শিলাবৃষ্টি আমাদের দেশের জন্য নতুন কিছু নয়। আমাদের দেশে বৈশাখ মাসের আগে ও পরে শিলাবৃষ্টি দেখা যায়। সাধারণত গ্রীষ্মকালে অতিরিক্ত গরমের কারণে শিলাবৃষ্টি হয়। ওয়েদার ক্যালেন্ডার অনুযায়ী, গ্রীষ্মকাল না বলে প্রাক-মৌসুমী সময় বলা যায়। সেটি এরই মধ্যে শুরু হয়ে গেছে। এটি সাধারণত মার্চ মাসের শেষের দিকে শুরু হয়। কখনো কখনো ফেব্রুয়ারিতেও দেখা যায়।
Advertisement
তাই চৈত্র মাসেও শিলাবৃষ্টি হতে পারে। এই ভারী শিলাবৃষ্টির কারণে চৈত্র মাসে উঠতি ফসলসহ অন্য ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়। শিলার আকার বড় হওয়ায় বসতঘরের টিনের চাল ফুটো হতে দেখা যায়। অনেক দেশে এখন শিলাবৃষ্টির ধরন পাল্টে গেছে। বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির কারণে জলবায়ু বদলে যাচ্ছে, এটিই হয়তো ধরন পাল্টানোর প্রধান কারণ।
বাংলাদেশে মার্চ-এপ্রিলে শিলাবৃষ্টির প্রবণতা বেশি। এর সঙ্গে আবহাওয়ার পাশাপাশি ভৌগলিক কারণও জড়িত। আবহাওয়ার ধর্ম হলো, উষ্ণ বায়ু উপরের দিকে উঠবে আর শীতল বায়ু নিচের দিকে নামবে। এর মধ্যে যদি শীতল পানির উৎস পাওয়া যায়, তখন মেঘে বরফ জমতে থাকে। একপর্যায়ে বেশি ভারী হয়ে গেলে বাতাস আর সেটি ধরে রাখতে পারে না। তখন বজ্রমেঘের সঙ্গে সেই বরফ নেমে আসে শিলাবৃষ্টি হয়ে।
আবহাওয়াবিদরা মনে করেন, বৃষ্টির ফোঁটাগুলো পড়ার সময় কখনো কখনো মাঝপথে বাতাসের ঊর্ধ্বমুখী চাপের মধ্যে পড়ে। তাই বৃষ্টির ফোঁটাগুলো নিচে নামতে নামতে কিছু অংশ আবার ওপরে উঠতে শুরু করে এবং আরও ঠান্ডা হতে থাকে। ঘনীভূত পানির ফোঁটাগুলো আরও ভারী হয়ে আবার নিচে নামতে থাকে এবং আবার গরম বাতাসের ঊর্ধ্বমুখী চাপে পড়ে কিছু অংশ ওপরে উঠতে থাকে। এভাবে কয়েকবার ওঠা-নামা করতে করতে ফোঁটাগুলোর কিছু অংশ ছোট ছোট বরফখণ্ডে পরিণত হয়। যা বেশি ভারী বলে আর ওপরে উঠতে পারে না। বৃষ্টির সঙ্গে নিচে নেমে আসে। এটিকেই আমরা শিলাবৃষ্টি বলে জানি।
Advertisement
আরও পড়ুন
৮৬০০ বছর আগের তৈরি রুটি কেমন ছিল জানেন? বিদেশে সংরক্ষিত কল-রেডীর যন্ত্রপাতিএবার জেনে নিই শিলার আকার কেমন হতে পারে? জানা যায়, সাধারণত ১৪ হাজার ফুটের নিচে যদি হিমাংক রেখা (যেখান থেকে বাতাসের তাপমাত্রা শূন্য ডিগ্রি সেলসিয়াস বা তার নিচে নেমে যায়) থাকে এবং সেখানে বজ্রমেঘ তৈরি হয়, তাহলে শিলা হয় আকারে তুলনামূলক বড়। এগুলো কম দূরত্ব পেরিয়ে নেমে আসে। কিন্তু হিমাংক রেখা যদি আরও উপরে চলে যায়, সে ক্ষেত্রে শিলাবৃষ্টির স্থায়িত্ব কমে আসে। ওই দূরত্ব অতিক্রম করে ভূপৃষ্ঠে আসতে আসতে শিলাখণ্ড গলতে থাকে।
ইউএস ন্যাশনাল ওশেনিক অ্যান্ড অ্যাটমোস্ফেরিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের তথ্য অনুসারে, ঘণ্টায় ১০৩ কিলোমিটার বেগের ঊর্ধ্বমুখী বাতাস একটি গলফ বলের সমান শিলার টুকরা ধরে রাখতে পারে। আবার ২৭ শতাংশ ক্ষেত্রে শিলার টুকরা বেসবল আকার পর্যন্তও পৌঁছাতে পারে। প্রচণ্ড ঝড়ের মেঘে তৈরি হওয়া একেকটি শিলা আকারে ২৫ মিলিমিটার বা ১ ইঞ্চিরও বেশি হতে পারে।
সম্প্রতি শিলাবৃষ্টি নিয়ে কাউকে কাউকে উচ্ছ্বসিত হতে দেখা যায়। তারা শিলা হাতে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে উল্লাস করেন। কিন্তু এই শিলাবৃষ্টি কতটা ক্ষতিকর, তা কেবল বাংলার কৃষকই জানেন। এতে ফসলের ক্ষতি হয়। নিম্নবিত্তের বসতঘরের ক্ষতি হয়। জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। প্রাণহানীও ঘটতে পারে। তাই শিলাবৃষ্টির সময় আমাদের সতর্ক থাকা উচিত। এমনকি কৃষককে সুপরামর্শ দিয়ে পাশে দাঁড়ানো জরুরি।
Advertisement
এসইউ/জিকেএস