ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের এক শিক্ষার্থীর সঙ্গে ইনস্টিটিউট লাইব্রেরির এক কর্মচারীর বিরুদ্ধে অশোভন আচরণের অভিযোগ করেছেন ২৪৪ জন শিক্ষার্থী। লিখিত অভিযোগে শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, ওই কর্মচারী সবসময়ই এমন আচরণ করেন।
Advertisement
রোববার (২৪ মার্চ) দুপুরে শিক্ষার্থীদের স্বাক্ষর সম্বলিত অভিযোগ পত্রটি ইনস্টিটিউটের পরিচালক, গ্রিভেন্স কমিটির আহ্বায়ক এবং আইইআর লাইব্রেরিয়ানের কাছে দেওয়া হয়েছে। অভিযুক্ত কর্মচারীর নাম শাবাব আল শায়েরী। তিনি শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের লাইব্রেরিতে কর্মরত (উচ্চমান সহকারী) রয়েছেন।
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী মাহমুদ-উল হাসান বলেন, ‘‘গত ২১ মার্চ আমাদের ইন্টার্নশিপের ড্রাফট জমা দেওয়ার দিন আমি লাইব্রেরি হতে প্লেজারিজম চেকের ফরম নিতে আমার কয়েকজন বন্ধুসহ লাইব্রেরিতে যাই। আমি ও রুহুল (বন্ধু) একসঙ্গে সেখানে দায়িত্বরত কর্মচারী শাবাব আল শায়েরীর নিকট ফরম নিতে যাই। ফরম নিয়ে পূর্বে পূরণকৃত আরেক বন্ধুর ফরম দেখে আমার ফরমটি পূরণ করি। আমাদের রিপোর্টগুলো বাংলায় লিখিত হওয়ায় এবং লাইব্রেরিতে বাংলা প্লেজারিজম চেকের ব্যবস্থা না থাকায় রাফিউলের ফরমে ‘বাংলা চেকের ব্যবস্থা নেই’ এমন শব্দগুচ্ছ লিখিত ছিল। এটি যে অফিস কর্তৃক পূরণীয় তা লক্ষ্য না করে তাড়াহুড়োবশত আমি আমার ফরমের অন্যান্য তথ্যের সঙ্গে এই শব্দগুচ্ছও লিখে ফেলি। ফরমটি জমা দেওয়ার সময় আমি কেন এটি লিখলাম, তার সূত্র ধরে তিনি (অভিযুক্ত) আমার সঙ্গে ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করেন। আমি তাকে যথাসম্ভব বিনয়ের সঙ্গে বলার পরও তিনি আমার সঙ্গে চরম দুর্ব্যবহার করেন।’
মাহমুদ বলেন, ‘তিনি আমার সঙ্গে অকথ্য ভাষায় উচ্চবাচ্য করতে থাকেন। শুধু আমি না, নিয়োগের পর থেকে এখন পর্যন্ত অনেক শিক্ষার্থী ও কর্মচারীর সঙ্গেই তিনি এমন ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করেছেন। আমাদের থিসিসের রিপোর্ট সংক্রান্ত কাজে গিয়ে ৩-৪ দিন আমার অনেক সহপাঠীই তার কাছ থেকে এমন দুর্ব্যবহার ও ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণের মুখে পড়েছেন। এমনকি আমার অনেক জুনিয়র ও সিনিয়র ব্যাচের শিক্ষার্থীরাও তার থেকে এমন আচরণের শিকার হয়েছেন। আগে একাধিকবার বেশ ক’জন শিক্ষার্থী তাকে এই আচরণের বিষয়ে সতর্ক করলেও তিনি (অভিযুক্ত) এই ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ অব্যাহত রেখেছেন। পূর্বের বিভিন্ন ঘটনায় তার এমন আচরণের প্রতিবাদ করতে গেলে তিনি (অভিযুক্ত) তাচ্ছিল্যের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের হুমকি দিয়েছেন।’
Advertisement
এই শিক্ষার্থী আরও বলেন, ‘আইইআর’র ২৫তম ব্যাচের পক্ষ থেকে এর আগে একটি অভিযোগ করা হলেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। আজ আমি আমার সঙ্গে ঘটে যাওয়া ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে সুষ্ঠু বিচারের দাবিতে আইইআর’র ২৪৪ জন শিক্ষার্থীর স্বাক্ষর, পূর্বে আরও যারা অভিযুক্তের নিকট থেকে এমন দুর্ব্যবহারের শিকার হয়েছেন তাদের বক্তব্যের স্ক্রিনশট সংযুক্ত করে শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরিচালক, গ্রিভেন্স কমিটির আহ্বায়ক ও আইইআর’র লাইব্রেরিয়ান বরার অভিযোগ দাখিল করেছি। সোমবার (২৫ মার্চ) প্রক্টর অফিসে ও উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অফিসে অভিযোগের একটি অনুলিপি জমা দেবো। আমি এই বিষয়ে সর্বোচ্চ বিভাগীয় ও প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য ইনস্টিটিউট, প্রশাসন ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নিকট দাবি জানাই, যেন এই দৃষ্টান্তের ফলে ভবিষ্যতে আর কোনো কর্মচারী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করার সাহস না পান।’
ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা বলেন, ‘শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের লাইব্রেরি প্রথমবর্ষ থেকেই আমাদের নিকট পড়াশোনার জন্য একটি আদর্শ স্থান হিসেবে বিবেচিত। সব বর্ষের শিক্ষার্থীরা এখানে সময় ও নিয়ম মেনে আমরা পড়তে যাই। লাইব্রেরির মতো স্থানে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহারকারী এমন একজন কর্মচারীর উপস্থিতি ও দৌরাত্ম্য ইনস্টিটিউটের লাইব্রেরির পরিবেশ, উপযোগিতা ও সুনাম নষ্ট করছে। আমরা সাধারণ শিক্ষার্থীরা এটি কোনোভাবেই মেনে নিতে পারি না যে, আমাদের জন্য নিয়োজিত একজন কর্মকর্তা/কর্মচারী বিনা কারণে, বিনা উসকানিতে আমাদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করবেন।’
এ ঘটনায় অভিযুক্ত কর্মচারীর উপযুক্ত বিচারের পাশাপাশি শিক্ষার্থীরা তিনটি দাবি জানান। শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো হলো-
১. অভিযুক্ত কর্মচারীকে স্থায়ীভাবে চাকরিচ্যুত করার মধ্যদিয়ে লাইব্রেরির সব ধরনের কার্যক্রম থেকে অবিলম্বে অব্যাহতি দেওয়া।
Advertisement
২. লাইব্রেরির উপযোগিতা ও পরিবেশ রক্ষার্থে এমন ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণকারী কোনো কর্মকর্তা/কর্মচারী যেন ভবিষ্যতে নিয়োগ না পেতে পারেন সে বিষয়ে যথাযোগ্য কর্তৃপক্ষের নজরদারির ব্যবস্থা করা।
৩. শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের শিক্ষার পরিবেশকে সমুন্নত রাখতে শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা, কর্মচারীদের মধ্যে সুদৃঢ় সম্পর্ক বজায় রাখতে প্রশাসনের কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা।
অভিযোগের ব্যপারে কথা বলতে অভিযুক্ত শাবাব আল শায়েরীকে বেশ কয়েকবার ফোন দেওয়া হলেও তিনি রিসিভ করেননি।
এ বিষয়ে ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ড. আব্দুল হালিমকে কল দেওয়া হলে তিনিও রিসিভ করেননি।
হাসান আলী/ইএ/জিকেএস