পুরান ঢাকা তথা যাত্রাবাড়ী, শনির আখড়া, ধোলাইপাড়সহ আশপাশের এলাকার মানুষের কেনাকাটার অন্যতম স্থল ঢাকার টিকাটুলিতে অবস্থিত রাজধানী সুপার মার্কেট। সহজ যাতায়াত, আর সাশ্রয়ী মূল্যে বিভিন্ন ডিজাইনের নানান বাহারি পোশাক মেলে এখানে। তাইতো স্থানীয়সহ আশপাশের এলাকার মানুষের আগ্রহ এ মার্কেটজুড়ে। তবে প্রতি বছর নতুন নতুন ট্রেন্ডি পোশাক আসলেও এবার গত বছরের আফগান, নায়রা আর সারারাতেই আশার আলো দেখছেন বিক্রেতারা। ক্রেতারাও ঝুঁকছেন এসব পোশাকেই।
Advertisement
সাইনবোর্ড থেকে কেনাকাটা করতে আসা আতিকা মেহজাবিন জাগো নিউজকে বলেন, রাজধানী মার্কেট থেকে ছোট বেলায় আমার বাবা মা আমাকে নিয়ে কেনাকাটা করতে আসতেন, তখন আমি অনেক বায়না ধরে পছন্দের পোশাক কিনতাম। এখন আমার স্বামী-সন্তানদের নিয়ে আসি কেনাকাটা করতে, এখন বাচ্চারা আমার কাছে বায়না ধরে। মেয়ের জন্য আফগানি ড্রেস নিয়েছে ২ হাজার টাকায়। এবার দেখলাম এটাই বেশি চলছে। স্বামী, ছেলে ও নিজের জন্যও কেনাকাটা করবো। এখানে দাম কিছুটা কমই।
নেই নতুন কোনো ট্রেন্ডি পোশাকরাজধানী মার্কেটে এবার নতুন কোন ট্রেন্ডি পোশাক আসেনি। বিগত বছরের নতুন আসা ড্রেসগুলোতেই এবারও আগ্রহ দেখাচ্ছেন ক্রেতারা। ফলে গুজরাতি, আফগানেই ভরসা বিক্রেতাদের।
বিক্রেতারা জানিয়েছেন, সুতির থ্রি পিস ১ হাজার ৫০০ টাকা থেকে শুরু। জর্জেট থ্রি পিস সাড়ে ৩ হাজার থেকে ৪ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে মানুষ পার্টি ড্রেস বেশি নিচ্ছে। দাম বেশি হলেও মানুষ এসব পোশাকেই ঝুঁকছে।
Advertisement
মম ফ্যাশনের ম্যানেজার ফসিউদ্দিন টিপু জাগো নিউজকে বলেন, গুজরাতি, আলিয়া কাট, নায়রা কাট, আফগান ড্রেস বিক্রি করছি। এখন গুজরাতি ও আফগান বেশি চলছে। গতবারের তুলনায় এবার দাম অনেক বেশি। গত বছরের তুলনায় এক একটা ড্রেসে হাজার-পনেরশ টাকা বেশি পড়বে। বাজারমূল্য অনেক বেশি সেজন্য দামটা এবার বেশি। বাচ্চাদেরও আফগান ড্রেসটা বেশি চলছে।
ওয়েস্টার্ন স্টাইলের ম্যানেজার দেলোয়ার হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, আমাদের এখানে থ্রিপিস বিক্রি হয়। এবার আলিয়া কাট, নায়রা, সারারা, আফগান ড্রেস বেশি বিক্রি হচ্ছে। আফগান ২ হাজার ৫০০ টাকা, নায়রা তিন হাজার, সারারা ২ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে নতুন কোন ড্রেস আসেনি। যেসব ড্রেস আমরা এবার বিক্রি করছি, সেগুলো গতবার অনেকে পায়নি। বসুন্ধরাসহ বড় বড় মার্কেটে গতবার চলেছে। এবার আমাদের এসব মার্কেটে এগুলো হিট। আমরা আশা করি এবার নায়রা আর আফগানটা বেশ ভালো চলবে।
কেনাকাটা করতে আসা শারমিন আক্তার জাগো নিউজকে বলেন, এবারতো আফগান আর নায়রা বেশি চলছে। কিন্তু দাম আগের চেয়ে বেশি। আফগান কেনার ইচ্ছা আছে। দেখা যাক দামে মিললে কিনবো।
নায়রা-আফগানে আগ্রহ শিশুদেরওবিক্রেতারা জানান, বাচ্চাদের ফ্রক ১৫০০ টাকা থেকে শুরু। আর পার্টি ফ্রক বিক্রি হচ্ছে সাড়ে তিন থেকে চার হাজার টাকায়। তবে ড্রেসের ক্ষেত্রে নায়রা, আফগান ড্রেসে বেশি আগ্রহ শিশুদের।
Advertisement
মীম ফ্যাশনের স্বত্বাধিকারী মাহমুদ হাসান জাগো নিউজকে বলেন, এবার বাচ্চাদের আফগান, নায়রা, আলিয়া কাট ড্রেস বেশি চলছে। দামের দিক থেকে আফগান ড্রেস আছে ১ হাজার ৫০০ টাকায়, আফগানের ড্রেসই আবার ৪ হাজার টাকা দামের আছে। এগুলো বিভিন্ন ডিজাইন ও কাজের ওপর দাম নির্ভর করে। নায়রা কাট ড্রেসটা এক হাজার থেকে তিন হাজার টাকায় পাওয়া যাবে। মানুষ ১ হাজার ৫০০ থেকে দুই হাজার টাকার মধ্যের ড্রেসই বেশি কিনছে। বাচ্চাদের পার্টি ফ্রক বেশি চলে। এগুলো প্রকারভেদে ৭০০ টাকা থেকে সাড়ে তিন থেকে চার হাজার টাকা দামের আছে।
সোহেল গার্মেন্টসের স্বত্বাধিকারী জনি জাগো নিউজকে বলেন, আমার এখানে হাজার, ১ হাজার ২০০, ১ হাজার ৫০০ টাকায় বাচ্চাদের ড্রেস আছে। সুতি কাজের ড্রেসের দাম ৬০০, ৭০০ টাকার। বাচ্চাদের নায়রা, আফগান, আলিয়া কাট বেশি চলছে। এগুলোই চলছে অনেক বেশি। এখন বেচাকেনা একটু কম, সামনে একটু বিক্রি বাড়বে বলে আশা করছি।
সাড়ে ৪০০ থেকে ১৫ হাজার টাকায় মিলবে শাড়িশাড়ির বিক্রেতারা জানিয়েছেন, রাজধানী মার্কেটে বিভিন্ন দামের নানান ক্যাটাগরির শাড়ি আছে। বি-প্লাস, ডিজিটাল কাজ করা, ডিজিটাল নরমাল, টাঙ্গাইলের দেশি শাড়ি, জামদানি, হাইব্রিড হাফসিল্কের শাড়ি, প্রিন্টের কাজ করা শাড়ি আছে। দামের দিকে দেখলে ৪৫০ টাকা থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ৫ হাজার টাকাও আছে। টাঙ্গাইলের শাড়ি সর্বনিম্ন সাড়ে ৪০০ টাকায় তাতপ্রিন্ট শাড়ি আছে। আর টাঙ্গাইলের কাতান, বেনারসি ভালো দামি শাড়ি আছে। জামদানির ১৫ হাজার টাকা পর্যন্ত দামের শাড়ি আছে।
গ্রামীন শাড়িজের স্বত্বাধিকারী সাফা শেখ জাগো নিউজকে বলেন, ঈদ কেন্দ্র করে এখনো বেচাকেনা কম। আশা করি সামনে কাস্টমার বাড়বে, আরও কেনাবেচা শুরু হবে। শবে বরাতের আগে বেচাকেনা ভালো গেছে। এখন রোজা তো মাত্র শুরু হলো। আশা করি সামনের দিকে আরও ভালো হবে বিক্রি।
ডেমরা জামদানি স্টোরের ম্যানেজার রনি জাগো নিউজকে বলেন, টাঙ্গাইল শাড়ি ৭০০ টাকা থেকে শুরু। এক হাজার, আড়াই হাজার, চার হাজার টাকা দামের পর্যন্ত টাঙ্গাইলের শাড়ি আছে। টাঙ্গাইলের তাতের শাড়ির দামটা বেশি। ঢাকাই জামদানিও ভালো, দুই হাজার টাকা থেকে শুরু। জামদানি ১৫ হাজার টাকা দামের পর্যন্ত আছে। কম দামের ক্ষেত্রে হাজারের মধ্যে সিল্কের, হাফ সিল্কের শাড়ি আছে। মানুষ সব ধরনের শাড়ি কিনছে। এবার পার্টি শাড়ি এসেছে। পার্টি শাড়ি চার-পাঁচ হাজার টাকা দামের মধ্যে আছে। এছাড়াও লেহেঙ্গা আছে তিন হাজার টাকা থেকে শুরু, ভালো লেহেঙ্গা নিতে গেলে পাঁচ-ছয় হাজার টাকা পড়বে। এখানে ইন্ডিয়ান লেহেঙ্গা আছে, মিরপুরের লেহেঙ্গা আছে।
৫০০ টাকায় মিলবে পাঞ্জাবিশরীফ পাঞ্জাবির বিক্রয়কর্মী আব্দুল লতিফ জাগো নিউজকে বলেন, রাজধানী মার্কেটে মানুষ একটু কম দামে পায় বলেই আসে। আমাদের এখানে ৫০০ টাকা থেকে শুরু করে বিভিন্ন দামের পাঞ্জাবি আছে। সাদা সুতির পাঞ্জাবি আছে, স্যামসন কটন, প্রিন্টের পাঞ্জাবি আছে হাজারের মধ্যে। আর হাজারের ওপরে গেলে সিক্যুয়েন্স, কাতান পাঞ্জাবি আছে। কাতানের ২ হাজার টাকা দামের পাঞ্জাবিও আছে। তবে মানুষ হাজারের মধ্যে বেশি কিনছে। নতুন কিছু আসেনি এবার।
তাজ পাঞ্জাবির ম্যানেজার বিল্লাল হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, বাচ্চাদের পাঞ্জাবি চারশ টাকা থেকে শুরু করে এক হাজার টাকা দামের পর্যন্ত আছে। এখন সিম্পল কাজের পাঞ্জাবি বেশি চলছে। তবে সিক্যুয়েন্স, সুতি কাপড়ের উপর কাজ করা, ইন্ডিয়ান পাঞ্জাবিও চলছে। আর বড়দের পাঞ্জাবি পাঁচশ টাকা থেকে শুরু। সুতি, কাতানের মধ্যে জলছাপ পাঞ্জাবি আছে। তবে সুতির পাঞ্জাবি বেশি কিনে, এগুলো হাজারের মধ্যে পাওয়া যায়।
আল্লাহর দান গার্মেন্টসের স্বত্বাধিকারী আসলাম জাগো নিউজকে বলেন, আমাদের এখানে চারশ থেকে হাজার ১ হাজার ২০০ টাকার প্যান্ট আছে। বাংলা, থাই প্যান্ট পাওয়া যাচ্ছে। তবে এগুলো ইন্ডিয়ান, থাই কপি প্যান্ট। বেশি চলে থাই কপি প্যান্টগুলো। বেশিরভাগ ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা দামের প্যান্ট কিনে। আমাদের সীমিত লাভ। কম দামে পায় বলেই এখানে আসে।
খাদিম শোরুমের স্বত্বাধিকারী আব্দুল্লাহ আল মামুন জাগো নিউজকে বলেন, আমাদের এখানে সাড়ে ৫০০ থেকে ১৫০০ টাকার মধ্যে শার্ট পাওয়া যাচ্ছে। ভারতীয় শার্ট হাজারের ভিতরে আছে, হাজারের বেশিও আছে। বেশি দামের মধ্যে অরবিন্দ, দেশ আরমানি, জিংক প্লাস আছে। তবে ফরমাল আর ক্যাজুয়াল ৫০০ থেকে হাজার টাকা দামের শার্ট বেশি চলছে।
তিনি আরও জানান, টিশার্টের মধ্যে চায়না টিশার্টটা ভালো চলে। এখানে ৭০০ থেকে ১ হাজার ৫শ টাকা দামের টিশার্ট আছে। বিক্রি বেশি হয় মাঝামাঝি দামের টিশার্ট।
৪০০ থেকে ২ হাজার ২০০ টাকায় মিলবে পছন্দের জুতাব্রাইট শ্যূ এর বিক্রয়কর্মী সালমান জাগো নিউজকে বলেন, আমাদের সব রেঞ্জের জুতাই আছে। ছেলেদের ৪০০ থেকে হাজার ১ হাজার ২০০ টাকার জুতা আছে। সর্বনিম্ন স্লিপার জুতা চারশ টাকা দাম। আবার লোফার, কেডসের দাম হাজার ১ হাজার ২০০ টাকা। মানুষ সব ধরনের জুতাই কেনে। শিশুদের জুতা ৫০০ টাকা থেকে শুরু, বিভিন্ন দামের জুতা আছে বাচ্চাদের জন্য।
মেয়েদর জুতা প্রসঙ্গে তিনি জানান, মেয়েদের জুতা স্লিপার থেকে নাগরা সব ধরনের জুতা আছে। এখানে স্লিপার ৪০০ টাকা থেকে শুরু হচ্ছে। আবার ২ হাজার ২০০ থেকে আড়াই হাজার টাকার জুতাও আছে। এখন ৮০ শতাংশ জুতাই নতুন এসেছে। এবার নাগরা হাইপ বেশি চলছে, এগুলো ১ হাজার ৮০০ টাকা। আবার গাগড়াও ভালো চলছে, সেটাও দাম একই। ডিজাইন শুধু একটু ভিন্ন। এগুলোর চাহিদা একটু বেশি। হিল জুতা ১ হাজার ৫০০ থেকে ১ হাজার ৬০০ টাকা।
আছে দুই হাজার টাকা দামের চুড়িঋতু চুড়ি হাউসের স্বত্বাধিকারী শাকিল জাগো নিউজকে বলেন, আমাদের এখানে ভেলবেট, কাচের, সবটিল, কাজ করা চুড়ি, রেশমী চুড়িসহ অনেক চুড়ি আছে। ভেলবেট চুড়ি সেট ১৫০ টাকা, কাচের চুড়ি ৫০ টাকা, প্লেইনটা নিলে পড়বে ৪০ টাকা, আবার সেমি কাচের কাজ করা চুড়ি ১০০ টাকা সেট। জয়পুড়ি চুড়ি তিনশ টাকা, চূড়া আইটেমের চুড়ি ১২শ টাকা দাম। দুই হাজার টাকা দামের চুড়িও আছে।
তামান্না কসমেটিকসের বিক্রয়কর্মী আব্দুর রশিদ জাগো নিউজকে বলেন, আমাদের এখানে সব রেঞ্জের চুড়ি আছে। একশ থেকে শুরু করে চারশ টাকা দামের চুড়ি আছে। সিটি গোল্ডের চুড়ি একশ টাকায় আছে। সেটা আবার ভালো মানের চারশ টাকারও আছে। বিক্রি বেশি হয় কম দামেরটাই। তায়েবা চুড়ি আছে তিনশ থেকে চারশ টাকা দামের। আমাদের কাছে সব দামের কসমেটিসক আইটেমই আছে।
আড়াইশ থেকে আড়াই হাজার টাকায় মিলবে লুঙ্গিবিক্রেতারা জানান, রাজধানী মার্কেটে আমনত শাহ, বুখারিসহ অনেক ধরনের লুঙ্গি আছে। তবে সবচেয়ে বেশি চলে আমানত শাহ লুঙ্গি। অনুসন্ধান লুঙ্গিও ভালো চলছে। অনেক আমানত শাহ লুঙ্গির মতো ভালো মানের হওয়া চলছেও ভালো।
ডেমরা লুঙ্গি সেন্টারের বিক্রয়কর্মী আলমাস জাগো নিউজকে বলেন, আড়াইশ টাকা থেকে আড়াই হাজার টাকা দামের লুঙ্গি আছে। সুতির নরমাল কাপড়ের লুঙ্গি তিনশ টাকা। আমানত শাহসহ বিভিন্ন কোয়ালিটির লুঙ্গি আছে। আমানত শাহ দুই হাজারের বেশি দামের লুঙ্গি আছে। এখানে মূলত পাঁচশ থেকে ছয়শ টাকা দামের লুঙ্গি বেশি চলে। আমানত শাহ খুবই টেকশই, চলেও ভালো।
আইএইচআর/এমআইএইচএস/জিকেএস