মাঠের পর মাঠ সরিষা ক্ষেত। মধু চাষিরাও ব্যস্ত ক্ষেত থেকে মধু সংগ্রহে। বরিশাল জেলার বাবুগঞ্জ উপজেলার প্রায় সব ফসলের মাঠেই দেখা গেছে এমন চিত্র। এসব মাঠ থেকে মধু চাষিরা খাঁচা পদ্ধতিতে মৌমাছির মাধ্যমে মধু সংগ্রহে ব্যাপক সাড়া ফেলেছেন। এতে অর্থনৈতিক ভাবে লাভবান হচ্ছে সরিষা চাষি ও মৌচাষি দুজনেই।
Advertisement
কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, সরিষা ক্ষেতের পাশে মধু চাষের কারণে পরাগায়ন ঘটছে ফসলের। এতে সরিষারও ফলন ২৫ শতাংশ বেড়ে যায়। সরিষা ক্ষেত থেকে মধু সংগ্রহ লাভজনক ব্যবসা হিসেবে দেখা দিয়েছে। মধু বিক্রি করে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হচ্ছেন তারা।
জেলার বাবুগঞ্জ উপজেলার রাকুদিয়া গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, এ বছরই জেলায় প্রথম এত বড় পরিসরে সরিষা আবাদ হওয়ায় বাণিজ্যিকভাবে মধু চাষ করছেন এক খামারি। টাঙ্গাইল জেলা থেকে খবর পেয়ে সরিষা ক্ষেতের পাশে করেছেন মধু সংগ্রহের খামার।
টাঙ্গাইল থেকে আসা মধু চাষি মো. আয়নাল হক জাগো নিউজকে বলেন, ‘১০৫টি বাক্সে ৮ শতাধিক চাক বসিয়েছি। এখান থেকে এরই মধ্যে ১৫ দিনে ৭ মণ মধু আহরণ করেছি। বাকি সময়টাতে আরও ৫ মণ মধু আহরণের আশা করছি। প্রতি কেজি মধু ৫০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছি। স্থানীয়রা ও আশপাশের এলাকার লোকজন সরাসরি ক্ষেত থেকে মধু কিনে নিচ্ছেন। স্থানীয় বাসিন্দাদের চাহিদা মিটিয়ে এই মধু দেশের বিভিন্ন জায়গায় পাঠাচ্ছি।’
Advertisement
মধু কিনতে আসা সাব্বির বলেন, ‘এভাবে কখনো মধু আহরণ দেখিনি। সরাসরি মৌচাক থেকে মধু সংগ্রহ করে মেশিনের মাধ্যমে তা প্রস্তুত করে দিচ্ছেন। এখানে ভেজালের কোনো সুযোগ নেই। তাই নিজের চোখে দেখে মধু কিনে নিয়ে যাচ্ছি।’
আরও পড়ুন
শরীয়তপুরে বাড়ছে রবি ফসল ‘কালোজিরা’র চাষ রামগড়ে সূর্যমুখী চাষে ২০ কৃষকের সফলতাআরেক ক্রেতা জুবায়ের বলেন, ‘সরাসরি ক্ষেত থেকে সংগ্রহ করা মধু নিচ্ছি। এখানে কোনো ভেজাল করার মতো কিছু নেই। সবকিছু চোখের সামনেই দেখছি। তাই নির্দ্বিধায় কিনে নিচ্ছি। এছাড়া দামও অন্যান্য জায়গার তুলনায় কম।’
উপজেলার রাকুদিয়া গ্রামের কৃষক এনায়েত করিম বলেন, ‘শুধু এই গ্রাম নয়, উপজেলার সব গ্রামেই শত একর জমিতে হলুদের সমারোহ। আবাদ ভালো দেখে মাঠের পর মাঠ সরিষার আবাদ। কোনো মাঠে হলুদ ফুলে ভরে গেছে আবার কোনোটায় সরিষার দানা চলে এসেছে। ক্ষেতের পাশেই মধু চাষের কারণে প্রতিবারের চেয়ে এবার ২০ শতাংশ ফলন বেশি হয়েছে।’
Advertisement
আরেক কৃষক টিটু বলেন, ‘এবার পুরো মাঠজুড়ে বিনা সরিষা-১১ আবাদ করেছেন। প্রতি বছর এর আবাদ সীমিত হলেও এ বছর বিনা সরিষা-১১ এর ফলন আশা জাগিয়েছে লাভবান হওয়ার। তাছাড়া এ বছর ক্ষেতের পাশেই মধু চাষ শুরু করায় ফলন বৃদ্ধি পেয়েছে। অল্প জীবনকালের এই সরিষা আবাদে খুশি কৃষকরা।’
বরিশাল বিনা উপকেন্দ্রের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ড. ছয়েমা খাতুন জাগো নিউজকে বলেন, ‘মৌমাছি বসন্তের সময়টুকুতে ফুলের মৌ-রস সংগ্রহ করতে গিয়ে পরাগায়ন ঘটায়। এতে আবাদ যেমন বেড়েছে, তেমনই অর্থনৈতিকভাবে দুজনই লাভবান হচ্ছেন। জেলায় এ বছর ৫০০ হেক্টর জমিতে বিনা সরিষা-১১ এর আবাদ হয়েছে। প্রতি একরে ১৫-১৬ মণ সরিষা পাওয়ার সম্ভাবনা আছে।
এসইউ/এমএস