‘এখন যে দুর্নীতির চিত্র দেখছেন, তা পানির ওপর ভেসে থাকা বরফ খণ্ডের সামান্য অংশের মতো। বরফের বিশাল অংশ পানির নিচে। তেমনি যা প্রকাশ পাচ্ছে, তা খুবই সামান্য। দুর্নীতি সব গ্রাস করে নিচ্ছে।’
Advertisement
বলছিলেন, সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সাধারণ সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার। মাঠ প্রশাসনের দুর্নীতি-অনিয়ম প্রসঙ্গে জাগো নিউজের কাছে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন তিনি।
তিনি বলেন, ‘দেখুন, দুর্নীতি নিয়ে অভিযোগ বহু পুরোনো। রাষ্ট্রব্যবস্থার শুরু থেকেই দুর্নীতি হয়ে আসছে। আপনাকে সময়ের সঙ্গে তুলনা করে হয়তো আলোচনা করতে হবে। অর্থাৎ, দিন দিন অনিয়ম কোথায় গিয়ে ঠেকছে সেটি এখন বিশ্লেষণের বিষয়।
গত জাতীয় নির্বাচনে সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসককে এক প্রার্থীর দেড় কোটি টাকা ঘুস দেওয়ার যে অভিযোগ উঠেছে, তা আমলে নেওয়ার যথেষ্ট কারণ আছে। তদন্তসাপেক্ষে বিষয়টি পরিষ্কার হওয়া যাবে। কিন্তু এরকম তো বহু ঘটনা আমাদের সামনে হাজির হয়। মিডিয়ায় প্রকাশ পায় মাঠ প্রশাসনের দুর্নীতি।’
Advertisement
আরও পড়ুন
দ্বাদশ নির্বাচনে বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রতিফলন ঘটেনি: বদিউল আলম রাজনীতিকরা সঠিক পথে ফিরলেই মুক্তি মিলবেএকসময় আমাদের প্রশাসন বা রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো বহুলাংশে দুর্নীতিমুক্ত ছিল। ব্রিটিশ আমলে মাঠ প্রশাসনকে তুলনা করা হতো লৌহ কাঠামোর সঙ্গে। তারা ছিলেন সিলেক্টেড এবং নিজেরা জনগণের প্রতি ছিলেন কমিটেড। সেবাই তারা ব্রত মনে করতেন। দুর্নীতি রোধ করা ও জনগণের কল্যাণ নিশ্চিত করাই ছিল তাদের প্রধান কাজ। তাদের প্রশিক্ষণের ভিত্তি ছিল নৈতিকতার ওপর ভর করে।
কালের বিবর্তনে সেই সুদিন এখন শুধুই অতীত। পাকিস্তান আমল ও বাংলাদেশ সৃষ্টির পরেও এমন অনিয়ম-দুর্নীতি ছিল না। এখন তো ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়ছে। যেখানে হাত দেবেন সেখানেই কাদা মিলবে। সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে দুর্নীতি। যারা দুর্নীতি রোধ করবেন, তারাই জড়িয়ে পড়ছেন এবং সর্বোচ্চ মাত্রায় অভিযোগ তাদের বিরুদ্ধেই।
কালের বিবর্তনে সেই সুদিন এখন শুধুই অতীত। পাকিস্তান আমল ও বাংলাদেশ সৃষ্টির পরেও এমন অনিয়ম-দুর্নীতি ছিল না। এখন তো ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়ছে। যেখানে হাত দেবেন সেখানেই কাদা মিলবে। সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে দুর্নীতি। যারা দুর্নীতি রোধ করবেন, তারাই জড়িয়ে পড়ছেন এবং সর্বোচ্চ মাত্রায় অভিযোগ তাদের বিরুদ্ধেই।’
Advertisement
দুর্নীতির ব্যাপকতার কারণ প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ‘রাজনৈতিক প্রভাবের কারণেই দুর্নীতি চরম মাত্রায়। প্রশাসন এখন রাজনৈতিক দলের আনুকূল্যে চলে। প্রশাসনের সর্বনিম্ন থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ পর্যন্ত রাজনৈতিক দলের প্রভাব রয়েছে। সবাই নিজেকে সরকারি দলের কর্মী হিসেবে জাহির করতে মরিয়া। মূলত অন্যায় করে তা ধামাচাপা বা সুরক্ষা পেতেই আমলারা রাজনৈতিক পরিচয় ধারণ করছে।’
একটি গণতান্ত্রিক সরকারের দুই ধরনের দায়বদ্ধতা থাকে। একটি হচ্ছে নিম্নমুখী দায়বদ্ধতা। পাঁচ বছর অন্তর অন্তর নির্বাচনের মধ্য দিয়ে সরকার জনগণের কাছে জবাবদিহি করার কথা। মানুষের কল্যাণে সরকার কাজ করতে বাধ্য হয়, যদি এই নিম্নমুখী দায়বদ্ধতা গুরুত্ব পায়।
দ্বিতীয়ত, সমান্তরাল দায়বদ্ধতা। সংসদীয় কমিটির মাধ্যমে প্রশাসন তথা সরকার ব্যবস্থাকে যদি কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হয়, তাহলেও জনগণের স্বার্থে কাজ করার কথা। কিন্তু দুঃখের বিষয় হচ্ছে দুটোই ভেঙে গেছে। সরকারকে ক্ষমতায় এনেছে মাঠ প্রশাসন। নির্বাচন তারা সাজিয়ে দিয়েছে। এখন সরকার আমলাদের স্বার্থে পরিচালিত হচ্ছে। দিন যাবে সরকার আরও বেশি মাত্রায় আমলা দ্বারা প্রভাবিত হবে। প্রশাসন দুর্নীতিমুক্ত হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই।
আপনি দেখেন, প্রজাতন্ত্রের চাকর তারা। অথচ কী দৌরাত্ম্য! একজন সাংবাদিক তথ্য চাওয়ায় তাকে সাজা দিয়ে দিলেন ইউএনও। আরেকজন অভিযানে গিয়ে কীভাবে আঙুল উঁচিয়ে নিজেকে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট জাহির করলেন। এগুলো ভালো লক্ষণ নয়।
আপনি এখন যে দুর্নীতির চিত্র দেখছেন, তা পানির ওপর ভেসে থাকা বরফ খণ্ডের সামান্য অংশের মতো। বিশাল অংশ পানির নিচে। তেমনি যা প্রকাশ পাচ্ছে, তা খুবই সামান্য। দুর্নীতি সব গ্রাস করে নিচ্ছে। বলছিলেন, ড. বদিউল আলম মজুমদার।
দুর্নীতি রোধে সরকারের অক্ষমতা নিয়ে বলেন, ‘আপনি দেখেন, প্রজাতন্ত্রের চাকর তারা। অথচ কী দৌরাত্ম্য! একজন সাংবাদিক তথ্য চাওয়ায় তাকে সাজা দিয়ে দিলেন ইউএনও। আরেকজন অভিযানে গিয়ে কীভাবে আঙুল উঁচিয়ে নিজেকে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট জাহির করলেন। এগুলো ভালো লক্ষণ নয়।
এসব অন্যায় করে আমলারা পার পেয়ে যাচ্ছেন। সরকার চাইলেও কোনো ব্যবস্থা নিতে পারছে না। আমলাদের দুর্নীতি ঠেকাতে সরকারের সক্ষমতা নেই। আবার ক্ষেত্রবিশেষে সক্ষমতা থাকলেও ব্যবস্থা নিচ্ছে না। এর কারণ হচ্ছে, সরকার জানে আমলাদের কারণেই ভোটারবিহীন নির্বাচনে বারবার ক্ষমতায় আসতে পারছে। সরকারকে ক্ষমতায় টিকিয়ে রাখার প্রধানতম হাতিয়ার হচ্ছে আমলারা। প্রশাসন যা করতে চাইছে, সরকার তাই করতে দিচ্ছে।’
এএসএস/এএসএ/জেআইএম