অর্থনীতি

৫৯৫ টাকায় গরুর মাংস কিনতে খলিলের দোকানে শত শত মানুষের লাইন

আবারও ৫৯৫ টাকা কেজি গরুর মাংস বিক্রি শুরু করেছে ঢাকার শাহজাহানপুরের আলোচিত ব্যবসায়ী খলিলুর রহমান। কম দামে গরুর মাংস কিনতে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে খলিলের দোকানে ছুটে আসছেন সাধারণ মানুষ। শত শত মানুষ লাইনে দাঁড়িয়ে শাহজাহানপুরের দোকানটি থেকে গরুর মাংস কিনছেন।

Advertisement

মঙ্গলবার (২৬ মার্চ) সকাল ৯টার দিকে শাহজাহানপুরে খলিলের দোকানের সামনে গিয়ে দেখা যায়, শত শত মানুষ লাইনে দাঁড়িয়ে রয়েছেন। লাইনে দাঁড়িয়ে একজনের পর একজন মাংস কিনে নিয়ে যাচ্ছেন।

গত নভেম্বরে ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় গরুর মাংসের কেজি ৮০০ টাকা বা তারও বেশি ছিল। এমন বাজারেই ১৯ নভেম্বর ‘খলিল গোস্ত বিতান’ ৫৯৫ টাকা দরে গরুর মাংস বেচতে শুরু করে। এর প্রভাবে বিভিন্ন স্থানে কমতে থাকে গরুর মাংসের দাম।

এরপর ৭ ডিসেম্বর মাংস ব্যবসায়ী সমিতি গরুর মাংসের দাম নির্ধারণ করে দেয় প্রতি কেজি ৬৫০ টাকা। তবে জানুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহে ঢালাওভাবে গরুর মাংস ৭০০ টাকায় বিক্রি শুরু হয়। এ পরিস্থিতিতেও খলিলের দোকানে গরুর মাংসের কেজি ৫৯৫ টাকা ছিল।

Advertisement

তবে কয়েকদিন পর দাম কেজিতে ৫৫ টাকা দাম বাড়িয়ে রোজার আগ পর্যন্ত ৬৫০ টাকা অরে মাংস বিক্রি করেন খলিল। আর রোজার শুরুতে দাম আবার ৫৯৫ টাকায় নামিয়ে আনেন তিনি। তার এ সিদ্ধান্ত রীতিমতো ঝড় তোলে মাংসের বাজারে। কম দামে মাংস কিনতে প্রতিদিন খলিলের দোকানে ক্রেতাদের ভিড় জমতে থাকে।

রমজান মাসজুড়েই ৫৯৫ টাকা দরে গরুর মাংস বিক্রির ঘোষণা দিলেও হুট করে ১০ রোজা থেকে গরুর মাংসের দাম ১০০ টাকা বাড়িয়ে কেজি ৬৯৫ টাকা করেন। এতে সমালোচনার মুখে পড়েন আলোচিত এই মাংস ব্যবসায়ী।

এ পরিস্থিতিতে ২৪ মার্চ জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সংবাদ সম্মেলনে হাজির হয়ে বর্ধিত দাম কমিয়ে আবারও আগের ৫৯৫ টাকা দামে মাংস বিক্রির সিদ্ধান্ত জানান খলিল। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সোমবার (২৫ মার্চ) সকাল থেকে আগের দামে অর্থাৎ ৫৯৫ টাকা কেজি গরুর মাংস বিক্রি শুরু করেন এই ব্যবসায়ী।

সোমবার খলিলের দোকানে গরুর মাংস কিনতে এসে ফিরে যান অনেকে। পূর্ব-ঘোষণা অনুযায়ী ২০টি গরু বিক্রি শেষে দোকান বন্ধ করে দেন এ ব্যবসায়ী। দীর্ঘসময় লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে মাংস না পেয়ে হতাশ হয়ে ফিরে যান অনেকে।

Advertisement

এ পরিস্থিতিতে মঙ্গলবার খলিলের দোকানে মাংস বিক্রি শুরু হওয়ার আগেই লাইনে দাঁড়ান অনেকে। বিক্রি শুরু হওয়ার পর পর লাইনও বাড় হতে থাকে। অনেকে মোটরসাইকেল নিয়ে গরুর মাংস কিনতে আসেন দোকানটিতে। এমনকি কেউ কেউ প্রাইভেটকার নিয়েও আসেন।

সকাল ৯টার দিকে কথা হয় লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা আশরাফুল ইসলামের সঙ্গে। সে সময় আশরাফুলের সামনে লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলেন অন্তত আরও ২০০ জন। তার পেছনেও অনেককে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়।

লাইনে দাঁড়িয়ে মাংস কেনার বিষয়ে আশরাফুল বলেন, যাত্রাবাড়ী থেকে এখানে মাংস কিনতে এসেছি। মহল্লার দোকানে ৭৫০ টাকা কেজি গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে। আর এখানে ৫৯৫ টাকা। ৫ কেজি গরুর মাংস কিনবো, এতে সাড়ে ৭০০ টাকার বেশি সেভ হবে। এ জন্য একটু কষ্ট হলেও লাইনে দাঁড়িয়ে আছি।

দোকানটিতে মাংস কিনতে আসা খালেদা বেগম নামের আরেকজন বলেন, এখানে কম দামে গরুর মাংস বিক্রি হয়। তাই মালিবাগ থেকে নিয়মিত এখানে এসে গরুর মাংস কিনি। আজ দু’দিন ধরে এখানে ভিড় অনেক বেশি। গতকাল দুপুরে এসেছিলাম, কিন্তু মাংস কিনতে পারিনি। তাই আজ আবার আসছি।

তিনি বলেন, অন্যান্য দোকান থেকে এখানে মাংস কেজিতে ১৫৫ টাকা কম নেওয়া হয়। মালিবাগের বেশিরভাগ ব্যবসায়ী গরুর মাংসের কেজি ৭৫০ টাকা বিক্রি করছে। তবে খোরশেদ নামের এক ব্যবসায়ী ৬০০ কেজি বিক্রি করছেন। কিন্তু সেই মাংসের মধ্যে ছাঁট বেশি। প্রকৃত মাংস খুব কম। ভালো মাংস ৭৫০ টাকা বিক্রি করছে খোরশেদ। এর এখানে সব মাংসই ৫৯৫ টাকা কেজি। এ জন্য কষ্ট হলেও এখানে লাইনে দাঁড়িয়ে গরুর মাংস কিনছি।

দোকানে দেদারসে বিক্রি শুরু হলেও সেখানে খলিলুর রহমান উপস্থিত ছিলেন না। দোকানটির সামনে কথা হয় খলিলের সহকারী মো. জাবেদের সঙ্গে। তিনি বলেন, সোমবারও (২৫ মার্চ) আজকের মতো মানুষের ভিড় ছিল। গতকাল ২০টি গরু জবাই হয়। আজকেও ২০টি গরু জবাই দেওয়া হয়েছে। যতক্ষণ মাংস থাকবে, ততক্ষণ বিক্রি করা হবে। ২০টি গরুর মাংস বিক্রি শেষ হয়ে গেলে দোকান বন্ধ।

তিনি বলেন, রোজার শুরুতে গরুর মাংসের কেজি ৫৯৫ টাকা বিক্রি করা হয়। মধ্যে দুদিন দাম বাড়িয়ে ৬৯৫ টাকা করা হয়। এখন আবার ৫৯৫ টাকা কেজি গরুর মাংস বিক্রি করা হচ্ছে। ২০ রোজা পর্যন্ত এ দামে মাংস বিক্রি করা হবে।

এমএএস/এমএএইচ/জিকেএস