মতামত

সরকারের বেঁধে দেয়া দামে বাজারে কেন পণ্য মেলেনা?

যখনই দেশে কোনো এক নিত্যপণ্যের দামের লাগাম ছাড়িয়ে যায়। মানুষ সরকারের নানা সমালোচনা করতে থাকে। সংবাদপত্র - টেলিভিশনে গণমানুষের ক্ষোভের কথা প্রচার হতে থাকে। তখনই সরকারের পক্ষথেকে পণ্যের দাম বেঁধে দেয়া হয়। দুঃখজনক হলেও সত্যি যে, সরকারের বেঁধে দেয়া দামে কোনো দিনই কোনো পণ্য বাজারে পাওয়া যায়না। কিন্তু কেন?

Advertisement

আমরা সবাই জানি, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি কম ও নির্দিষ্ট আয়ের মানুষকে বিপাকে ফেলেছে- এমন পরিস্থিতিতে ক্রেতাদের কিছুটা স্বস্তি দিতে চিনি, পিয়াজ, খেজুর ও সয়াবিন তেলের মতো কয়েকটি পণ্যের দাম বেঁধে দিয়েছে সরকার। কিন্তু দামতো কমেইনি, উল্টো কিছু পণ্যের দাম আরও বেড়েছে।

খেজুরের দাম সহনীয় করতে ইফতারের অন্যতম এই উপকরণের দুটি ধরনের দাম মঙ্গলবার বেঁধে দিয়েছে সরকার। সরকারের সিদ্ধান্ত অনুসারে, খুচরা বাজারে অতি সাধারণ ও নিম্নমানের খেজুরের কেজিপ্রতি দাম হবে ১৫০ থেকে ১৬৫ টাকা এবং বহুল ব্যবহৃত জাইদি খেজুরের প্রতি কেজির দাম ১৭০ থেকে ১৮০ টাকার মধ্যে থাকতে হবে। কিন্তু কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, প্রতি কেজি জাইদি খেজুরের দাম ২৫০ টাকা থেকে শুরু করে ৩২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অন্যদিকে অতি সাধারণ ও নিম্নমানের খেজুর বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকার আশপাশে। এ ছাড়া সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) বাজার দরের প্রতিবেদন অনুযায়ী, গতকাল ঢাকার বাজারে কেজিপ্রতি সাধারণ মানের খেজুর বিক্রি হয়েছে ২৮০ থেকে ৪৫০ টাকায়।

বাজারে সরকার নির্ধারিত দাম কার্যকর না হওয়ার বিষয়ে খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, পাইকারি বাজার থেকে তারা যে খেজুর কিনেছেন, তার দাম বাড়তি ছিল। কোনো কোনো ক্ষেত্রে সরকার খুচরা বাজারের জন্য যে দাম বেঁধে দিয়েছে, পাইকারি বাজারেই তার কাছাকাছি দামে তাদেরকে খেজুর কিনতে হয়েছে। ফলে সরকারের নির্ধারিত দামে খেজুর বিক্রি করতে হলে তারা লোকসানে পড়বেন।

Advertisement

শেওড়াপাড়া বাজারের খেজুর বিক্রেতা হামিদ বলেন, পাইকারিতেই ১৭০ টাকার বেশি দামে কিনতে হয়েছে, তাহলে এই দামে কীভাবে বিক্রি করবো। আমরা যদি কম দামে কিনতে পারি তাহলে কম দামে বিক্রি করতে অসুবিধা নাই।

ঢাকা মহানগর ফল আমদানি-রপ্তানিকারক ও আড়তদার ব্যবসায়ী বহুমুখী সমবায় সমিতির সভাপতি সিরাজুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেছেন, খেজুর আমদানি করতে হলে ১৪০ টাকা শুল্ক দিতে হয়। সঙ্গে অন্যান্য আরও খরচ আছে। ফলে সরকার নির্ধারিত দামে খেজুর বিক্রি করা সম্ভব না। সরকার যদি শুল্ক ফ্রি করে দেয়, তাহলে এই দামে খেজুর বিক্রি করতে পারবো।

এদিকে খেজুরের মতো চিনির দামও নির্ধারণ করে দিয়েছে সরকার। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, পরিশোধিত খোলা চিনির দাম নির্ধারণ করা হয়েছে প্রতি কেজি ১৪০ টাকা এবং প্যাকেটজাত চিনির সর্বোচ্চ দর ধার্য করা হয়েছে ১৪৫ টাকা। তবে এই দামে কোথাও মিলছে না চিনি। বাজারে প্রতি কেজি চিনি বিক্রি হচ্ছে ১৪৮ থেকে ১৫০ টাকায়। ওদিকে বোতলজাত ও খোলা সয়াবিন তেলের নতুন দাম ১লা মার্চ থেকে কার্যকর হওয়ার কথা থাকলেও দুই সপ্তাহেও তা কার্যকর হয়নি।

টিসিবি’র হিসেবে ঢাকার বিভিন্ন বাজারে খোলা সয়াবিন তেল বিক্রি হয়েছে ১৫৫ থেকে ১৬০ টাকায়। আর বোতলজাত সয়াবিন তেল বিক্রি হয়েছে ১৬৮ থেকে ১৭০ টাকায়। যদিও খোলা সয়াবিন তেল ১৪৯ টাকা এবং বোতলজাত সয়াবিন তেল ১৬৩ টাকায় বিক্রি হওয়ার কথা। অর্থাৎ নির্ধারিত দামের চেয়ে ১০ টাকারও বেশি দামে সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে পিয়াজও। বাজারে পণ্যটির কেজি সর্বোচ্চ ১০০ টাকা। যদিও দেশি পিয়াজের দাম ৬৫ টাকা নির্ধারণ করে দিয়েছিল বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। একই অবস্থা ডিমসহ অন্যান্য পণ্যের দামেও।

Advertisement

কিছুদিন আগেও আলু - পেঁয়াজের দাম নির্ধারণ করে দিয়েছিল সরকার। কেউ কি সেই দামে বাজারে গিয়ে আলু বা পেঁয়াজ কিনতে পেরেছেন? দাম বেঁধে দিয়েই যেন দায়িত্ব শেষ। সেই দামে পণ্য কেন ক্রেতারা বাজারে গিয়ে পাচ্ছেনা। তার দায় কেই নিচ্ছেনা।

সরকার থেকে শুধুমাত্র দাম বেঁধে দিলেই হবে না। নির্ধারিত দামে পণ্য বিক্রির জন্য বাজার তদারকি বাড়াতে হবে। অপরাধীদের শাস্তির আওতায় আনতে হবে। তাছাড়া বেঁধে দেয়া দামে কখনো জিনিস বিক্রি হবে না। ব্যবসায়ীরা দাবি করছেন খেজুর আমদানিতে তাদেরকে ১০০ টাকার বেশি ডিউটি ফি দিতে হচ্ছে। আসলেই এত টাকা ফি দিতে হচ্ছে কিনা এনবিআরকে ক্লিয়ার করতে হবে।

বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, শুধু দাম বেঁধে দিলেই হবে না। নির্ধারিত মূল্যে পণ্য বিক্রি করতে হলে তদারকি বাড়াতে হবে। অপরাধীদেরকে শাস্তি দিতে হবে। নইলে কাজের কাজ কিছুই হবেনা।

লেখক : সাংবাদিক।

এইচআর/জেআইএম