জাতীয়

আন্তর্জাতিক অভিযান বন্ধে নাবিকদের ওপর চাপ বাড়াচ্ছে জলদস্যুরা

• নাবিকদের ২৪ ঘণ্টাই জাহাজের ব্রিজে অবস্থান করতে হচ্ছে• খাবার বাঁচাতে ডিনার করছেন না নাবিকরাভারত মহাসাগর থেকে ছিনতাই হওয়া বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ উদ্ধারে জলদস্যুদের ওপর যৌথভাবে চাপ বাড়িয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও ভারতীয় নৌবাহিনী। এতে আগের অবস্থান বদলে উপকূলের দেড় নটিক্যাল মাইলের মধ্যে জাহাজ নিয়ে গেছে জলদস্যুরা। একই সঙ্গে দুই নৌ-বাহিনীকে অভিযান পরিচালনা থেকে বিরত রাখতে জিম্মি নাবিকদের ওপর চাপ বাড়াচ্ছে তারা।

Advertisement

মঙ্গলবার (১৯ মার্চ) সন্ধ্যায় দেশের সিনিয়র নাবিক ক্যাপ্টেন আতিক ইউএ খান এসব তথ্য জানিয়েছেন।

ক্যাপ্টেন আতিক বলেন, গত দুদিন আন্তর্জাতিক নৌবাহিনী এমভি আবদুল্লাহকে বেশ চাপের মুখে রেখেছে। যুদ্ধজাহাজগুলো এমভি আবদুল্লাহ’র দেড় মাইলের মধ্যে অবস্থান নিয়েছে। ফলে জলদস্যুরা জাহাজের নোঙর তুলে আরও ভেতরে চলে গিয়ে তীরের মাত্র দেড় মাইল দূরে নোঙর করেছে। জলদস্যুরা এটাও বলেছে যে, বাড়াবাড়ি করলে জাহাজ তীরে তুলে দেবে। তবে দুই নৌবাহিনী এখনো বিভিন্নভাবে তাদের অবস্থান জানান দিচ্ছে।

আরও পড়ুন

Advertisement

অভিযানের প্রস্তুতি নিচ্ছে সোমালি পুলিশ-আন্তর্জাতিক নৌবাহিনী বাংলাদেশি জাহাজের দায়িত্বে নতুন দস্যুদল, হাতে ভারী অস্ত্র মুক্তিপণ না দিলে সবাইকে হত্যা করে সমুদ্রে ফেলে দেওয়ার হুমকি

তিনি বলেন, নৌবাহিনীর চাপে নাবিকদের এখন ২৪ ঘণ্টাই জাহাজের ব্রিজে অবস্থান করতে হচ্ছে। এছাড়া মাঝেমধ্যে ভিএইচএফ (ওয়াকি-টকি) ব্যবহার করে নৌবাহিনীকে অনুরোধও জানাতে হচ্ছে যেন কাছে না আসে।

জাহাজের অভ্যন্তরীণ অবস্থার কথাও জানিয়ে ক্যাপ্টেন আতিক বলেছেন, ‘জলদস্যুদের অধিকাংশই এখন নিজেদের জন্য স্থানীয় খাবারের ব্যবস্থা করছেন। এতে জাহাজের খাবার হয়তো কদিন বেশি যেতে পারে। অন্যদিকে, জাহাজের নাবিকরাও খাবার বেশি দিন চালিয়ে নেওয়ার জন্য ডিনার করছেন না।’

‘এখন মূলত ইফতার আর সেহেরি তৈরি হচ্ছে সবার জন্য। সচরাচর জাহাজে যেভাবে একাধিক তরকারি তৈরি হয়, সেটা পরিহার করা হচ্ছে.’- ক্যাপ্টেন আতিক।

নাবিকদের অনেকে ত্বকে অ্যালার্জিতে ভুগছেন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘পানি রেশনিং এবং সবসময় ব্রিজে অবস্থান করায় সবার পক্ষে নিয়মিত গোসল এবং কাপড় ধোয়া সম্ভব হচ্ছে না। ফলে নাবিকদের কারো কারো ত্বকে অ্যালার্জি দেখা দিয়েছে। এছাড়া ব্রিজে শুধু একটি বাথরুম। যা ২৩ জন নাবিক ছাড়া ২৫-৩০ জন জলদস্যু ব্যবহার করছে। ফলে বাথরুম নিয়মিত পরিষ্কার করা আর ব্যবহার করা খুবই কঠিন হয়ে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন নাবিকরা।’

Advertisement

অন্যদিকে, সোমালিয়ার আধা-স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল পুন্টল্যান্ড রাজ্যের নিরাপত্তা বাহিনী পুন্টল্যান্ড সিকিউরিটি ফোর্স (পিএসএফ) জানিয়েছে, তারা দুইজন জলদস্যু গ্রেফতার করেছেন, যারা এমভি আবদুল্লাহতে দস্যুদের জন্য মাদক নিয়ে যাচ্ছিল। পিএসএফ জলদস্যুতার অবসানে যৌথ বাহিনীকে সবধরনের সহায়তা করতে প্রস্তুত।

আরও পড়ুন

‘এমভি আবদুল্লাহকে’ অনুসরণ করছে ইইউয়ের যুদ্ধজাহাজ বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আবদুল্লায় জিম্মি যারা ‘আমার জীবনের বিনিময়ে হলেও ছেলেরে ফেরত চাই’

তবে জাহাজের মালিকপক্ষ কবির গ্রুপ এবং সরকার, নাবিকদের নিরাপত্তাকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে। এ বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মেরিটাইম অ্যাফেয়ার্স সচিব রিয়ার অ্যাডমিরাল (অব.) মো. খুরশেদ আলম বলেছিলেন, ‘আমরা নেগোশিয়েশন করছি, কীভাবে শান্তিপূর্ণ উপায়ে নাবিক ও ক্রুদের কোনো ক্ষতি ছাড়াই জাহাজটি উদ্ধার করা যায়।’

এছাড়া ছিনতাই হওয়া জাহাজ ও জিম্মি নাবিকদের উদ্ধারে ‘মধ্যস্থতাকারী’ নিয়োগের পরিকল্পনার কথা জানিয়েছিল জাহাজের মালিক কবির গ্রুপ।

বাংলাদেশি মার্চেন্ট মেরিন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ক্যাপ্টেন এম আনাম চৌধুরী বলেন, ‘সোমালিয়া কোস্ট লাইনের ভেতরে এমন অভিযান খুব ঝুঁকিপূর্ণ হবে। সোমালিয়া কোস্টের ভেতর যতগুলো জাহাজ ছিল আজ পর্যন্ত কোনো জাহাজ পিসফুল নেগোসিয়েশন ছাড়া মুক্ত করা সম্ভব হয়নি। মাল্টিজ জাহাজ রুয়েন, যেটি ভারতীয় বাহিনী উদ্ধার করেছে, সেটিও যদি তাদের কোস্ট থেকে বের না হতো, তবে উদ্ধার করা সম্ভব হতো না।’

এর আগে ১২ মার্চ বাংলাদেশ সময় দুপুর ১টার দিকে ভারত মহাসাগরে সোমালিয়ান জলদস্যুদের কবলে পড়ে বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ। সে সময় জাহাজটি সোমালিয়া উপকূল থেকে ৫৭০ নটিক্যাল মাইল দূরে অবস্থান করছিল। দস্যুদের কাছে জিম্মি হয় ২৩ জন বাংলাদেশি নাবিক ও ক্রু। বাংলাদেশি জাহাজটি পরের তিনদিন ধরে সোমালিয়ার গোদবজিরান উপকূলের ৪ নটিক্যাল মাইল দূরে নোঙর করে ছিল। পরে আবারও অবস্থান বদল করে এখন একই উপকূলের দেড় নটিক্যাল মাইল দূরে নোঙর করেছে।

এএজেড/এমএএইচ/এএসএম