যত বেশি ফসিল ফুয়েল পোড়ানো হয়, কার্বন নিঃসরণ ততই বাড়ে। এ কারণে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ফসিল ফুয়েল অর্থাৎ কয়লা, পেট্রোল, ডিজেল পুড়িয়ে যানবাহন চলাচলে রয়েছে নিষেধাজ্ঞা। যেমন, স্কটল্যান্ডের গ্লাসগো শহরে ফসিল ফুয়েলে চলা সব ধরনের যানবাহন নিষিদ্ধ। এর বদলে সেখানে চলে ইলেকট্রিক যানবাহন।
Advertisement
পরিবেশ দূষণ থেকে নগরবাসীকে রক্ষা করতেই এমন উদ্যোগ। দেরিতে হলেও ঢাকায় পরিবেশবান্ধব এমন ইলেকট্রিক পরিবহন চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ পরীক্ষামূলকভাবে চার্জিং স্টেশন স্থাপন করবে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সড়ক পরিবহন এবং মহাসড়ক বিভাগ, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ), পরিবেশ অধিদপ্তর এবং বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন করপোরেশন (বিআরটিসি)।
চলতি সময় থেকে ২০২৬ সালের জুন মাসের মধ্যে ঢাকা শহরে বাস্তবায়ন করা হবে এ প্রকল্প।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, প্রাথমিকভাবে প্রকল্পের আওতায় নগরীর কোথায় চার্জিং স্টেশন স্থাপন করা যায়, চার্জিং স্টেশনে কী ধরনের ব্যাটারি প্রয়োজন হয় এবং ব্যাটারির পুনঃব্যবহার ও বিনষ্ট করার প্ল্যান্ট কীভাবে স্থাপন করা যায়, সেটি ঠিক করা হবে। এছাড়া যেসব ব্যক্তি মালিকানার ইলেকট্রিক যানবাহন আছে, তারা এসব চার্জিং স্টেশন ব্যবহার করতে পারবে প্রাথমিকভাবে। পরে সরকারি খরচে প্রকল্প গ্রহণ করা হবে।
Advertisement
দেশের প্রথম ইলেকট্রিক চার্জিং স্টেশন, ফাইল ছবি
এজন্য প্রাথমিকভাবে সমীক্ষার উদ্যোগ নেবে সরকারের তিন বিভাগ। ঢাকা শহরে কতটি চার্জিং স্টেশন স্থাপন করা যায়, কী পরিমাণ বাস লাগবে, রুট কোন দিক দিয়ে যাবে- সার্বিক বিষয়ে পরিকল্পনা গ্রহণের জন্য ‘এনাবলিং ইলেকট্রিক ভেহিকল অ্যাডাপটেশন ইন ফ্রেমওয়ার্ক অব সাসটেইনেবল এনার্জি বেজড ট্রান্সপোর্টেশন’ শীর্ষক প্রকল্প নেওয়া হচ্ছে। এটি মূলত পাইলট প্রকল্প। ২২ কোটি টাকা ব্যয়ে তিন বছরের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হবে। মোট ব্যয়ের মধ্যে অনুদান হিসেবে জিইএফ (গ্লোবাল এনভায়রনমেন্ট ফ্যাসিলিটি) দেবে ১৮ কোটি ৩৬ লাখ টাকা এবং ইউএনডিপি অনুদান দেবে ১ কোটি টাকা। বাকি টাকা দেওয়া হবে সরকারি কোষাগার থেকে।
এ বিষয়ে বিআরটিএ চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদ মজুমদার জাগো নিউজকে বলেন, নগরীতে কীভাবে পরিবেশবান্ধব পরিবহন চালু করা যায় সেটি দেখার জন্য আমরা প্রকল্প নিচ্ছি। যখন বড় পরিসরে চালু হবে, তখন ঢাকায় অনেকাংশে পরিবেশ দূষণ কমে যাবে। বৈদেশিক অনুদানে পরিবহন ব্যবস্থাপনায় এটি সময়োপযোগী কাজ।
প্রকল্পের উদ্দেশ্যব্যাটারি-রিসাইক্লিং প্ল্যান্ট নির্মাণ, স্থানীয় এবং আন্তর্জাতিক এক্সপোজার প্রশিক্ষণের মাধ্যমে বিআরটিসির ড্রাইভার এবং টেকনিশিয়ানদের দক্ষতা বৃদ্ধি করা।
Advertisement
আরও পড়ুন
বৈদ্যুতিক বাইকে আগুন লাগলে তাৎক্ষণিক যা করবেন বৈদ্যুতিক গাড়ি আনলো শাওমিপ্রকল্পটি গ্রহণ প্রসঙ্গে সংশ্লিষ্টদের দাবি, বৈদ্যুতিক গাড়ি ব্যবহারের সুবিধা বৃদ্ধির লক্ষ্যে চার্জিং স্টেশন স্থাপনসহ আনুষঙ্গিক কাজের জন্য প্রকল্পটি নেওয়া হচ্ছে।
প্রকল্পের প্রধান কার্যক্রমস্থানীয় পরামর্শক খাতে ২ কোটি ৩০ লাখ, বৈদেশিক পরামর্শক খাতে ৩ কোটি ২৪ লাখ, কোনো কোম্পানি বা ফার্মের পরামর্শক খাতে ৩ কোটি ৭৬ লাখ টাকা ব্যয় করা হবে। এছাড়া নানান ধরনের সেমিনার ও কর্মশালায় ৭৪ লাখ টাকা ব্যয় করা হবে। পরীক্ষার জন্য চারটি ৩০০ থেকে ৪০০ কেভি চার্জার কেনায় ৪ কোটি ৭৪ লাখ টাকা ব্যয় করা হবে। অত্যাধুনিক রিসাইক্লিং ব্যাটারি কেনায় ১ কোটি ৭৫ লাখ টাকা এবং তিনটি সোলার হাইব্রিড চার্জিং সেটআপ স্থাপনে ১ কোটি ৫৪ লাখ টাকা ব্যয় করা হবে।
ভারতের একটি ইলেকট্রিক চার্জিং স্টেশন, ফাইল ছবি
এরই মধ্যে প্রকল্পের প্রস্তাবনা পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়েছে। প্রস্তাবিত প্রকল্প নিয়ে কিছু মতামত দিয়েছে কমিশন।
পরিকল্পনা কমিশন জানায়, প্রকল্পের আওতায় ৪৬৮ জনমাস (জনবলের মোট কর্মঘণ্টা) জনবল বিভিন্ন ক্যাটাগরির আউটসোর্সিংয়ের জন্য জিওবি খাতে ৯৬ লাখ ১১ হাজার টাকার প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রকল্পের জনবল কাঠামো অর্থ বিভাগের জনবল কমিটির সুপারিশের আলোকে নির্ধারণের নিয়ম থাকলেও আলোচ্য প্রকল্পে অর্থ বিভাগের জনবল কমিটির সুপারিশ গ্রহণ করা হয়নি।
আরও পড়ুন
চীনের দখলে বৈদ্যুতিক গাড়ির বাজার বিশ্বে বৈদ্যুতিক গাড়ির বিক্রি বেড়েছে ৩১ শতাংশঅর্থ বিভাগের জনবল কমিটির সুপারিশের আলোকে আউটসোর্সিংসহ সব ধরনের জনবলের পরিমাণ ও ব্যয় নির্ধারণ করতে হবে। প্রকল্পে জুনিয়র পরামর্শক সেবা খাতে ৩৬ জনমাসের জন্য ৩৬ লাখ টাকা, স্থানীয় পরামর্শক সেবা খাতে ৯২ জনমাসের জন্য ২ কোটি ৩০ লাখ ৮০ হাজার টাকা ব্যয় হবে। বৈদেশিক পরামর্শক সেবা খাতে ব্যক্তি পরামর্শক হিসেবে ৪২ জনমাসের জন্য ৩ কোটি ২৪ লাখ ৮৪ হাজার টাকা এবং পরামর্শক সেবা (ফার্ম/কোম্পানি) খাতে ৪০ জনমাসের জন্য ৩ কোটি ৭৬ লাখ ৩২ হাজার টাকার প্রস্তাব করা হয়েছে।
বিআরটিসি বাসের জন্য ৪ কোটি ৭৪ লাখ ২৮ হাজার টাকা ব্যয়ে ৪টি ইভি চার্জিং (৩০০-৫০০ কিলোওয়াট) স্টেশন স্থাপনের প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রস্তাবিত চার্জিং স্টেশনগুলো কোন কোন ভৌগোলিক অবস্থানে স্থাপন করা হবে এ বিষয়ে সভায় আলোচনা করা যেতে পারে। এতে নিরবচ্ছিন্ন সেবা নেটওয়ার্ক কতদূর ব্যাসার্ধে পরিব্যপ্ত হবে তা নিয়েও আলোচনা প্রয়োজন।
এছাড়া চার্জিং স্টেশনগুলোর সঙ্গে বৈদ্যুতিক সংশ্লিষ্টতা থাকায় বিদ্যুৎ বিভাগের অনাপত্তি গ্রহণ করা হয়েছে কি না তা সভায় আলোচনা হওয়া প্রয়োজন। প্রকল্পের আওতায় ১ কোটি ৭৫ লাখ ২৭ হাজার টাকা ব্যয়ে ব্যাটারির পুনঃব্যবহার ও বিনষ্ট করার একটি প্ল্যান্ট স্থাপনের প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রস্তাবিত ব্যাটারির পুনঃব্যবহার ও বিনষ্ট করার প্ল্যান্টটি কোন স্থানে স্থাপন করা হবে এ বিষয়ে সভায় আলোচনা করা যেতে পারে। এছাড়া ব্যাটারির পুনঃব্যবহার ও বিনষ্ট করার প্ল্যান্টটি কোন প্রক্রিয়ায় স্থাপন করা হবে তা জানাতে বলেছে কমিশন। মেয়াদোত্তীর্ণ ইলেকট্রনিক সরঞ্জামাদি-ব্যাটারি কীভাবে বিনষ্ট করা হবে তা সভায় আলোচনা করা যেতে পারে।
বৈদেশিক প্রশিক্ষণ ও স্থানীয় প্রশিক্ষণের ক্ষেত্র, মেয়াদ, প্রশিক্ষণার্থী নির্বাচন পদ্ধতি, সংখ্যা, বাজেট বিভাজন ব্যয়ের বিষয়ে সভায় আলোচনা করা যেতে পারে। প্রকল্পের আওতায় ১ কোটি ৫৪ লাখ ৬৫ হাজার টাকা ব্যয়ে ৩টি (২ থেকে ৩ চাকার যানবাহন) চার্জিং স্টেশন সেটআপের প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রস্তাবিত প্রকল্পে বৈদ্যুতিক সংশ্লিষ্টতা থাকায় বিদ্যুৎ বিভাগের অনাপত্তি গ্রহণ করা হয়েছে কি না, সে বিষয়ে সভায় আলোচনা করা যেতে পারে।
এ বিষয়ে পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সড়ক পরিবহন উইংয়ের যুগ্ম প্রধান নিখিল কুমার দাস জাগো নিউজকে বলেন, প্রকল্পের আওতায় স্বল্প পরিসরে পরিবেশবান্ধব বা ইলেকট্রিক বাস চালু হবে। তবে এ প্রকল্পের আওতায় শুধু চার্জিং স্টেশন ও প্ল্যান্ট স্থাপনের কথা বলা হয়েছে। পরে অন্য একটি প্রকল্পের আওতায় ইলেকট্রিক বাস কেনা হবে। চার্জিং স্টেশনগুলো স্থাপন হলে কিছু বেসরকারি পরিবহন আছে, তারাও এটি ব্যবহার করতে পারবে।
এমওএস/এমএইচআর/জিকেএস