্দীপনা। বাংলার প্রতিটি তরুণ আজ উপলব্ধি করতে পারে নিজ অস্তিত্ব ও খুঁজে পায় অদম্য সাহস। কিন্তু যে স্বপ্ন নিয়ে আজকের এই দিনে মুক্তির ডাক দেওয়া হয়েছিল আমরা কি তা উপলব্ধি করতে পেরেছি নাকি ৫৪ বছর পরও আমরা সীমাবদ্ধতার বেড়াজালে বন্দি হয়ে স্বাধীনতার জয়গান গাই। আজ আমাদের অর্ধশত বছরের লালিত সেই স্বাধীনতা অনুভবের জন্য সত্যিই স্বাধীন হওয়া প্রয়োজন। আর যখন স্বাধীনতার আসল সৌন্দর্যে আমরা উজ্জীবিত হবো তখন রক্ষা হবে আমাদের সত্যিকারের স্বাধীনতা। স্বাধীনতা আমরা অর্জন করেছি এখন প্রয়োজন শুধু নিজ স্পৃহা ও সাহসিকতা দ্বারা তা রক্ষা করার অদম্য শক্তি। আর তার জন্য তারুণ্যের জাগরণ অনেক বেশি প্রয়োজন। এই স্বাধীনতা রক্ষায় আমাদের হতে হবে মুক্ত।

আরও পড়ুন

জাতির জনকের ঐতিহাসিক ভাষণ ও আমাদের স্বাধীনতা  বাংলা অক্ষরে অসাধারণ শব্দ ‘স্বাধীনতা’ আবু সুফিয়ান সরকার শুভ, শিক্ষার্থী, সমাজকর্ম বিভাগ

স্বাধীনতা বাংলা অক্ষরে লিখা কোন সাধারণ শব্দ নয়, বিশ্বের বুকে সতন্ত্র দেশ ও জাতি হিসেবে আমাদেরকে পরিচয় করিয়ে দেয় এই স্বাধীনতা শব্দটি। স্বাধীনতা শব্দটি যদিও আমাদের মতো নতুন প্রজন্মের কাছে খুবই গর্বের একটি বিষয় কিন্তু আমরা সহজেই যেই স্বাধীনতার স্বাদ নিচ্ছি তার পিছনের ইতিহাসটা সহজতর ছিল না। ২৫ মার্চ রাতে লাখো বাঙালিকে নির্বিচারে গুলি করে হত্যা করা হয়। এই হত্যাযজ্ঞ বাঙালিদের ভেতরের সত্ত্বাকে নাড়িয়ে দেয় এবং তার পরদিন ২৬ মার্চ লাখো শহীদের রক্তের শপথ নিয়ে জীবন দিয়ে হলেও বাংলাকে সার্বভৌম রাষ্ট্র গড়ার দৃঢ় আত্মপ্রত্যয় নিয়ে এগিয়ে যায় বীর বাঙালি। এমন একটা সময় ছিল যখন আমাদের বাক-স্বাধীনতা, সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতা বাঙালিদের জন্য ছিল আকাশ কুসুম কল্পনাার মতো। কিন্তু বর্তমান সময়ে শহীদের প্রাণের বিনিময়ে কষ্টার্জিত সেই স্বাধীনতার অন্তরায় হয়ে দাড়িয়েছে কিছু সন্ত্রাসবাদ, দুর্নীতি সহিংসতার অশুভ ছোবল যা আমাদের দেশটাকে আরও পিছে নিয়ে যেতে চাইছে। এজন্য মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে সবাইকে একতাবদ্ধ হয়ে এই অশুভ শক্তিকে প্রতিহত করতে হবে।

স্বাধীনতায় আরও সমৃদ্ধ হোক বাংলাদেশ ফারজানা জীবন, শিক্ষার্থী, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ

বাংলাদেশের স্বাধীনতা ছিল মুক্তিকামী বাঙালির প্রাণের বাসনা। পাকিস্তানিদের অধীনস্থ নাহ হয়ে নিজের করে পথ চলা। বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাস এক হৃদয়বিদারক কাহিনি। বাংলাদেশের এ মুক্তির ৫৩ বছর পূর্ণ হয়েছে তবুও যেন দেশটি এক দুর্নীতির করাল গ্রাসে আবদ্ধ। স্বাধীনতার ৫৪ বছরে আমরা মধ্য আয়ের স্বীকৃতি পেলেও বাস্তবে এখনো তার প্রতিফলন ফলেনি। দেশ আরও সমৃদ্ধি হবে, শিক্ষা ক্ষেত্রে এগিয়ে যাবে, সব নাগরিক সুশিক্ষার আওতায় এনে শিক্ষার মান এগিয়ে আসবে, বৈষম্য দূর হবে, দেশের অবকাঠামোর এক আমুল পরিবর্তন আসবে এই প্রত্যাশা। দেশের সব নাগরিক স্বাধীনতা রক্ষায় এগিয়ে আসুক এ চেতনা জাগ্রত হলে দেশ ও জাতীর কল্যাণ বয়ে আসবে। ৫৩ বছরে বাংলাদেশ এক সত্যিকারে সোনার ভূমিতে পরিণত হোক, এ প্রত্যাশা রইলো।

স্বাধীনতার জন্মদিন ২৬ মার্চ মো. মেহেদী হাসান, শিক্ষার্থী, গণিত বিভাগ

স্বাধীনতা মানুষের জন্মগত অধিকার। কিন্তু আমাদের স্বাধীনতা অর্জন করতে হয় অনেক ত্যাগ তিতিক্ষার বিনিময়ে। আর সেই কষ্টার্জিত স্বাধীনতার ৫৩ বছর অতিক্রম করছি। দেশ হিসেবে বাংলাদেশ স্বাধীন হলেও দেশের সব নাগরিক স্বাধীনতা ভোগ করতে পারেনি। স্বাধীনতা মানে শৃঙ্খল ও শোষণের করাল গ্রাস থেকে নিজেকে মুক্তি আত্ন-উন্নয়নের ক্ষেত্রে স্বাধীনভাবে অগ্রসর হওয়ার সুযোগ লাভ। ২৬ মার্চ মানে বাঙালির আত্নপরিচয় গাথা সুবর্ণ ও উজ্জ্বল, ত্যাগেও বেদনায় উজ্জীবিত, নিপীড়িত, শোষিত, বঞ্চিত, অবহেলিত মানুষের স্বপ্নসাধ পূরণের, জাতীয় ঐক্য ও দেশপ্রেমে উজ্জীবিত হওয়ার আনুষ্ঠানিক দিন। আর এ দিনটিতে মহান স্বাধীনতার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেওয়া হয়। আর এজন্য এ দিনটি এদেশের আপামর জনতা আনন্দ, শ্রদ্ধা, ভালোবাসা ও জাতীয় চেতনায় উদ্বেলিত হয়ে উদযাপন করে থাকে। শত সফলতা ও ব্যর্থতার পরেও স্বাধীনতার ৫৪তম জন্মদিনে আমাদের প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হতে হবে এবং বুকে প্রগাঢ় দেশপ্রেম লালন করতে হবে। বাঙালি জাতি ৩০ লাখ শহীদের রক্তের বিনিময়ে স্বাধীনতা অর্জন করলেও প্রতি মানুষের জীবনে স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে পারেনি। সুতরাং স্বাধীনতা দিবসে সব নাগরিকের সমান অধিকার নিশ্চিত হোক এটাই কাম্য।

বাংলাদেশের গৌরবময় দিন ২৬ মার্চ ফাতেমা আলী, শিক্ষার্থী, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ

প্রত্যেক বাঙালির কাছে ২৬ মার্চ একটি অন্যতম দিন। যে অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করার মত নয়। কারণ এই দিনের জন্য বহু মানুষের ত্যাগ, আবেগ, অনুভূতি, ভালোবাসা মিশ্রিত রয়েছে। ভেদাভেদ ভুলে আজকের দিনে এক নতুন বাংলাদেশ গড়ে তোলার শপথ নিই। যে বাংলায় ঘৃণার কোনো জায়গা থাকবে না, ভালোবাসাই হবে মানুষের একমাত্র ধর্ম। হাজার-হাজার মানুষ তাদের জীবনের তোয়াক্কা করেননি। সেই অবদান কখনো ভুলবার নয়। ‘বাংলাদেশ স্বাধীন’ এই কথাটা উচ্চারণ করতে ৩০ লাখ জীবনকে বিলিয়ে দিতে হয়েছে। স্বাধীনতা বাঙালি জাতির সর্বশ্রেষ্ঠ অর্জন। জীবনকে আনন্দময় করে তোলে স্বাধীনতা। স্বাধীন দেশে সবাই জীবনকে উপভোগ করবে- এটা সবারই কাম্য। কিন্তু আজকাল নাগরিক জীবনের স্বাধীনতা ক্ষুণ্ণ হচ্ছে দুর্নীতি ও অসাধুতার কারণে। যেটা আমাদের স্বাধীনতাকে অনেকটাই প্রশ্নবিদ্ধ করে। এজন্য এই স্বাধীনতার মাসে সবার প্রত্যাশা হোক দুর্নীতি ও অসাধুতাকে রোধ করে স্বাধীনতার রঙে জীবনকে সাজিয়ে শহীদদের আত্মত্যাগকে সম্মান করার।

লেখক: শিক্ষার্থী ও ক্যাম্পাস সাংবাদিক, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা

কেএসকে/জিকেএস