জাতীয়

‘পানিবিষয়ক সমস্যার সমাধান না হলে দেশ মহাবিপর্যয়ে পড়বে’

পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য রক্ষা এবং খাবার পানি সরবরাহ, নৌ চলাচল, কৃষি ও শিল্প উৎপাদনে নদীর গুরুত্ব অপরিসীম। এদেশে রয়েছে ছোট-বড় ৪০৫টি নদী। মানুষের অত্যাচারে নদীগুলো আজ মৃতপ্রায়। দখল, ভরাট, আর বর্জ্যে নদীগুলো এখন নিস্তব্ধ স্রোতহীন এবং দূষণের ভারে পানি ব্যবহারের অযোগ্য এবং জীববৈচিত্র্য শূন্য হয়ে পড়ছে। পানি বিষয়ক এসব সমস্যার সমাধান না হলে দেশ মহাবিপর্যয়ে পড়বে।

Advertisement

শুক্রবার (২২ মার্চ) বিকেলে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের মিলনায়তনে পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা) ও বাংলাদেশ নিরাপদ পানি আন্দোলন (বানিপা) আয়োজিত ‘শান্তি, প্রাণ-প্রকৃতি ও পরিবেশ রক্ষায় পানি: প্রেক্ষিত বাংলাদেশ’ শীর্ষক আলোচনা সভার বক্তারা এসব কথা বলেন।

পবার চেয়ারম্যান আবু নাসের খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মেসবাহ উদ্দিন আহমেদ সুমন এবং মূলপ্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বানিপার সাধারণ সম্পাদক এম এ ওয়াহেদ। আলোচনায় অংশ নেন পবার কার্যকরী সভাপতি জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী, বাংলাদেশ নিরাপদ পানি আন্দোলনের সভাপতি প্রকৌশলী মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন, নাসফের সাধারণ সম্পাদক ও পবার সম্পাদক মো. তৈয়ব আলী।

মূলপ্রবন্ধ উপস্থাপন করে বানিপার সাধারণ সম্পাদক এম এ ওয়াহেদ বলেন, বছরে ১ দশমিক ২ থেকে ২ দশমিক ৪ বিলিয়ন টন পলি নদীবাহিত হয়ে বাংলাদেশে ঢোকে। পলি পড়ে নদীগুলোর তলদেশ ক্রমন্বয়ে ভরাট হয়ে যাচ্ছে। এছাড়াও নদীগুলো দখল, ভরাট ও দূষণের শিকার। ফলে নদীর পানি ধারণক্ষমতা প্রতিনিয়ত কমে যাচ্ছে, নৌ চলাচল বিঘ্নিত হচ্ছে এবং নদীর পানি ব্যবহারের অনুপযোগী পড়ছে। ভাটির দেশ হিসেবে অভিন্ন নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা না পাওয়ায় আমাদের দেশে পানি সংকট আরও ঘনীভূত হচ্ছে এবং নৌ চলাচল, সেচব্যবস্থা ও জীববৈচিত্র্য হুমকর মুখে পড়ছে।

Advertisement

তিনি বলেন, নদীতে পানি কমে যাওয়া বা না থাকায় ভূগর্ভস্থ পানির ওপর নির্ভরশীলতা ক্রমেই বেড়ে যাচ্ছে। ভূগর্ভস্থ পানি কমে যাওয়া এবং নদী হারিয়ে যাওয়ার কারণে ভূ-উপরস্থ কিংবা ভূগর্ভস্থ পানির স্তর প্রতিনিয়ত নিচে নেমে যাচ্ছে।

বাংলাদেশ বর্ষা মৌসুমে ব্যাপক পানিতে তলিয়ে যাওয়া এবং শুষ্ক মৌসুমে পানি ঘাটতির অভিন্ন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করছে। শুষ্ক মৌসুমে কৃষিকাজে ভূ-উপরিস্থ পানি মাধ্যমে পরিচালিত সেচব্যবস্থা ব্যাহত হচ্ছে। ২০২০-২১ সেচ মৌসুমে সারাদেশে সেচকৃত জমির পরিমাণ ৫৬ দশমিক ৫৪ লাখ হেক্টর। ফলে বিপুল জনগোষ্ঠীর খাদ্যচাহিদা পূরণে সেচকাজে ভূগর্ভস্থ পানি ব্যবহার করতে হচ্ছে।

অন্য বক্তারা বলেন, দেশের প্রায় ১২ শতাংশ মানুষের আবাস রাজধানী ঢাকায়। যে সংখ্যা প্রতিদিনই বাড়ছে। জনসংখ্যার সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাড়ছে পানির চাহিদা। আর ঢাকা ওয়াসা সেই চাহিদা মেটাতে ভূগর্ভস্থ পানিই বেশি কাজে লাগাচ্ছে। ফলে প্রতিনিয়ত ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নামছে। দ্রুততম সময়ের মধ্যে রাজধানীতে ভূগর্ভস্থ পানির উৎসের ওপর এই নির্ভরতা ৩০ শতাংশে নামিয়ে আনতে না পারলে পরিস্থিতি জটিল আকার ধারণ করবে।

এসময় আলোচনা সভায় ছায়াতল বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা সোহেল রানা, পরিবেশকর্মী সৈয়দা অনন্যা রহমান, আবু মোকারাম সর্দার, বিশিষ্ট গাইনোকোলজিস্ট প্রফেসর ডা. বিলকিছ বেগম চৌধুরী আলোচনা সভায় তাদের বক্তব্য তুলে ধরেন। অনুষ্ঠানে গণমাধ্যমকর্মীদের পাশাপাশি পবা ও গ্রিন ফোর্সের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

Advertisement

আরএএস/বিএ