আগুনে মৃত্যু যেন থামছেই না। প্রতিদিনই দেশের কোথাও না কোথাও আগুন কেড়ে নিচ্ছে মানুষের প্রাণ। এ মৃত্যুর শেষ কোথায়? সম্প্রতি নতুন করে আগুনে মৃত্যুর বিভীষিকা দেখলো দেশ। ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের পুনরাবৃত্তি ঘটলো ঢাকা ও গাজীপুরে। গত ২৯ ফেব্রুয়ারি রাতে রাজধানীর অভিজাত এলাকা বেইলি রোডের গ্রিন কোজি কটেজ ভবনে অগ্নিকাণ্ডে ৪৬ জনের প্রাণহানি হয়। সবশেষ গত ১৩ মার্চ সন্ধ্যায় গাজীপুরের কালিয়াকৈরে গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে অন্তত ৩৬ জন দগ্ধ হন। তাদের মধ্যে ৩২ জনকে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়। বুধবার দুপুর পর্যন্ত দগ্ধদের মধ্যে ১৪ জনের মৃত্যু হয়েছে।
Advertisement
বিশ্লেষকরা মনে করেন, এসব অগ্নিদুর্ঘটনা রাষ্ট্রযন্ত্রের গাফিলতিকেই নির্দেশ করে। সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন স্থানে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা নিয়ে জাগো নিউজের সঙ্গে কথা বলেন নগর পরিকল্পনাবিদ অধ্যাপক ড. আদিল মুহাম্মদ খান। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন নিজস্ব প্রতিবেদক সাইফুল হক মিঠু।
জাগো নিউজ: বেইলি রোডে অগ্নিকাণ্ডের পর নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর তদারকি ও তোড়জোড় চোখে পড়ল। ভবন নির্মাণ ও রেস্তোরাঁ বন্ধ করার ঘটনা ঘটলো। তবে এখন আবার নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর কোনো আয়োজন দেখছি না। এই তোড়জোড়ের মাধ্যমেই কি তারা তাদের দায়িত্ব শেষ করলো?
রেস্তোরাঁয় গ্রাহকের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করা হয় না। এমন ডিজাইন করা হয় যেন বদ্ধ কাচের ঘর, যদিও চাকচিক্য থাকে। কাচঘেরা এসব ভবনে আলো-বাতাস ঢোকার কোনো ব্যবস্থা নেই। আগুন লাগলে যে বাতাস ঢুকবে সেটার কোনো ব্যবস্থা নেই। লিফটকেন্দ্রিক বহুতল ভবন, সেখানে সিঁড়ির ব্যবস্থাও অপ্রতুল। সিঁড়িগুলো অন্য জিনিসপত্রে বোঝাই থাকে
Advertisement
আদিল মুহাম্মদ খান: আপাতদৃষ্টিতে নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর তোড়জোড়টাই আমরা দেখতে পেলাম। আইন মেনে ভবন নির্মাণ বা আইন না মেনে নির্মিত ভবনের বিষয়ে বছরজুড়েই মনিটরিং প্রয়োজন। এটি প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়া প্রয়োজন। তবে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ কতটা দেওয়া হয়েছে এবং নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর কর্মীবাহিনীকে নতুন কোনো বার্তা দেওয়া হলো কি না এসব অভিযানের মাধ্যমে, সে জায়গায় প্রশ্ন রয়ে গেছে। দু-একদিনের তোড়জোড়ের চেয়ে বেশি দরকার প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ, সারা বছর অভিযানের মাধ্যমে ভবন নির্মাতাদের সতর্ক করা।
আরও পড়ুন
গ্রামকে শহরে রূপান্তরের দরকার নেই, সুযোগ-সুবিধা পৌঁছাতে হবে রেস্তোরাঁ খাত গাইডলাইনে হচ্ছে কমিটি অভিযানের নামে রেস্তোরাঁয় চাঁদাবাজি করছে সরকারি সব সংস্থা আগুনে মৃত্যুর শেষ কোথায়?ভবন পরিদর্শকদের তো কোনো আইনের আওতায় আনা হয়নি। সরকারি প্রতিষ্ঠান যদি পরিদর্শন করতে ব্যর্থ হয়, তারা যদি ম্যানেজ হয়ে যায় তখনই সমস্যার সূত্রপাত হয়। সরকারের নিজেদের প্রতিষ্ঠানের মধ্যে শুদ্ধি অভিযান তো শুরুই হলো না। তাহলে এই তোড়জোড় কার জন্য? এই তোড়জোড় টিকবে না। ভবন ও ভবনে থাকা মানুষের নিরাপত্তার খুব বেশি উন্নতি হবে না।
বেইলি রোডের ‘গ্রিন কোজি কটেজ’ ভবন
Advertisement
জাগো নিউজ: বেইলি রোড ও গাজীপুরের অগ্নিকাণ্ডের নেপথ্যে গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণের বড় ভূমিকা রয়েছে। বিষয়টি কীভাবে দেখছেন? ভবনে গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবহার কীভাবে নিরাপদ করা যায়? আপনার কী পরামর্শ?
আদিল মুহাম্মদ খান: গ্যাস সিলিন্ডার যারা প্রস্তুত করছেন, রিফিল করছেন তাদের কিছু গাইডলাইন মেনে চলতে হয়। এটা সারা দুনিয়ায়ই হয়। আমাদের দেশে সিলিন্ডারগুলোর বিপণন, মজুত, ম্যান্টিনেন্সে নিয়মের ব্যত্যয় দেখা যায়। ব্যবহারকরীরাও সঠিকভাবে এটি ব্যবহার করতে পারেন না। গ্যাস সিলিন্ডার অন্য দশটা পণ্যের মতোই ব্যবহার হচ্ছে। মান নিয়ন্ত্রণ বা ব্যবহারবিধি নিশ্চিত করার কোনো মনিটরিং নেই। এগুলো যেহেতু হচ্ছে না, এর অনিবার্য পরিণতি বিস্ফোরণ।
এ ধরনের দুর্ঘটনা আরও ঘটবে। এসব দুর্ঘটনায় সিলিন্ডারের বড় প্রভাব আছে। যারা সিলিন্ডারের ব্যবসা করছেন তারা রাজনৈতিকভাবে অত্যন্ত শক্তিশালী। এই ব্যবসায়ীদের আইনের আওতা আনার বিষয়টি শুরুই হয়নি। সিলিন্ডার মজুত, বিপণন ও ব্যবহারের মান নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। সাপ্লাই গ্যাস থেকে আমরা সিলিন্ডারে গেলাম। সেখানে আমাদের খরচ, দুর্ঘটনা এ সবকিছুই মাথায় নিতে হবে। আমরা আবার সাপ্লাইভিত্তিক গ্যাসে ফিরে যাব কি না সেটা ভাবার সময় এসেছে। আমাদের মতো ঘনবসতিপূর্ণ দেশে কেন আমরা সিলিন্ডারকে উৎসাহিত করছি, যেখানে আমাদের নজরদারির সক্ষমতা কম।
আইন মেনে ভবন নির্মাণ বা আইন না মেনে নির্মিত ভবনের বিষয়ে বছরজুড়েই মনিটরিং প্রয়োজন। এটিকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়া প্রয়োজন। তবে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ কতটা দেওয়া হয়েছে এবং নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর কর্মীবাহিনীকে নতুন কোনো বার্তা দেওয়া হলো কি না এসব অভিযানের মাধ্যমে, সে জায়গায় প্রশ্ন রয়ে গেছে।
সিলিন্ডার ব্যবহারকারীদের অনেকেই শিক্ষিত নয়। কেন আমরা বোমাসদৃশ বস্তুটাকে ঘরে ঘরে, ভবনে ভবনে নিয়ে এলাম? এ জিনিসটা অত্যন্ত বিপজ্জনক। নীতিনির্ধারকরা বিদ্যমান সমাজ বাস্তবতাকে প্রাধান্য না দিয়ে সিলিন্ডার ব্যবসায়ীদের স্বার্থ সুরক্ষা করছেন। আবাসিক পর্যায়ে গ্যাসের ব্যবহার অনেক কম, শিল্প পর্যায়ে বেশি। কিন্তু আবাসিকে কোন কারণে গ্যাস সিলিন্ডার ঢুকালাম? পলিসি নেওয়ার ক্ষেত্রে সামাজিক বাস্তবতা অগ্রাহ্য করা হয়েছে। এই ঝুঁকিপূর্ণ বস্তুটা প্রতিটি ঘরে, হোটেলে চলে গেছে।
আগুনে এই তরুণ সাংবাদিক মারা যান
জাগো নিউজ: ঢাকায় এখন মোড়ে মোড়ে রেস্তোরাঁ, এর কারণ কী? এটাকে কীভাবে দেখছেন?
আদিল মুহাম্মদ খান: রাজধানীতে বিনোদনকেন্দ্রের অভাব পাশাপাশি জীবনযাত্রার পরিবর্তন, এ দুই কারণেই রেস্তোরাঁর আধিক্য। পার্ক, খেলার মাঠ বা বন্ধুদের নিয়ে বসার মতো জায়গা নেই। আরবান লাইফস্টাইলে রেস্তোরাঁর কদর বেড়েছে। এসব কারণে মোড়ে মোড়ে রেস্তোরাঁ গজিয়ে উঠছে। কিন্তু এসবের বেশিরভাগই অনুমোদনহীন। সেইফটি স্ট্যান্ডার্ড মেনে এসব প্রতিষ্ঠান করা হচ্ছে না। নগরে বিনোদনের জায়গা কেন করা হলো না? পার্ক বা লেক যেগুলো ছিল সেগুলোও বন্ধ করা হলো। শিশু পার্ক অনেক বছর ধরে বন্ধ। মেট্রোরেল, এক্সপ্রেসওয়ের জন্য পার্কগুলোকে ধ্বংস করে দেওয়া হচ্ছে। খেলার মাঠগুলো ক্লাবের দখলে চলে যাচ্ছে। এ অবস্থায় শহুরে মানুষ যাবে কোথায়? সরকারের চিন্তায় কেবলই অবকাঠামো। এ অবকাঠামো নির্মাণ করতে গিয়ে শহরবাসীর মৌলিক অধিকার বিনষ্ট করা হয়েছে। এজন্য আড্ডা দেওয়ার স্থান হিসেবে রেস্তোরাঁ বেছে নিচ্ছে অনেকে।
আরও পড়ুন
বেইলি রোডের আগুনে ৪৬ জনের মৃত্যু ধানমন্ডির গাউসিয়া টুইন পিক ভবনের ১২ রেস্তোরাঁ সিলগালা এস আলমের কারখানায় আগুনে পুড়লো এক লাখ টন চিনিরেস্তোরাঁয় গ্রাহকের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করা হয় না। এমন ডিজাইন করা হয় যেন বদ্ধ কাচের ঘর, যদিও চাকচিক্য থাকে। কাচঘেরা এসব ভবনে আলো-বাতাস ঢোকার কোনো ব্যবস্থা নেই। আগুন লাগলে যে বাতাস ঢুকবে সেটার কোনো ব্যবস্থা নেই। লিফটকেন্দ্রিক বহুতল ভবন, সেখানে সিঁড়ির ব্যবস্থাও অপ্রতুল। সিঁড়িগুলো অন্য জিনিসপত্রে বোঝাই থাকে। আবার এসব ভবনেই একাধিক রেস্তোরাঁ থাকে। সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত হাজারো মানুষের আনাগোনা চলে।
অথচ আগুন লাগলে হাজার খানেক মানুষ বের হতে পারবে কি না, এ ধরনের কোনো চিন্তা বা ব্যবস্থা সেখানে রাখা হয় না। এ রেস্তোরাঁগুলো মৃত্যুকূপের মতো দাঁড়িয়ে আছে। হয়তো প্রতিদিন আগুন লাগে না। যে কারণে আমরাও কিছু মনে করি না। যখন আগুন লাগবে তখন শতাধিক মৃত্যুর কারণ হয়ে ওঠে এসব রেস্তোরাঁ।
জাগো নিউজ: রানা প্লাজায় দুর্ঘটনার পর শিল্পকারখানায় কমপ্লায়েন্সে যতটা মনোযোগী হতে দেখা গেছে, বাণিজ্যিক ভবন কমপ্লায়েন্সে সরকারের আগ্রহ কি কম? অগ্নিনিরাপত্তা নিয়ে যথাযথ কোনো পদক্ষেপ নেই কেন?
বুঝেশুনে সিলিন্ডার ব্যবহার করতে হবে
আদিল মুহাম্মদ খান: রাষ্ট্র যে বিষয়ে যত গুরুত্ব দেয়, সে বিষয়ে আমরা তত পদক্ষেপ দেখতে পারি। রাষ্ট্রের যাবতীয় মনোযোগ এখন প্রজেক্ট ও অবকাঠামো নির্মাণে। যত প্রজেক্ট, তত টাকা। কিন্তু একটা রাষ্ট্র দাঁড়িয়ে থাকে সুশাসনের ওপর। যত বেশি সুশাসন থাকবে রাষ্ট্রের মানুষের জীবন তত বেশি নিরাপদ হবে। ভবনের নিরাপত্তা সুশাসনের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। এ বিষয়ে রাষ্ট্র যদি গুরুত্ব দিত তাহলে ভবন ও শিল্প কারখানা নিরাপদ থাকতো। আমাদের অর্থনীতির আকার বেড়েছে। এডিপিতে বরাদ্দ বেড়েছে। কিন্তু গভর্ন্যান্সে কি বরাদ্দ বেড়েছে? সেখানে কি সময় বিনিয়োগ বেড়েছে? সেটা তো বাড়েনি। তা না বাড়ায় ব্যবসায়ীবান্ধব সরকার গড়ে উঠেছে। ব্যবসায়ীরা অবৈধ উপায়ে তার কর্মী ও সাধারণ মানুষের জীবনকে ঝুঁকিতে ফেলে তাদের নিজস্ব মুনাফা বাড়িয়ে নিচ্ছে।
গ্যাস সিলিন্ডার যারা প্রস্তুত করছেন, রিফিল করছেন তাদের কিছু গাইডলাইন মেনে চলতে হয়। এটা সারা দুনিয়ায়ই হয়। আমাদের দেশে সিলিন্ডারগুলোর বিপণন, মজুত, ম্যান্টিনেন্সে নিয়মের ব্যত্যয় দেখা যায়। ব্যবহারকরীরাও সঠিকভাবে এটি ব্যবহার করতে পারেন না। গ্যাস সিলিন্ডার অন্য দশটা পণ্যের মতোই ব্যবহার হচ্ছে। মান নিয়ন্ত্রণ বা ব্যবহারবিধি নিশ্চিত করার কোনো মনিটরিং নেই। এগুলো যেহেতু হচ্ছে না এর অনিবার্য পরিণতি বিস্ফোরণ
সরকারের সঙ্গে ব্যবসায়ীদের যে বন্ধন, সেই বন্ধনের জোরে অনুপযুক্ত পরিবেশে ব্যবসা করার সুযোগ পাচ্ছে তারা। রানা প্লাজা ট্র্যাজেডিতে অগণিত মানুষ মারা গেছে। সে জায়গায় একটা স্মৃতিস্তম্ভ করে রাখা উচিত ছিল। সেখান থেকে রাষ্ট্র ঘুরে দাঁড়িয়েছে, সেখানে স্মৃতিস্তম্ভ থাকলে মানুষ ওই ট্র্যাজেডিটা স্মরণ করতো। কিন্তু আপনি যদি এখন সেখানে যান বুঝতেও পারবেন না যে, সেখানে এত বড় একটা ট্র্যাজেডি হয়েছে। রাষ্ট্র কী চোখে শ্রমিকদের দেখে সেটা রানা প্লাজার সাইটে গেলে বোঝা যায়। সেখানে দুর্ঘটনার কোনো চিহ্নও রাখা হয়নি।
রাষ্ট্রকে ব্যবসায়ীবান্ধব না হয়ে জনবান্ধব হতে হবে। নিরাপদ ভবন, শিল্পকারখানা নির্মাণে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের বিনিয়োগ বাড়তে হবে। রাষ্ট্রকে এক্ষেত্রে তদারকি করতে হবে। ভবন পরিদর্শকদের আয়ের হিসাব দেখলে, লাইফস্টাইল দেখলে বোঝা যায় জবাবদিহির জায়গায় আমরা কতটা ভয়ঙ্করভাবে দুর্বল। বারবার দুর্ঘটনা ঘটে, অথচ কোনো পরিদর্শকের শাস্তি হয় না, কোনো অথরিটির বিচার হয় না, কোনো বিল্ডিং ইন্সপেক্টরদের শাস্তি হয় না। কয়েকদিন শুধু তোড়জোড় দেখি।
আগুনে স্বামী-স্ত্রী ও সন্তানের মৃত্যু
সুশাসন ছাড়া শুধু অবকাঠামো দিয়ে রাষ্ট্র দাড়াঁতে পারে না। ব্যবসায়ীরা সামান্য বিনিয়োগ বাড়ালেই ভবন ও শিল্পপ্রতিষ্ঠান অগ্নিঝুঁকিমুক্ত করা সম্ভব। তবে যারা আইন মানে না তাদের যদি শাস্তির আওতায় না আনা হয় তখন বার্তাটা পরিষ্কার থাকে না। আমরা দেখছি গার্মেন্টস মালিক, ভবন মালিকরা ছাড় পেয়ে গেছেন। ছাড় দেওয়ার সংস্কৃতি যতদিন থাকবে এ ধরনের দুর্ঘটনা ঘটবেই। তাতে সাধারণ মানুষ বারবার ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
আর রাজনৈতিক যে শক্তি যারা পলিসি লেভেলে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে, তাদের সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের ফলে মৃত্যুঝুঁকি বাড়ে। যেমন- সিলিন্ডার ব্যবসার পরিধি বাড়লো, ভবনের উচ্চতা ছয় তলার বেশি হলেই বহুতল হবে না, হতে হবে অন্তত ১০ তলা। এসব সিদ্ধান্ত যারা পরিবর্তন করে তারাই রাষ্ট্রের শক্তিশালী জায়গায় অবস্থান করছে। রাষ্ট্রকে এখানে শক্তিশালী হতে হবে। সাধারণ মানুষের স্বার্থ দেখতে হবে।
জাগো নিউজ: ভবন নির্মাণের পর রাজউক কোনো দেখভাল করে না। দুর্ঘটনা ঘটলে অন্যের ওপর দায় দেওয়া হয়। দুর্ঘটনার দায় আসলে কার?
আদিল মুহাম্মদ খান: ভবন নির্মাণ ঠিকমতো হয়েছে কি না সেটা দেখার জন্য তো কর্তৃপক্ষ বা রাজউক তৈরি হয়েছে। অন্যথায় তো রাজউকের দরকার হতো না। এ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আইন আছে, ইমারত বিধিমালা আছে। নির্মাণের আগে যেমন অনুমতি নিতে হবে, নির্মাণের পরও নকশা অনুযায়ী তৈরি করা হয়েছে কি না সেটা দেখার কথা রাজউকের। রাজউকেরই অনুমোদন দেওয়ার কথা। ভবনটি নিয়ম মেনে তৈরি হয়েছে, সব শর্ত ও ডিজাইন অক্ষুণ্ন আছে, এ মর্মে রাজউকের প্রতি পাঁচ বছর পর পর সার্টিফিকেট নবায়ন করার কথা। এজন্য রাজউক তৈরি হয়েছে।
আরও পড়ুন
গাজীপুরে গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে নিহত বেড়ে ১৪ ভবন নির্মাণ অনুমোদন-তদারকিতে কর্তৃপক্ষ করার চিন্তা সরকারের বেআইনি ইমারত নকশার অনুমতি কারা দেয়, চিহ্নিত করতে হবেরাজউক যদি ফেল করে এর দায়-দায়িত্ব রাষ্ট্রকে নিতে হবে। কোন কর্মকর্তা-কর্মচারীর জন্য প্রতিষ্ঠান ফেল করলো কিংবা কোনো রাজনৈতিক চাপ আছে কি না সেটাও দেখতে হবে। অনেক ক্ষেত্রে আমরা দেখি রাজনৈতিক চাপ থাকে, অবৈধ সিদ্ধান্ত নিতে হয়। পুরো সিস্টেম এখানে প্রশ্নবিদ্ধ। রাজউক যদি ব্যর্থ হয় তাহলে আমাদের আরেকটি প্রতিষ্ঠান তৈরি করতে হবে। যে প্রতিষ্ঠানের ব্যর্থতা মানুষের জীবন-মৃত্যুর সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত, সে প্রতিষ্ঠান হয় ঠিক করতে হবে নয়তো অন্য প্রতিষ্ঠান তৈরি করে হলেও মানুষের জীবন ও ভবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।
জাগো নিউজ: এসব দুর্ঘটনার পর সামাজিক মাধ্যমে অনেক তোলপাড় হয়। তারপর সব মুছেও যায়। আমাদের শোকের আয়ু এক বছরও নয়। এক ইস্যু থেকে অন্য নতুন ইস্যু আসে। আসলে করণীয় কী?
আদিল মুহাম্মদ খান: আমাদের কিছু করার সুযোগ খুবই কম। আমরা হয়তো ঝুঁকিপূর্ণ ভবন ব্যবহার করা বন্ধ করতে পারি। কিন্তু কোন ভবন ঝুঁকিপূর্ণ সে তথ্যটা তো সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো দেবে। সাধারণ মানুষের পক্ষে সে তথ্য জানা সম্ভব নয়। সে তথ্যগুলো যদি সরকার দিত তাহলেও কিছুটা সাবধানতা অবলম্বন করা যেতো। আবার আমাদের এখানে দারিদ্র্যতার যে হার, সেখানে ঝুঁকিপূর্ণ কারখানায়ও শ্রমিকরা কাজ করতে বাধ্য হন। দারিদ্র্য থাকলে মানুষ অনিরাপদ জায়গায়ও কাজ করে। তখন আগুনের চেয়ে এক বেলা খাবারের চিন্তা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। এজন্য নিরাপত্তার বিষয়টি রাষ্ট্রকেই দেখভাল করতে হবে।
এসএম/এমকেআর/এমএস