অর্থনীতি

তরুণদের পছন্দ সুতি ও সিকোয়েন্স পাঞ্জাবি

সুতি অথবা সিল্কের কাপড়ে পুতির কাজ। কখনো পাঞ্জাবিজুড়ে, কখনো বুকে ও হাতায়— এ ধরনের পাঞ্জাবিকে বলা হচ্ছে সিকোয়েন্স। নতুন ধাঁচের (ব্র্যান্ড নিউ) এ পোশাকে মজেছেন তরুণরা। এছাড়া গরমের কথা ভেবে অনেকেই কিনছেন সুতির কাপড়ের ওপর প্রিন্টের কাজ করা পাঞ্জাবিতে। বুকে ও হাতে সামান্য এমব্রয়ডারি করা পাঞ্জাবিও চলছে বেশ। ১৫০০ টাকা থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ৮ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে এসব পাঞ্জাবি।

Advertisement

শুক্রবার (২২ মার্চ) মিরপুর ১০, ২, ১ ও ১২ নম্বরের বিভিন্ন মার্কেট ও শোরুম ঘুরে ঈদবাজারের এ চিত্র দেখা গেছে। এছাড়া দাম নিয়ে বরাবরের মতো ক্রেতাদের অভিযোগের শেষ নেই। দাম নিয়ে বিক্রেতাদের পাল্টা যুক্তিও দেখা গেছে। পাঞ্জাবি ছাড়াও এক রঙের বা প্রিন্টের শার্ট বিক্রি হচ্ছে বেশি।

মিরপুর ১০ নম্বরের এফএস টাওয়ার শপিংমলটি চলতি মাসেই উদ্বোধন হয়েছে। সেখানে রয়েছে একাধিক ব্র্যান্ড শপ। তবে, শুক্রবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত শপিংমলটিতে আশানুরূপ ক্রেতার দেখা মেলেনি। শপিংমলটির তৃতীয় তলায় পাঞ্জাবি ডিলাক্স নামের একটি দোকানে দুইজন বিক্রেতাকে পাঞ্জাবি গোছাতে দেখা যায়।

দোকানটির স্বত্বাধিকারী সবুজ হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, নতুন মার্কেট ক্রেতা আসতে দেরি হবে। এছাড়া মাসের শেষ, আশা করছি আগামী মাসের শুরুতে ক্রেতা বাড়বে।

Advertisement

ঈদে পাঞ্জাবির বিক্রি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, চুমকি, স্টোন, পুতির কাজ বসানো পাঞ্জাবি সিকোয়েন্স। দেখতে আকর্ষণীয় ও পরতে আরাম এ পাঞ্জাবিগুলোই এবার চলছে বেশ। গরমের কথা মাথায় রেখে তরুণরা সেমি লং পাঞ্জাবি কিনছেন। ১৫০০ টাকা থেকে শুরু করে ১৮০০ টাকার সিকোয়েন্স পাঞ্জাবি পাওয়া যাচ্ছে দোকানটিতে। এছাড়া ইন্ডি কটন, রাজশাহী সিল্ক পাঞ্জাবি বিক্রি হচ্ছে ৩৬০০-৪২০০ টাকায়। আর বাচ্চাদের জন্য সাধারণ কাজের পাঞ্জাবি নিচ্ছেন অভিভাবকরা। এক্ষেত্রে সুতি, সফট লিলেন কাপড়ে এমব্রয়ডারি ও ব্লকের কাজের পাঞ্জাবি ৫০০-১২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।আরও পড়ুনঈদের পোশাকে বৈশাখের ছাপ, ভালো ব্যবসার আশায় দেশি ব্র্যান্ডগুলোব্যস্ততা বাড়লেও বাটিকের গ্রামে মূল্যবৃদ্ধির বাগড়ানেই নতুন ট্রেন্ডি পোশাক, আফগান-নায়রায় ঝুঁকছে ক্রেতারা

মিরপুর ১০ ও ২ নম্বরের ফ্যাশন হাউজগুলোতে ঘুরে দেখা যায়, সিকোয়েন্স ও সুতি কাপড়ের পাঞ্জাবির সংগ্রহ। মিলান ব্র্যান্ডের রিজান আহম্মদে বলেন, আমাদের এখানে রেমি কটনে প্রিন্ট, বুকে ও হাতে কাজের পাঞ্জাবিই বিক্রি হচ্ছে বেশি। ১৭০০-২০০০ হাজার টাকায় পাওয়া যাচ্ছে এসব পাঞ্জাবি। তবে থাকছে ডিসকাউন্টও।

ফ্যাশন হাউজ জেন্টল পার্কের শোরুমে দেখা যায়, স্লিম ফিট পাঞ্জাবি খুঁজছেন ক্রেতা। বুকে ও হাতে এমব্রয়ডারির কাজের পাঞ্জাবি শোরুমটিতে মিলছে ১৯০০-৩২০০ টাকায়, আর শিশুদের এক কালারের পাঞ্জাবি ১১০০-২৮০০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে।

ক্রেতাদের অভিযোগ ১৮০০-২০০০ টাকার নিচে মিলছে না যুতসই পাঞ্জাবি। যেসব পাঞ্জাবি গত বছর ১০০০-১২০০ টাকা ছিল এবার ১৮০০-২০০০ টাকা। অর্থাৎ গতবারের তুলনায় পাঞ্জাবির দাম ৫০০-১০০০ টাকা বেশি। এছাড়া শিশুদের পোশাকের দামও অস্বাভাবিক বলে অভিযোগ ক্রেতাদের।

Advertisement

মোহাম্মদপুর থেকে মিরপুর ১০ নম্বরে পাঞ্জাবি কিনতে আসা মেহেদী হাসান বলেন, দুই হাজার টাকার নিচে ভালো পাঞ্জানি নেই। ভালো ফ্যাশন হাউজগুলোতে পাঞ্জাবির দাম শুরু হচ্ছে ২২০০ টাকার পরে। দাম গতবারের তুলনায় ৫০০- ৮০০ টাকা বেশি। তবে, এটাও ঠিক এবার জিনিসপত্রের দামও বাড়তি।

সুতির কাপড়ের পাঞ্জাবি কিনেছেন মিরপুর ১ নম্বরের বাসিন্দা সোহন রহমান। বুকে ও হাতে সামান্য এমব্রয়ডারির কাজ থাকা পাঞ্জাবিটির দাম পড়েছে ২৩০০ টাকা।আরও পড়ুনমৌচাক-আয়েশা-ফরচুনে বেড়েছে ক্রেতার আনাগোনারমজানের প্রথম শুক্রবারেই মুখরিত বউবাজার

তিনি বলেন, দাম তো চড়া সব জিনিসের। তবে এবার পাঞ্জাবির দামটা অনেক বেশি। পাঞ্জাবি ও পায়জামা কিনতে তিন হাজার টাকা লেগেছে।

এসডি ফ্যাশনের বিক্রয়কর্মী শুভ বলেন, সিকোয়েন্স পাঞ্জাবি প্রাইস ট্যাগে ৩২০০ টাকা। কিন্তু আমরা ১৮০০ টাকায় বিক্রি করছি। ক্রেতাকে একদাম বলছি। বাড়তি দাম প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সুতা থেকে শুরু করে সব কিছুর দামই বাড়তি। এখনো পাঞ্জাবি ক্রেতাদের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যেই আছে।

মেয়েদের পছন্দ টু-পিস, থ্রি-পিস, লোনবাজার ঘুরে দেখা গেছে, মেয়েদের সুতি ও জর্জেট থ্রি-পিস, টু-পিস, লোন জাতীয় পোশাক বেশি কিনছেন। কাশ্মীরি লোন, গুজরাটি, আলিয়া কাট, নায়রা কাট, আফগান ড্রেস বিক্রি হচ্ছে বেশ। সুতির থ্রি-পিস দেড় হাজার টাকা থেকে ৬ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। টু-পিস ও ওয়ান-পিস ১৮০০ টাকা থেকে ৪ হাজার টাকায়, জর্জেট থ্রি-পিস সাড়ে ৩ হাজার থেকে ৪ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। লেহেঙ্গা ৩ হাজার থেকে ৬ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

মিরপুর ১০ নম্বরের জেন্টল পার্কের বিক্রয়কর্মী শামীম হাসান বলেন, ওয়ান-পিস, টু-পিস ও কাশ্মীরি লোন এবার চলছে বেশি। ১২৯০ টাকা থেকে শুরু করে ৩৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে এসব পোশাক।

জুতার বাজার ঘুরে দেখা গেছে ক্রেতা খরা। বিক্রেতারা বলছেন, ক্রেতারা জুতা কিনেন সবার শেষে। পাঞ্জাবি, শার্ট কেনার পর জুতা বিক্রি বাড়ে। সেই হিসেবে আগামী মাসের প্রথম সপ্তাহে বাড়তে পারে জুতার ক্রেতা।

বাজারে লোফার মডেলের জুতা ৮০০-১৫০০ টাকা, নাগরা ও অন্যান্য স্যান্ডেল ৬০০-১৮০০, কেডস, স্নিকার ১২০০-২০০০ টাকা আর বাচ্চাদের বিভিন্ন জুতা ৬০০-১২০০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে।

এসএম/এমএএইচ/এএসএম