জাতীয়

জিম্মিদের উদ্ধারে ‘মধ্যস্থতাকারী’দের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে বাংলাদেশ

ভারত মহাসাগরে সোমালি জলদস্যুদের হাতে জিম্মি বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আবদুল্লাহর ২৩ নাবিককে উদ্ধারে ‘মধ্যস্থতাকারী’ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু হয়েছে। এমভি আবদুল্লাহর মালিকপক্ষ কবির গ্রুপ ও সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তর এরই মধ্যে স্বীকৃত বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। তবে মুক্তিপণ বা জিম্মিদের মুক্তির বিষয়ে জলদস্যুরা এখনো যোগাযোগ করেনি।

Advertisement

রোববার (১৭ মার্চ) সন্ধ্যায় কবির গ্রুপের মিডিয়া উপদেষ্টা মিজানুল ইসলাম জাগো নিউজকে এসব তথ্য জানান।

তিনি বলেন, ‘সোমালিয়া উপকূলে ছিনতাই হওয়া জাহাজ ও জিম্মি নাবিকদের উদ্ধারে সারাবিশ্বে বেশকিছু ‘মধ্যস্থতাকারী’ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান আছে। যদিও দস্যুরা এখনো যোগাযোগ করেনি। তবে আমরা একটু আগেভাগে ‘মধ্যস্থতাকারী’দের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেছি। যদি জলদস্যুদের পক্ষ থেকে কোনো প্রস্তাব পাওয়া যায়, তা যেন আমরা জানতে পারি।’

তবে কয়টি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে এ বিষয়ে যোগাযোগ হয়েছে তা এখনই জানাতে চাননি মিজানুল।

Advertisement

তিনি বলেন, ‘এটি স্পেসিফিকলি (নির্দিষ্টভাবে) বলছি না। তারাও আমাদের কিছু জানাতে পারেনি। কারণ জলদস্যুদের পক্ষ থেকে এখনো কারও সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়নি।’

জলদস্যুদের হাতে জিম্মি ২৩ নাবিক

মিজানুল ইসলাম মনে করেন, জলদস্যুরা এখনো এমভি আবদুল্লাহকে নিয়ে নিজেদের জন্য স্বস্থির অবস্থান তৈরি করতে পারেনি।

আরও পড়ুন

Advertisement

সোমালিয়ান জলদস্যুদের দখলে বাংলাদেশি জাহাজ, ২৩ নাবিক জিম্মি) ঈদের আগে পরিবারের কাছে ফেরার প্রত্যাশা জিম্মি নাবিকদের

তিনি বলেন, ‘মূলত দস্যুরা নিজেরাই এখনো সেফ নয়। তাই তারা বারবার স্থান পরিবর্তন করছে। হয়তো একটু সময় নিয়ে সেটেল হলে, তারা আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করবে। কারণ এটা তাদের ব্যবসা, মুক্তিপণের জন্যই জাহাজটি ছিনতাই করা হয়েছে।’

জিম্মি নাবিকদের উদ্ধারে নিজেদের প্রস্তুতির কথা জানিয়ে কবির গ্রুপের এ কর্মকর্তা বলেন, ‘এই মুহূর্তে আমরা শুধু নাবিকদের জীবিত উদ্ধারের চেষ্টা করছি। জাহাজ উদ্ধরের প্রসঙ্গটি পরের বিষয়।’

তিনি জানান, যেহেতু নাবিকদের মুক্ত করতে মুক্তিপণ লাগবেই। এজন্য এস আর শিপিংয়ের পক্ষ থেকে বিমা কোম্পানির সঙ্গেও যোগাযোগ করা হয়েছে।

এদিকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মেরিটাইম অ্যাফেয়ার্স ইউনিট প্রধান অবসরপ্রাপ্ত রিয়ার অ্যাডমিরাল মো. খুরশেদ আলম জানিয়েছেন, এমভি আবদুল্লাহ জলদস্যুদের নিয়ন্ত্রণে যাওয়ার মুহূর্তে ইউরোপীয় ইউনিয়নের একটি জাহাজ অ্যাকশনে যাওয়ার জন্য বাংলাদেশের অনুমতি চেয়েছিল। তবে নাবিক, ক্রু এবং অন্যদের প্রাণনাশের আশঙ্কায় বাংলাদেশ সরকার অ্যাকশনের অনুমতি দেয়নি।

আরও পড়ুন

বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আবদুল্লায় জিম্মি যারা ‘আমার জীবনের বিনিময়ে হলেও ছেলেরে ফেরত চাই’

তিনি বলেন, ‘আমরা নেগোসিয়েশন করছি, কীভাবে শান্তিপূর্ণ উপায়ে নাবিক ও ক্রুদের কোনো ক্ষতি ছাড়াই জাহাজটি উদ্ধার করা যায়।’

বিভিন্ন গণমাধ্যমে জিম্মিদের জন্য খাবার পাঠানোর চেষ্টার প্রসঙ্গটি উড়িয়ে দিয়ে কবির গ্রুপের কর্মকর্তা মিজানুল ইসলাম বলেন, ‘যেখানে তাদের সঙ্গে আমাদের কোনো যোগাযোগই নেই, সেখানে আমরা খাবার পাঠাবো কী করে! এছাড়া গত ১৪ বছরের ইতিহাসে জলদস্যুরা কোনো জিম্মিকে না খাইয়ে মেরে ফেলেছে এমন কোনো রেকর্ড নেই।’

জিম্মিদের ওপর নজরদারি বাড়িয়েছে দস্যুরা

এদিকে জিম্মি নাবিকদের পরিবারের কাছে খবর নিয়ে জানা গেছে, নাবিকরা এখন আর সরাসরি যোগাযোগ রাখছেন না। তবে খুদেবার্তায় অনেকে তাদের পরিবারকে নিজেদের অবস্থার কথা জানিয়েছেন। শেষ খবর (রোববার রাত ৮টা) পাওয়া পর্যন্ত নাবিকরা ভালো আছেন বলে জানা গেছে।

তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সূত্র বলছে, জলদস্যুদের কবলে থাকা মাল্টার পতাকাবাহী জাহাজ এমভি রুয়েনে ভারতীয় বাহিনীর অভিযানের পর থেকে নাবিকদের ওপর কড়াকড়ি আরোপ করেছে দস্যুরা। এর মধ্যেই নাবিকরা রোজা পালন করছেন।

নাবিকদের দ্রুত উদ্ধারে চেষ্টা করছে সরকার

তবে এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি কবির গ্রুপের গণমাধ্যম উপদেষ্টা মিজানুল ইসলাম।

জলদস্যুরা যে প্রক্রিয়ায় মুক্তিপণ আদায় করে

জাহাজ মালিকদের কাছ থেকে জলদস্যুরা ইউএস ডলারেই মুক্তিপণ আদায় করে। মুক্তিপণের অর্থ পরিশোধের জন্য দুটি পদ্ধতি পছন্দ তাদের। একটি হলো প্রাইভেট হেলিকপ্টার থেকে ওয়াটার প্রুফ ব্যাগে নির্ধারিত স্থানে ফেলে দিতে হয় মুক্তিপণের টাকা। অথবা বড় জাহাজ থেকে ছোট নৌকায় পাঠাতে হয় টাকা ভর্তি ব্যাগ। মাঝেমধ্যে প্যারাসুটের মাধ্যমেও মুক্তিপণ জলদস্যুদের কাছে পৌঁছে দিতে হয়। গোটা প্রক্রিয়া হয় আন্তর্জাতিক মধ্যস্থতাকারী সংস্থার মাধ্যমে। এদের বেশিরভাগই যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যভিত্তিক প্রতিষ্ঠান।

আরও পড়ুন

সোমালি জলদস্যুদের কেন থামানো যাচ্ছে না? জলদস্যুদের হাত থেকে জাহাজ মুক্ত করলো ভারতীয় নেভি, ১৭ ক্রু উদ্ধার

বাংলাদেশ মার্চেন্ট মেরিন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘জলদস্যুরা ঝুঁকি নিয়ে মুক্তিপণ আদায় করলেও ভোগ করে তিনটি পক্ষ। প্রথমত, যারা জাহাজ ছিনতাই করে তাদের হাতে এক ভাগ। এ দল মূল টাকার ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ পায়। দ্বিতীয়ত, মধ্যস্থতাকারী ও মুক্তিপণের অর্থ পৌঁছে দেওয়ার কাজে নিয়োজিত পরিবহন সংস্থা। বড় অংশটি যায় মূল দস্যুদের হাতে, যারা পুরো চক্রটি পরিচালনা করে।’

এর আগে গত ১২ মার্চ বাংলাদেশ সময় দুপুর ১টার দিকে ভারত মহাসাগরে সোমালি জলদস্যুদের কবলে পড়ে বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ। সেসময় জাহাজটি সোমালিয়া উপকূল থেকে ৫৭০ ন্যাটিক্যাল মাইল দূরে অবস্থান করছিল। দস্যুদের কাছে জিম্মি হন ২৩ বাংলাদেশি নাবিক ও ক্রু। বাংলাদেশি জাহাজটি গত দুদিন ধরে সোমালিয়ার গোদবজিরান উপকূলের ৪ নটিক্যাল মাইল দূরে নোঙর করে রেখেছে জলদস্যুরা।

এএজেড/ইএ/জিকেএস