ঈদের আমেজের মধ্যেই এবার আসছে পহেলা বৈশাখ। দুই উৎসব মিলে ব্যবসায়ীরা পেয়েছেন বিক্রির বড় উপলক্ষ। এ কারণে বড় প্রস্তুতি নিয়েছে দেশি ফ্যাশন হাউজগুলো। দেশি বিভিন্ন ব্র্যান্ডের ফ্যাশন হাউজগুলোতে এবার ঈদকেন্দ্রিক ব্যবসা-বাণিজ্য পুরোদমে হবে, এমন প্রত্যাশা সংশ্লিষ্টদের। যদিও এখনো ঈদের বেচাকেনা ততটা জমে ওঠেনি, তবে দশ রোজার পর থেকে পুরোদমে ব্যবসা হবে বলে আশা করছেন সবাই। ঈদের ঠিক পরেই এবার আসছে বৈশাখ। এ কারণে ঈদের বাজারে মুসলিম ক্রেতার পাশাপাশি থাকবেন অন্যান্য ধর্মাবলম্বী ক্রেতারাও।
Advertisement
দুই উৎসব একসঙ্গে হওয়ায় এবার ঈদ ও বৈশাখকে একই সঙ্গে মাথায় রেখে বৈচিত্র্যময় ডিজাইন, নান্দনিকতা আর দেশীয় ভাবধারার পোশাকের সমারোহ রাখছে ফ্যাশন হাউজগুলো। বহু আগে থেকে ঈদে সবচেয়ে বেশি বিক্রি হলেও দ্বিতীয় বিক্রির উপলক্ষ হিসেবে বৈশাখে নতুন পোশাকের বাজার প্রতিনিয়ত বড় হচ্ছে। আর এবার দুটি উৎসব এসেছে একসঙ্গে।
ঈদকেন্দ্রিক অর্থনীতি কত হাজার কোটি টাকার, তার সঠিক পরিসংখ্যান নেই। তবে ফ্যাশন উদ্যোক্তাদের সংগঠন ফ্যাশন এন্ট্রিপ্রিনিউরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের তথ্যমতে, বর্তমানে দেশে ফ্যাশন বাজারের ব্যাপ্তি ১৫ হাজার কোটি টাকারও বেশি। এরমধ্যে ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ বিক্রি হয় রোজার ঈদেই। এছাড়া প্রায় ১০ শতাংশ বিক্রি হয় পহেলা বৈশাখে।
উদ্যোক্তারা বলছেন, ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের বড় এ উৎসবে শাড়ি, লুঙ্গি, পাঞ্জাবি, জামা, জুতা থেকে শুরু করে গাড়ির মতো বিলাসী পণ্যের ব্যবসাও চাঙা হচ্ছে। এছাড়া একশ্রেণির মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধি পাওয়ায় বছর বছর এ অর্থনীতির আকারও বড় হচ্ছে।
Advertisement
আরও পড়ুন
ধানমন্ডির ঈদ বাজারে ক্রেতাদের নজর বিদেশি পণ্যে, জমেনি কেনাকাটা শপিংমলে ক্রেতা কম, জমজমাট ফুটপাতের ঈদের বাজারএসব বিষয়ে ফ্যাশন উদ্যোক্তাদের সংগঠনটির পরিচালক এবং রঙ বাংলাদেশের কর্ণধার সৌমিক দাস জাগো নিউজকে বলেন, ঈদের সঙ্গে এবার বৈশাখ খুব বড় বেচাবিক্রির প্রত্যাশার জায়গা তৈরি করেছে। কয়েক বছর বৈশাখ রোজার মধ্যে হয়েছে, এবার সেটা ঈদের পরপর। সে কারণে ভালো বেচাকেনা হবে। এখন বাংলা নববর্ষে বড় ক্রেতাশ্রেণি তৈরি হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, পুরো বছরে সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয় রোজার ঈদে। এরপর বৈশাখ। যে কারণে এখন পর্যন্ত সারাদেশ থেকে যে পরিমাণ চাহিদা এসেছে তাতে বাজার ভালো হবে মনে হচ্ছে। কারণ বিক্রি এখনো না জমলেও শোরুমে ক্রেতারা আসছেন, দেখছেন শুরু থেকেই। আমাদের প্রস্তুতি এবার অন্যান্য বছরের তুলনায় ভালো।
ঈদকেন্দ্রিক অর্থনীতির বড় অংশজুড়ে পোশাকেরই রাজত্ব। রোজা শুরুর পর থেকে ধীরে ধীরে ঈদের বিক্রি বাড়ে। শেষ দুই সপ্তাহ ধরে বিক্রেতারা ক্রেতাদের ভিড়ে দম ফেলার ফুরসত পান না।
Advertisement
এবার ঈদে পোশাকের বৈচিত্র্য কেমন, এ বিষয়ে একাধিক ফ্যাশন হাউজের কর্মকর্তা বলছেন, এবার এমন ধরনের পোশাক বেশি করা হচ্ছে যেটা ঈদ ও বৈশাখ দুই উৎসবের জন্যই মানানসই। বিশেষ করে পুরো পরিবারের জন্য একই ধরনের পোশাকের (ফ্যামিলি সিরিজ) পসরা এবার বেশি। এছাড়া পোশাকে যে ধরনের ভাবধারা, তার মধ্যে ঈদ-বৈশাখের মিশ্রণ রাখা হয়েছে। যাতে কেউ চাইলে একই পোশাক ঈদ ও বৈশাখে পরতে পারেন।
আরও পড়ুন
মৌচাক-আয়েশা-ফরচুনে বেড়েছে ক্রেতার আনাগোনা ঈদ বাজারে কেমন আছেন বঙ্গবাজারের ব্যবসায়ীরাউৎসবে এখন রাজধানীর ক্রেতাদের পছন্দের তালিকায় দেশীয় পোশাকের ব্র্যান্ড ও ফ্যাশন হাউজগুলো শীর্ষস্থানে উঠে এসেছে। ঢাকার বাইরে চট্টগ্রাম, সিলেট, বগুড়া, রাজশাহী, খুলনা, বরিশালের মতো বড় শহরগুলোতেও একই অবস্থা। সারা দেশে প্রায় ছয় হাজার ফ্যাশন হাউজ ও বুটিক শপ রয়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
এদিকে সরেজমিনে বেইলি রোড ও এলিফ্যান্ট রোডের শোরুমগুলোতে দেখা গেছে, ঈদের আমেজ পুরোপুরি শুরু না হলেও ক্রেতা উপস্থিতি বেড়েছে। ইফতার ছাড়া দুপুরের পরে অন্য সময় দোকানগুলোতে ক্রেতাদের কমবেশি ভিড় থাকছে। অনেকেই দেখছেন কী ধরনের পোশাকের চল এবার, কেউ আবার আগেভাগেই কিনে ফেলছেন।
বেইলি রোডে মাশরুফা নামে ইংরেজি মাধ্যমের একজন শিক্ষক পরিবার নিয়ে কেনাকাটা করছিলেন। তিনি বলেন, এবার একটু আগেভাগে গ্রামে যাওয়ার ঈচ্ছা। সেজন্য কেনাকাটা শুরু করেছি। ঈদের পাশাপাশি এবার বৈশাখে পরার জন্যও হালকা পোশাক কিনতে হচ্ছে।
বেইলি রোডে আর্টিসানের ম্যানেজার সবুজ হাসান বলেন, এবার ঈদ সামনে রেখে ছেলেদের পাঞ্জাবি ও মেয়েদের পার্টি ড্রেস বেশি চলছে। গরমের বিষয় মাথায় রেখে আরামদায়ক পোশাক ও দেশীয় ভাবধারার পোশাকের চাহিদা ভালো লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
জানতে চাইলে ইনফিনিটির ইনচার্জ জাহিদুল ইসলাম বলেন, এখনো বিক্রি সেভাবে বাড়েনি। ক্রেতারা আসছেন, দেখছেন। মূল বিক্রি দশ রোজার পর থেকে হবে। আর শেষ সময়েও মধ্যরাত পর্যন্ত বিক্রয়কেন্দ্রগুলো ক্রেতাদের পদচারণায় মুখর থাকবে। এবার অন্যান্য বছরের থেকে বিক্রি বেশি হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
অঞ্জনসের প্রধান নির্বাহী শাহীন আহমেদ মনে করেন মানুষের ক্রয়ক্ষমতার পাশাপাশি গত কয়েক দশকে মানুষের মধ্যে সচেতনতা এসেছে। পাশাপাশি ‘বিদেশি পোশাক মানে ভালো’-এ ধারণা থেকে বেরিয়ে এসেছেন ক্রেতারা। এ কারণে যে কোনো উৎসবে এখন দেশি পোশাক প্রাধ্যান্য পাচ্ছে বলে জানিয়ে তিনি বলেন, সবাই ফ্যাশন ও দুটি উৎসব একত্রে সে কথা মাথায় রেখেই ফ্যাশনে নতুনত্ব আনার লক্ষ্যে ডিজাইনাররা কাজ করেছেন। এখনো প্রতিদিন নতুন নতুন ডিজাইনের পোশাক আসছে। ঈদের প্রস্তুতির এখন শেষ সময়। সব মিলে যেমন বোঝা যাচ্ছে, এবার ঈদ ভালো যাবে।
তিনি বলেন, আমরা এবারও পণ্যের গুণগত মান বাড়িয়েছি। একই সঙ্গে পোশাকে এনেছি বৈচিত্র্য ও অভিনবত্ব। এর পেছনে ভোক্তার চাহিদার একটি বড় ভূমিকা রয়েছে। তারা যেমন প্রত্যাশা করছেন, ঈদে সেটি দিতে পারবো বলে আশা করছি।
এনএইচ/এমএইচআর/জিকেএস