দু’দিন ধরে ফেসবুকের নিউজ ফিডে ঘুরছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে ব্রিজ ভেঙে ২৭ জন নিহত ও ৪৩ জন আহতের খবর। মূলত খবরটি ভুয়া ও গুজব। এনিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চলছে তোলপাড়। একজন সাংবাদিকের সচেতনতামূলক পোস্ট থেকে এই গুজব ছড়িয়েছে।
Advertisement
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, স্থানীয় সাংবাদিক আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ শুক্রবার (২২ মার্চ) তার ফেসবুক পেজে পোস্ট দেন ‘ব্রেকিং নিউজ- এই শোক সইবার নয়। নাসিরনগরে ব্রিজ ভেঙে বাস-ট্রাক খালে, ২৭ জন নিহত। গুরুতর আহত আরও ৪৩ জনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। মা-বাবার চোখের সামনে সন্তানের আর সন্তানের সামনে মা-বাবার লাশ। স্বজনদের আহাজারিতে সয়লাব চারপাশ। এমন একটা সংবাদই হয়তো অপেক্ষা করছে নাসিরনগরবাসীর সামনে। ঝুঁকিপূর্ণ ব্রিজগুলো দ্রুত মেরামত করা না হলে যে কোনো মুহূর্তেই ঘটতে পারে এমন দুর্ঘটনা। তখন শোক প্রকাশ করা ছাড়া কিছুই করার থাকবে না। হাজার কোটি টাকা দিয়েও দুর্ঘটনায় নিহত কাউকে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে না। আশা করছি কর্তৃপক্ষ দ্রুত যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে ঝুঁকিমুক্ত চলাচল নিশ্চিত করবে।’
সাংবাদিক আব্দুল্লাহ আল মাহমুদের এই ফেসবুক স্ট্যাটাসের ওপরের অংশ মুহূর্তেই ছড়িয়ে পড়ে ফেসবুকে। এরই সূত্র ধরে অনেকেই ফেসবুকে পোস্ট করেন, ‘নাসিরনগরে ব্রিজ ভেঙে বাস-ট্রাক খালে, ২৭ জন নিহত। গুরুতর আহত আরও ৪৩ জনকে ঢাকা মেডিকেলে পাঠানো হয়েছে।’
এনিয়ে ছড়িয়ে পড়ে আতঙ্ক। এর কিছুক্ষণ পর সাংবাদিক মাহমুদ তার ফেসবুক স্ট্যাটাস মুছে ফেলে আরেকটি পোস্ট দিয়ে বিষয়টি স্পষ্টও করেন।
Advertisement
সাংবাদিক আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ এ বিষয়ে বলেন, অনেকেই আমার পূর্বের পোস্টটি দেখে বিভ্রান্ত হয়েছেন, যার জন্য আমি আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করছি। লেখাটি সম্পূর্ণ না পড়েই বেশিরভাগ মানুষ প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন। পোস্টটির উদ্দেশ্য ছিল বড় কোনো দুর্ঘটনা ঘটার আগেই যেন আমরা সমাধানের দিকটা খেয়াল করি। তবে আমার পোস্টটি কিছুটা সেনসেটিভ হওয়ায় ব্যাপারটি ভিন্ন খাতে প্রবাহিত হয়ে গেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল অংশ থেকে শুরু হওয়া একটি আঞ্চলিক মহাসড়ক নাসিরনগর হয়ে লাখাই উপজেলায় গিয়ে শেষ হয়েছে। সড়কটির নাসিরনগর অংশে অন্তত চারটি ব্রিজ অতি ঝুঁকিপূর্ণ। সম্প্রতি নাসিরনগরের বেণিপাড়া এলাকায় একটি ব্রিজের দুপাশের মাটি সরে গিয়ে ব্রিজটির মাঝামাঝি জোড়ার অংশ কিছুটা ফাঁকা হয়ে গেছে। এতে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে যানবাহন।
ঝুঁকিপূর্ণ ব্রিজ দ্রুত সংস্কারের বিষয়টি গত ২০ মার্চ জেলা প্রশাসনের সভায় তোলেন নাসিরনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। মূলত এ বিষয়টি ফেসবুকে উপস্থাপন করতে চেয়েছিলেন সাংবাদিক আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ।
এ বিষয়ে নাসিরনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সোহাগ রানা বলেন, ওই সাংবাদিক ব্রেকিং নিউজ লিখে ফেসবুকে পোস্ট দেওয়ায় এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। অনেকে সম্পূর্ণ পোস্ট না পড়ে ওপরের অংশটুকু নিয়ে শেয়ার করায় বিষয়টি দ্রুত ছড়িয়েছে। তবে একজন সাংবাদিকের এভাবে পোস্ট দেওয়া ঠিক হয়নি। অবশ্য পরে তিনি আরেকটি পোস্ট দিয়ে দুঃখ প্রকাশ করেছেন।
Advertisement
আবুল হাসনাত মো. রাফি/এফএ/এমএস