বৈশ্বিক বাণিজ্যের গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র হিসেবে দীর্ঘদিন সুনাম ধরে রেখেছিল চীনের বিশেষ প্রশাসনিক অঞ্চল হংকং। কিন্তু সম্প্রতি নতুন একটি আইনের কারণে হঠাৎই উদ্বেগ বেড়েছে শহরটিতে ব্যবসা-বাণিজ্যের পরিবেশ নিয়ে।
Advertisement
কর্তৃপক্ষ বলছে, আর্টিকেল ২৩ নামে আইনটি হংকংয়ের সুরক্ষা ও স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করবে। তবে সমালোচকদের দাবি, বিদ্রোহ থেকে রাষ্ট্রদ্রোহ পর্যন্ত বিভিন্নভাবে সংজ্ঞায়িত অপরাধের ক্ষেত্রে রুদ্ধদ্বার বিচার এবং যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের বিরুদ্ধে সব ধরনের ভিন্নমত দমনে কঠোর এই আইনটি ব্যবহার করা হবে।
চান নামে একজন রিয়েল এস্টেট সার্ভেয়ার জানান, এটি এমন এক সময়ে ঘটছে, যখন বেইজিংয়ের কঠোর নীতি এবং চীন-মার্কিন উত্তেজনার কারণে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা এমনিতেই দূরে সরে যাচ্ছে।
আরও পড়ুন>>
Advertisement
পূর্ণ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই সার্ভেয়ার বলেন, হংকংকে এতদিন চীন থেকে আলাদা দেখা হতো। তাই ‘চীনের বাইরে’ বিনিয়োগে আগ্রহীরা সেখানে বিনিয়োগ করতে পারতেন। কিন্তু এখন আর তেমনটি হবে না।
আর্টিকেল ২৩ ও এর প্রতিক্রিয়াআর্টিকেল ২৩ হলো হংকং মৌলিক আইনের একটি নিবন্ধ। এতে বলা হয়েছে, চীনের কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ, রাষ্ট্রদ্রোহ, বিচ্ছিন্নতা বা রাষ্ট্রীয় গোপনীয়তা চুরি, বিদেশি রাজনৈতিক সংগঠন বা সংস্থাগুলোকে এ অঞ্চলে রাজনৈতিক কার্যকলাপ পরিচালনা থেকে নিষিদ্ধ করা এবং এ অঞ্চলের রাজনৈতিক সংগঠন বা সংস্থাগুলোকে বিদেশি রাজনৈতিক সংগঠন বা সংস্থাগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন থেকে নিষিদ্ধ করার জন্য হংকং নিজেই আইন প্রণয়ন করবে।
গত ২৩ মার্চ থেকে শহরটিতে কার্যকর হয়েছে এই আইন। বিশ্লেষকরা বলছেন, জাতীয় নিরাপত্তায় জোর এবং ‘বিদেশি বাহিনী’ সৃষ্ট বিপদ হংকংয়ে বিদেশি পুঁজি ও ব্যবসার জন্য ঝুঁকি বাড়াচ্ছে।
আরও পড়ুন>>
Advertisement
চীনের রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের কর্মী তিসে বলেন, গত দুই বছরে ব্যবসা-বাণিজ্য ভয়ংকর ছিল এবং কোনো বড় চুক্তি হয়নি। তিনি জানান, তাদের কোম্পানি গত জুন মাসে ১০ শতাংশ এবং গত সপ্তাহে আরও পাঁচ শতাংশ কর্মীকে বরখাস্ত করেছে। বিদ্যমান কর্মীদের আশঙ্কা, যেকোনো সময় তাদের পালাও চলে আসবে।
জার্মান চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি জোহানেস হ্যাক বলেছেন, আর্টিকেল ২৩ ঘিরে হংকংয়ে ব্যবসার ঝুঁকিগুলো মূল্যায়ন করার মতো সময় এখনো আসেনি। তবে শব্দটির বিস্তৃত ব্যবহার এবং লঙ্ঘনের গুরুতর পরিণতির কারণে চড়া মূল্য চুকাতে হতে পারে।
২০১৯ সালে গণতন্ত্রপন্থি বিক্ষোভ এবং কঠোর কোভিড নীতির কারণে হংকংয়ের অর্থনীতি এমনিতেই বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিল। এরপর বেইজিংয়ের কড়াকড়ির কারণে শহরটি এখন আরও চাপে পড়েছে।
সেখানে বাণিজ্যিক ও অন্যান্য জায়গার ভাড়া কমে গেছে। বহু অফিস ভবন, দোকানঘর খালি পড়ে রয়েছে। কমে গেছে পর্যটকও। গত বছর হংকংয়ে পর্যটক আগমন ছিল করোনাপূর্ব সময়ের তুলনায় ৬০ শতাংশ মাত্র।
হংকংয়ের মুকুট রত্ন বলে পরিচিত হ্যাং সেং সূচকের মান ২০১৯ সাল থেকে ৪০ শতাংশেরও বেশি কমেছে। ভারত গত জানুয়ারিতে এটিকে ছাড়িয়ে বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম পুঁজিবাজারে পরিণত হয়েছে। আর্থিক লেনদেনে হংকংয়ের বড় আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে সিঙ্গাপুর।
আরও পড়ুন>>
পর্যটক আকৃষ্টে ৫ লাখ ফ্রি এয়ার টিকিট দেবে হংকং হংকংয়ে পত্রিকা অফিস থেকে ৬ সাংবাদিক গ্রেফতার হংকংয়ে গণতন্ত্রের দাবিতে আন্দোলনকারী ৭ জনের কারাদণ্ডবৈশ্বিক ব্যাংকগুলোও হংকংয়ে কর্মী ছাঁটাই করছে। এগুলো শহরটির মন্থর প্রবৃদ্ধি এবং বিনিয়োগকারীদের আস্থা কমে যাওয়ার দিকেই ইঙ্গিত করে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
মর্গ্যান স্ট্যানলি এশিয়ার সাবেক প্রধান সম্প্রতি একটি সংবাদপত্রের কলামে ঘোষণা করেছেন, ‘হংকং শেষ হয়ে গেছে’। সেখান থেকে পুঁজি এবং জনশক্তি বিদায় নিতে শুরু করেছে।
প্রবীণ বিনিয়োগকারী লাম ইয়াট-মিং একটি অর্থনৈতিক ম্যাগাজিনে লিখেছেন, বিনিয়োগকারীদের উচিত হংকংয়ের পুঁজিবাজার থেকে নিজেদের দূরে রাখা।
জোহানেস হ্যাকের মতে, হংকং সম্পর্কে বহির্বিশ্বের ধারণা বদলে গেছে। যদিও শহরটি এখনো চীনের মূল ভূখণ্ড থেকে আলাদা; কিন্তু নিরাপত্তার ওপর বাড়তি দৃষ্টি মানুষের মনে থাকা পার্থক্যগুলোকে ক্রমেই ঝাপসা করে দিতে পারে।
সূত্র: বিবিসিকেএএ/