আইন-আদালত

এনআইডির তথ্যে মোবাইল কোম্পানির ডাটাবেজ তৈরির নির্দেশনা বাতিলে রুল

বিটিআরসি কর্তৃক মোবাইল কোম্পানিগুলোকে জাতীয় পরিচয় পত্রের ডাটাবেজ হতে তথ্য সংগ্রহ করে আলাদা ডাটাবেজ তৈরির নির্দেশনা কেন বাতিল ঘোষণা করা হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট।

Advertisement

একই সঙ্গে আদালত জনগণের ব্যক্তিগত তথ্য, যা নির্বাচন কমিশন বা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সংরক্ষিত রয়েছে, সেসব সংরক্ষণে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না এ মর্মে চার সপ্তাহের রুল জারি করেছেন আদালত।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব, স্বরাষ্ট্র সচিব, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি সচিব, ডাক ও টেলিযোগাযোগ সচিব, নির্বাচন কমিশনের চেয়ারম্যান, জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন (এনআইডি) অনুবিভাগের মহাপরিচালক, বিটিআরসির চেয়ারম্যান ও বাংলাদেশ মোবাইল অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতিকে চার সপ্তাহের মধ্যে এ রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।

এ সংক্রান্ত এক রিট আবেদনের প্রথামিক শুনানি নিয়ে বুধবার (২০ মার্চ) হাইকোর্টের বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম এবং বিচারপতি মো. আতাবুল্লাহর সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এই আদেশ দেন।

Advertisement

আদালতে আজ রিটের পক্ষে শুনানি করেন সিনিয়র আইনজীবী মনজিল মোরসেদ। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তুষার কান্তি রায়।

আইনজীবী মনজিল মোরসেদ সাংবাদিকদের জানান, গত ৬ ফেব্রুয়ারি এ বিষয়ে মিডিয়ায় প্রতিবেদন প্রকাশিত হয় এবং ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, বিটিআরসি মোবাইল কোম্পানিগুলোকে তাদের গ্রাহকদের ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করে তথ্য ভান্ডার তৈরির নির্দেশনা প্রদান করেছে। উক্ত নির্দেশনায় আরও উল্লেখ করা হয়েছে, মোবাইল কোম্পানিগুলো তাদের গ্রাহকদের নাম, ঠিকানাসহ অন্যান্য যাবতীয় তথ্য সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করবে, যা পূর্বে মোবাইল কোম্পানিগুলো নির্বাচন কমিশনের জাতীয় পরিচয়পত্রের ডাটাবেজ হতে তাদের গ্রাহকদের তথ্য।

প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, বিটিআরসির নির্দেশনা প্রতিফলন হলে মোবাইল কোম্পানিগুলোকে ডিজিকম টেকনোলজিসের সঙ্গে ডাটাবেইজের মাধ্যমে গ্রাহকদের তথ্য যাচাই করতে হবে। এই ডাটাবেজের কারণে ডিজিকম টেকনোলজিসকে গ্রাহক প্রতি ১০ টাকা প্রদান করতে হবে। বর্তমানে মোবাইল কোম্পানিগুলো এই একই বিষয়ের জন্য নির্বাচন কমিশনেরকে ৫ টাকা প্রদান করে।

উক্ত রিপোর্ট সংযুক্ত করে জনস্বার্থে এইচআরপিবির পক্ষে একটি রিট পিটিশন দায়ের করলে আজ শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। হিউম্যান রাইট অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের পক্ষে রিট আবেদনকারীরা হলেন- আইনজীবী মো. সারওয়ার আহাদ চৌধুরী, একলাস উদ্দিন ভূঁইয়া, মামুন আলীম ও রিপন বাড়ৈ।

Advertisement

শুনানিতে এইচআরপিবির পক্ষে সিনিয়র আইনজীবী মনজিল মোরসেদ বলেন, বিটিআরসির এই নির্দেশনা যদি মোবাইল কোম্পানিগুলো অনুসরণ শুরু করে তাহলে সাধারণ মানুষের ব্যক্তিগত তথ্য বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের নিকট চলে যাবে এবং যা জাতীয় নিরাপত্তা হুমকির সম্মুখীন হবে। এছাড়াও জনগণ আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে, যা সংবিধান ও আইন পরিপন্থি।

তিনি আরও বলেন, নাগরিকদের ব্যক্তিগত তথ্যাদি প্রাইভেট কোম্পানির অধীনে গেলে সংবিধান অনুযায়ী স্বীকৃত মৌলিক অধিকার লঙ্ঘন হবে। আইন অনুযায়ী এ সিদ্ধান্ত সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৪৩ (খ) বিরোধী এবং জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন আইন ২০১০ এর ধারা ১৩ পরিপন্থি। এছাড়াও বিটিআরসির এই সিদ্ধান্তের কারণে জনগণকে অতিরিক্ত ৫ টাকা করে মোবাইল কোম্পানিগুলোকে প্রদান করতে হবে। যার পুরোটাই পাবে ডিজিকম টেকনোলজিস এবং এই সিদ্ধান্তর কারণে সরকার কোনো ভাবেই লাভবান হবে না। বরং মধ্যস্বত্বভোগী হিসেবে লাভবান হবে ডিজিকম টেকনোলজিস।

এফএইচ/ইএ/জিকেএস