দেশজুড়ে

পাবনার সেই ইউপি চেয়ারম্যান ও সচিবকে শোকজ

কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর নামে ভুয়া জন্মসনদের ঘটনায় পাবনার সুজানগর উপজেলায় আহম্মদপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান (ভারপ্রাপ্ত) ও ইউপি সচিবকে পাবনা জেলা প্রশাসন থেকে শোকজ করা হয়েছে। শুক্রবার (২২ মার্চ) রাতে শোকজ নোটিস পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন আহম্মদপুর ইউপি সচিব আওলাদ হাসান।

Advertisement

এর আগে রেজিস্ট্রার জেনারেলের নির্দেশ পাওয়ার পর বৃহস্পতিবার পাবনা জেলা প্রশাসক এক সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেন। স্থানীয় সরকার বিভাগ পাবনার উপ-পরিচালক সাইফুর রহমানকে তদন্তভার দেওয়া হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, সুজানগর উপজেলার আহম্মদপুর ইউনিয়ন থেকে ট্রুডোর নামে ইস্যু করা হয় ভুয়া জন্মনিবন্ধন সনদ। ঘটনাটি জানাজানি হলে তা টক অব দ্যা কান্ট্রিতে পরিণত হয়। এ ঘটনায় সরকারের রেজিস্ট্রেশন জেনারেলের কার্যালয় থেকে জেলা প্রশাসনকে তদন্ত কমিটি করে ৫ কার্যদিবসের মধ্যে রিপোর্ট দিতে বলা হয়। বৃহস্পতিবার (২১ মার্চ) সকাল পর্যন্ত সার্ভারে জন্মসনদটি ছিল। বিষয়টি জানাজানির পর বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে সার্ভারে জন্মসনদটি আর পাওয়া যায়নি।

জানা গেছে, আহম্মদপুর ইউনিয়ন পরিষদ থেকে যে জন্মনিবন্ধন সনদ দেওয়া হয়েছে তাতে দেখা গেছে, নাম জাস্টিন ট্রুডো, পিতা- পিয়েরে ট্রুডো, মাতা- মার্গারেট ট্রডো। তিনি কানাডার বর্তমান প্রধানমন্ত্রী। এই প্রধানমন্ত্রীকেই জন্মসূত্রে নাগরিক হিসেবে জন্মনিবন্ধন সনদ দেওয়া হয়েছে আহম্মদপুর ইউনিয়ন পরিষদ থেকে।

Advertisement

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত বছরের শেষের দিকে আহম্মদপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কামাল হোসেন মিয়া মারা যান। এরপর থেকে আব্দুর রউফ মোল্লা নামে এক ইউপি সদস্য (মেম্বার) ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন। কিন্তু ইউনিয়নের নানা কাজকর্ম ইউনিয়ন পরিষদের সচিব আওলাদ হাসানের হাতেই থাকে। সচিবের তদারকিতে পরিষদের চুক্তিভিত্তিক কম্পিউটার অপারেটর নিলয় পারভেজ ইমন টাকার বিনিময়ে সেবা গ্রহিতাদের কাজ করে দিতেন। ইমন কম্পিউটার অপারেটর হিসেবে দায়িত্ব পালন করলেও জন্ম নিবন্ধনসহ সংশ্লিষ্ট গুরুত্বপূর্ণ সেবার ক্ষেত্রে ওটিপি নম্বর সচিবের কাছে থাকে।

আরও জানা গেছে, জাস্টিন ট্রুডোর নামে যে জন্মসনদ দেওয়া হয়েছে সেটির প্রিন্ট দেওয়া হয়েছে রাত ৯টায়। কাজেই ওই সময় ওটিপি নম্বর সচিবেরই পাওয়ার কথা। এ সময় চুক্তিভিত্তিক কম্পিউটার অপারেটর নিলয় পারভেজ ইমনের ওটিপি পাওয়ার কথা নয়।

এ বিষয়ে কম্পিউটার অপারেটর নিলয় পারভেজ ইমনের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করলে তার মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া গেছে।

তবে ইউপি সচিব আওলাদ হাসান বলেন, ‘আমি এসব ঘটনায় কিছুই জানি না। সার্ভারের ইউজার নাম ও পাসওয়ার্ড আমার কাছে থাকলেও নিলয় হয়তো কোনো সময় জেনে গেছে। আমার অগোচরে সে ওটিপি কোড নিয়ে এসব করেছে। এই ঘটনায় আমি দায়ী নই।’ সচিব বলেন, আমি এ ঘটনায় থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছি।

Advertisement

পাবনা জেলা প্রশাসক মু. আসাদুজ্জামান বলেন, রেজিস্ট্রার জেনারেলের নির্দেশ পাওয়ার পর গত বৃহস্পতিবার দুপুরে এক সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। স্থানীয় সরকার বিভাগ পাবনার উপ-পরিচালক সাইফুর রহমানকে ঘটনা তদন্ত করে তিন কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তদন্তের পর দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো পেয়েছেন বাংলাদেশি জন্মসনদ। সেই জন্মসনদের কাগজ বলছে তিনি জন্মসূত্রে পাবনা জেলার নাগরিক। পাবনার সুজানগর উপজেলার আহম্মদপুর ইউনিয়ন পরিষদ থেকে তার নামে ইস্যু করা ভুয়া জন্মসনদ থেকে এই তথ্য বৃহস্পতিবার জানাজানি হয়। তারপর থেকে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।

ইউনিয়ন পরিষদের দেওয়া জন্মসনদে দেখা গেছে, জন্মসনদটি ইস্যু করার তারিখ দেখানো হয়েছে ২০০৭ সালের ১ জানুয়ারি। যেখানে নিবন্ধিত ব্যক্তির নাম হিসেবে রয়েছে জাস্টিন ট্রুডো, পিতা পিয়েরে ট্রুডো, মাতা মার্গারেট ট্রুডো। জন্ম তারিখ রয়েছে ২৫ ডিসেম্বর, ১৯৭১। জন্ম সনদের রেজিস্ট্রেশন নম্বর দেওয়া হয়েছে ১৯৭১৭৬১৮৩১৭০৩৫৫০৯।

আমিন ইসলাম জুয়েল/এফএ/এমএস