ফিলিস্তিনের বিপক্ষে বিশ্বকাপ বাছাইয়ের অ্যাওয়ে ম্যাচের একেবারেই কাছাকাছি বাংলাদেশ। বৃহস্পতিবার রাতে কুয়েত সিটির জাবের আল আহমেদ স্টেডিয়ামে এশিয়ার অন্যতম শক্তিশালী দলটির বিপক্ষে খেলতে নামবে লাল-সবুজ জার্সিধারীরা। এটি হবে বিশ্বকাপ বাছাইয়ের দ্বিতীয় পর্বে বাংলাদেশের তৃতীয় ম্যাচ। আগের দুই ম্যাচে জামাল ভূঁইয়ারা মেলবোর্নে ৭-০ গোলে হেরেছে অস্ট্রেলিয়ার কাছে এবং ঢাকায় ১-১ গোলে ড্র করেছে লেবাননের বিপক্ষে।
Advertisement
ফিলিস্তিনের বিপক্ষে মার্চের দুই ম্যাচের জন্য বাংলাদেশ দুই সপ্তাহ অনুশীলন করেছেন সৌদি আরবে। সেখান থেকে রোববার কুয়েতে পৌঁছে বাংলাদেশ গতকাল (সোমবার) প্রথম অনুশীলন করেছে।
ম্যাচশহরে প্রথম অনুশীলনের পর বাংলাদেশ দলের প্রধান কোচ হ্যাভিয়ের ক্যাবরেরা, দুই সিনিয়র খেলোয়াড় তপু বর্মন ও সোহেল রানা-১ জানিয়েছেন, মধ্যপ্রাচ্যে দুই সপ্তাহের বেশি সময়ের অনুশীলন শেষে এখন তারা ফিলিস্তিনকে মোকাবিলার জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত।
দেড় যুগ আগে ফিলিস্তিনের সঙ্গে প্রথম দেখা হয়েছিল বাংলাদেশের এবং সেটা ঘরের মাঠে। ২০০৬ সালে বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে এএফসি চ্যালেঞ্জ কাপের ম্যাচে বাংলাদেশ ১-১ গোলে ড্র করেছিল। এরপর টানা ৫ বারের সাক্ষাতে সবগুলো ম্যাচই হেরেছে বাংলাদেশ। সর্বশেষ দুই দলের দেখা হয়েছিল ২০২১ সালে কিরগিজস্তানে একটি ত্রিদেশীয় টুর্নামেন্টে। লাল-সবুজ জার্সিধারীদের হার ছিল ২-০ গোলে। কুয়েত সিটিতে যে ফিলিস্তিনের বিপক্ষে খেলতে নামবে বাংলাদেশ সেই ফিলিস্তিন আগের চেয়ে অনেক শক্তিশালী। গত জানুয়ারিতে কাতারে হওয়া এশিয়ান কাপেই তারা নিজেদের বদলে যাওয়া রূপটা দেখিয়েছে প্রথমবারের মতো শেষ ষোলোতে উঠে। এমন একটি দেশের বিপক্ষে দুটি ম্যাচে বাংলাদেশকে ‘কঠিন পরীক্ষাই’ দিতে হবে।
Advertisement
ফিলিস্তিন বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে নিজেদের ‘হোম’ হিসেবে বেছে নিয়েছে কুয়েতকে। গত নভেম্বরে গ্রুপের সবচেয়ে শক্তিশালী দল অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে এই মাঠে মাত্র ১-০ গোলে হেরেছিল তারা। আর বাংলাদেশ মেলবোর্নে সেই অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষেই হেরেছিল ৭-০ গোলে।
ফিলিস্তিনের বিপক্ষে ম্যাচে আক্রমণের যে স্রোত বয়ে যাবে বাংলাদেশের রক্ষণের ওপর, সেটি সামলানোর অনুশীলনটাই চলছে। ডিফেন্ডার তপু বর্মণ জানিয়েছেন সে কথা, ‘ফিলিস্তিন দলটা অনেক শক্তিশালী। তারা এশিয়ান কাপের নকআউট পর্বে খেলেছে। এ ম্যাচের আগে আমরা রক্ষণের ওপর জোর দিচ্ছি। রক্ষণে আমাদের ভালো করতে হবে। কোচ এসব নিয়ে কাজ করছেন। আমরাও মুখিয়ে আছি ম্যাচটির জন্য।’
কুয়েতে নেমেই প্রবাসী বাংলাদেশিদের অভ্যর্থনা পেয়েছে বাংলাদেশ ফুটবল দল। বাংলাদেশ দূতাবাসের কর্মকর্তারাও উপস্থিত ছিলেন। আর কুয়েত সিটিতে যেখানে অনুশীলন করছে বাংলাদেশ দল (আল শায়ের নামের ফুটবল ক্লাবের মাঠ), সেখানে প্রবাসী বাংলাদেশিরা সংখ্যায় বেশি হওয়ায় সুযোগ-সুবিধার দিক দিয়েও বাড়তি খাতিরই পাচ্ছে।
ম্যানেজার আমের খান জানালেন সে কথা, ‘আল শায়ের ফুটবল ক্লাবে অনেক বাংলাদেশি কাজ করেন। ইফতারের পরপরই আমরা অনুশীলনে নামি, এই সময় বাংলাদেশিরাই মাঠের ফ্লাডলাইট থেকে শুরু করে অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করে দিয়েছেন। চাহিদামতো দল সবকিছুই পেয়েছে।’
Advertisement
কুয়েতপ্রবাসীদের জন্য ভালো কিছুরই তাড়না অনুভব করছেন তপু, ‘এখানে আসার পর থেকে কুয়েতপ্রবাসী বাংলাদেশিরা আমাদের নানাভাবে সাহায্য-সহযোগিতা চালিয়ে যাচ্ছেন। বিমানবন্দরে নেমেই আমরা যে অভ্যর্থনা পেয়েছি, সেটি অসাধারণ। আশা করি বাংলাদেশি ভাইয়েরা মাঠে এসে দলকে সমর্থন দেবেন।’
সোহেল রানা বলেছেন, ‘আমরা অনেক দিন ধরেই ফিলিস্তিনের ম্যাচ দেখছি। ওরা কোন প্যাটার্নে খেলে তা আমরা জানি। এ বিষয়গুলো নিয়েই কাজ করছেন কোচ। তাদের বিপক্ষে আমরা কিভাবে খেলবো সেভাবেই অনুশীলন করছি।’
কুয়েতে পৌঁছানোর পর প্রথম অনুশীলন শেষে কোচ ক্যাবরেরা বলেছেন, ‘সৌদি আরবে দুই সপ্তাহের অনুশীলন শেষে কুয়েত পৌঁছানোর পর প্রথম দিনটি বিশ্রামেই ছিল ফুটবলাররা। এই প্রথম পূর্ণ অনুশীলন করিয়েছি। অনুশীলনসহ এখানকার অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা ভালো। বিশেষ করে ট্রেনিং মাঠটি খুবই ভালো। এখন আমরা ফিলিস্তিনের বিপক্ষে লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত। দলটি সম্পর্কে আমাদের ধারণা আছে। তারা এখন ফর্মের তুঙ্গে আছে। ফিলিস্তিনের বিপক্ষে খেলাটা আমাদের জন্য চ্যালেঞ্জেরই।’
কুয়েতে পৌঁছানোর পর বিমানবন্দরেই প্রবাসী বাংলাদেশিদের অভ্যর্থনা পেয়েছে ফুটবল দল। সে বিষয়ে কোচ বলেছেন, ‘আমরা এখানে আসার পর অনেক বাংলাদেশি স্বাগত জানিয়েছে। আমি প্রত্যাশা করি, তারা ম্যাচের দিন মাঠে আসবে এবং আমাদের সাপোর্ট দেবে।’
আরআই/আইএইচএস/