মতামত

প্রকৃত রোজা আত্মাকে আলোকিত করে

আজ রহমতের দশকের সপ্তম দিন। আমাদের সবার আত্মবিশ্লেষণ করা উচিত, এই যে রোজাগুলো আমরা পালন করছি আল্লাহপাকের সন্তুষ্টির জন্য, আসলেই কি আমরা এ দিনগুলোতে আল্লাহর নির্দেশমত জীবন পরিচালিত করেছি?

Advertisement

একজন রোজাদার যখন জাগতিক সব মন্দকাজ বর্জন করে একাগ্রচিত্তে রোজা রাখে তখন তার আত্মার শুদ্ধি লাভ হয়। ঐ আত্মার সুপ্ত পবিত্র প্রবৃত্তিগুলিতে নেক পানি সিঞ্চনের ফলে আত্মাগুলিতে প্রাণসঞ্চারিত হয়। এমতাবস্থায় সেসব আত্মায় আধ্যাত্মিক শক্তি বৃদ্ধি পায়। আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের অধিকতর সান্নিধ্য লাভে সামর্থ হয়। যেব্যক্তি রোজা রেখে বৃথা কাজকর্ম করে, মিথ্যা কথা বলে, ধোকা দেয়, ব্যবসায় মানুষকে প্রতারিত করে, এমনটি করলে এই রোজা রাখা তার জন্য কোন কাজে লাগবে না। বরং এটি শুধুমাত্র উপবাস থাকারই নামান্তর। আমাদের প্রিয়নবি (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি মিথ্যা কথা বলা এবং এর ওপর আমল করা থেকে বিরত থাকেনা আল্লাহতায়ালার জন্য তার উপবাস থাকা এবং পিপাসার্ত থাকার কোনো প্রয়োজন নেই। অর্থাৎ তার রোজা রাখা বেকার বলে গণ্য হবে’ (বুখারি, কিতাবুস সওম)।

অর্থাৎ যখন মানুষ রোজার প্রকৃত উদ্দেশ্য থেকে গাফেল হয়ে যায় তখন সে শুধু নিজেকে উপবাসই রাখে যা আল্লাহতায়ালার জন্য কোনো প্রয়োজন নেই। আল্লাহ মানুষের অন্তর দেখেন, কোন নিয়তে সে রোজা রাখছে এটাই মূল বিষয়।

হজরত মহানবি (সা.) এরশাদ করেন, রমজান মাসে সিয়াম পালন পূর্ববর্তী রমজান থেকে কৃত গুনাহসমূহকে মিটিয়ে দেয়; যদি কবিরা গুনাহ থেকে বেঁচে থাকা হয়’(মুসলিম। হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, যারা হিদায়াতকে বর্জন করার ক্ষেত্রে আল্লাহর শক্তিকে ভয় করেন এবং তার নির্দেশকে সত্য প্রতিপন্ন করার কারণে রহমতের আশা ছাড়েন না তারাই মুত্তাকী। মাসব্যাপী রোজা পালন করে যদি তাকওয়া অর্জন করা না যায় তাহলে এ রোজা অর্থহীন উপবাস ও নিছক আত্মপ্রবঞ্চনায় পর্যবসিত হয় (মুসলিম)।

Advertisement

হজরত ফাতেমা যাহরা (রা.) বলেছেন: ‘যে ব্যক্তি নিজের জিহবা, চোখ, কানসহ অন্যান্য অঙ্গ প্রত্যঙ্গকে সংযত করতে পারে না তার রোজা কোনো কাজেই আসবে না’ (বিহারুল আনওয়ার, খণ্ড ৯৩, পৃষ্ঠা ২৯৫)। একজন ব্যক্তির কেবলমাত্র অভুক্ত আর পিপাসার্ত থাকাই রোজার মূল উদ্দেশ্য নয়। কেননা মহানবি (সা.) বলেছেন: ‘তোমাদের কেউ যখন কোনদিন রোজা রাখে, সে যেন অশ্লীল কথা না বলে এবং গোলমাল ও ঝগড়াঝাটি না করে। যদি কেউ তাকে গালি দেয় অথবা কেউ তার সাথে ঝগড়াঝাটি করে তবে তার বলা উচিত, ‘আমি রোজাদার’ (বুখারি)।

মহানবি (সা.) আমাদেরকে বুঝিয়ে দিয়েছেন, যারা রমজান মাসে প্রবেশ করেছে এবং আন্তরিকতার সাথে রোজা রাখছে তাদের চেহারায় এক পবিত্র পরিবর্তন দেখা যায়, তাদের আত্মা নূরানী হয়ে যায় এবং তার জন্য জান্নাতের দরজা খুলে দেয়া হয়। আর শয়তানকেও শিকল দিয়ে বেঁধে রাখা হয়। কিন্তু যদি কোনো ব্যক্তি রমজান থেকে কল্যাণ না উঠিয়ে কেবল সেহরি আর ইফতার করে তার জন্য এই রোজা কোনো কাজের নয়। প্রকৃত রোজা রোজাদারের আত্মাকে করে আলোকিত।

হে পরম দয়াময় আল্লাহ! পবিত্র রমজান মাসের বরকত ও কল্যাণ থেকে তুমি আমাদেরকে কল্যাণমণ্ডিত কর, আমিন।

লেখক: প্রাবন্ধিক ও গবেষক।masumon83@yahoo.com

Advertisement

এইচআর/জিকেএস