বেগুনি-পেঁয়াজুর দাম এক টাকা। ভুনা খিচুড়ি খেলে খরচ ১৫ টাকা আর চিকেন বিরিয়ানি জন্য লাগে ২৫ টাকা। এমন সব অবিশ্বাস্য দামে খাবার বিক্রি করে সাড়া ফেলে দিয়েছে গাইবান্ধার পলাশবাড়ির এক টাকার হোটেল। অন্য হোটেলের চেয়ে সস্তা ও খাবারের মান ভালো হওয়ায় সবার মুখে প্রশংসা হোটেলটির।
Advertisement
উপজেলার পবনাপুর ইউনিয়নের পূর্ব ফরিদপুরের গড়ে উঠেছে হোটেলটি। এক টাকা দামের বিভিন্ন খাবার বিক্রি হয় বলে এ ধরনের নাম রাখা হয়েছে।
সাবেক পুলিশ সদস্য মো. জুয়েল আকন্দের ছোট বেলা থেকেই ইচ্ছে ছিল কম দামে গ্রামের দরিদ্র মানুষদের জন্য ভালো খাবারের ব্যবস্থা করা। ছোটবেলার সে ইচ্ছা বাস্তবে রূপ দিতে হোটেলটি তৈরি করেন তিনি। নিজের জমানো টাকার সঙ্গে স্থানীয় এনজিও থেকে কিছু টাকা লোন নিয়ে পারিবারিক জমিতে শুরু করেন হোটেলটি।
সরেজমিনে দেখা যায়, এক টাকার এ দোকানে যেমন আছে বসে খাবার ব্যবস্থা, তেমনি আবার কেউ চাইলে প্যাকেট করেও নিয়ে যেতে পারেন। আরামদায়ক সোফার সঙ্গে রয়েছে চেয়ার-টেবিলও। ভোজনরসিকরা তাদের ইচ্ছামত জায়গায় বসে খাবার খেতে পারেন।
Advertisement
হোটেলের রান্নার সব দায়িত্ব সামলান জুয়েল আকন্দের স্ত্রী লিপি আহামেদ। একহাতেই তিনি তৈরি করেন দোকানে বিক্রি হওয়া সব খাবার। কখনও তিনি ব্যস্ত পেঁয়াজু বানাতে, তো একটু পরেই তাকে বানাতে হয় বেগুনি।
এ দোকানে একবারে বেশি খাবার রান্না করা হয় না। টাটকা খাবার দেওয়ার জন্য অল্প করে রান্না করা হয়। সেই খাবার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে শেষ হলে আবার নতুন করে রান্না হয়। সংসার সামলানোর পাশাপাশি দোকানের জন্য দেশি-বিদেশি সব রান্না করেন লিপি।
এ দোকানের জনপ্রিয় খাবার হচ্ছে চিকেন বিরিয়ানি। এ বিরিয়ানির সঙ্গে এক পিস মুরগির মাংস, সালাদ, একপিস পেঁয়াজু আর আচার। সকাল থেকে মাঝ রাত পর্যন্ত স্বামী-স্ত্রী মিলে অক্লান্ত পরিশ্রম করে টিকিয়ে রেখেছেন হোটেলটি। প্রতি পণ্যে অল্প মুনাফা করে বেশি বিক্রির মাধ্যমে দোকানটি লাভজনক রেখেছেন তারা।
এছাড়াও এ হোটেলে কটকটি পুড়ি, আলুর পাপড়, খেজুর, মাল্টা চা, সিঙারা, সবজি রোল, মোগলাই, চালতার আচার, বড়ই আচার। সপ্তাহে ২/৩ দিন তৈরি হয় চিকেন ফ্রাই, স্যান্ডুইচ, বার্গার, চটপটি ও ফুচকা।
Advertisement
আব্দুল মালেক নামের এক ক্রেতা জানান, এ দোকান সাধারণ মানুষের জন্য আর্শিবাদ। রোজাদাররা অল্প টাকায় এখানে থেকে ইফতার কেনার সুযোগ পাচ্ছেন।
দোকানি লিপি আহামেদ বলেন, নিজেরাই খাদ্যপণ্য তৈরি করি। এ জন্য কমমূল্যে খাবার-ইফতার সামগ্রী বিক্রি করতে পারি। আমাদের সবসময় চেষ্টা থাকে মানুষকে টাটকা এবং সুস্বাদু খাবার পরিবেশন করা।
এক টাকার হোটেলের মালিক জুয়েল আকন্দ বলেন, কমমূল্যে খাবার বিক্রিতে লাভ কম হয়। কিন্তু লোকসান গুণতে হয় না। দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতির বাজারে নিজেরা একটু কম লাভ করে সাধারণ মানুষকে সহযোগিতা করা।
তিনি আরও বলেন, ব্যক্তিগত কারণে তিন বছর আগে পুলিশ কনেস্টেবলের চাকরি থেকে অব্যহতি নিয়ে সম্প্রতি এক টাকার খাবারের দোকান শুরু করেছি। আর এখান থেকে যা আয় হয় তাতেই মিটছে দুই সন্তানসহ চার সদস্যের চাহিদা।
এ বিষয়ে পবনাপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মাহবুর রহমান বলেন, জুয়েল মিয়া-লিপি বেগম দম্পতির এক টাকার হোটেল প্রতিষ্ঠা নিঃসন্দেহে একটি মহতি উদ্যোগ। এতে সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষসহ সব শ্রেণিপেশার মানুষ সুফল পাচ্ছে।
শামীম সরকার শাহীন/আরএইচ/এএসএম