জাতীয়

সার্বিক শিক্ষাব্যবস্থায় কোথায় যেন ভুল থেকে যাচ্ছে

‘বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো জায়গায় এসে একজন শিক্ষার্থী কীভাবে আত্মহত্যার পথ বেছে নিতে পারছে! যে কোনো মৃত্যুই দুঃখজনক। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থী এভাবে মুত্যুর পথ বেছে নেবে এটি ভাবা যায় না। এমন মৃত্যু কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না। এ পথ এখানেই শেষ হোক।’

Advertisement

বলছিলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. গোলাম সাব্বির সাত্তার। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী অবন্তির আত্মহত্যা এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের দায় নিয়ে কথা বলেন জাগো নিউজের সঙ্গে।

অধ্যাপক ড. গোলাম সাব্বির সাত্তার বলেন, ‘আমার কেন যেন মনে হচ্ছে, সার্বিক শিক্ষাব্যবস্থায় কোথাও ভুল থেকে যাচ্ছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোয় আমরা যে ব্যবস্থা জারি রেখেছি, তাতে শিক্ষার্থীরা পরনির্রশীল হয়ে পড়ছে। তারা নিজের ওপর আত্মবিশ্বাস হারিয়ে ফেলছে। এটি অবশ্যই গভীরভাবে ভাবার আছে।

জীবন তো একটি সংগ্রামের নাম। নানা ঘাত-প্রতিঘাত বা প্রতিকূলতা মোকাবিলা করেই এগিয়ে যেতে হয়। এ প্রশ্নে আমাদের শিক্ষার্থীরা ভেঙে পড়ছে মনে হচ্ছে। জীবন একটি বড় ক্যানভাস। অনেক ঘটনাই ঘটবে। অতীতের ঘটে যাওয়া ঘটনা সামনে নাও থাকতে পারে। সামনে ভালো-মন্দ দুই সময়ই অপেক্ষা করে। তাই বলে আত্মহত্যা! আত্মহত্যা কোনো সমাধান হতে পারে না।’

Advertisement

 

মানসিকভাবে বিপর্যস্ত কোনো শিক্ষার্থীর খবর পেলে আমরা তাকে কাউন্সিলিং করার চেষ্টা করছি। এটি আমাদের দায়। একজন শিক্ষকের উচিত প্রত্যেক শিক্ষার্থীর সঙ্গে বন্ধুসুলভ আচরণ করে তাদের মানসিকভাবে শক্ত করে তোলা।

 

শিক্ষার্থীর আত্মহত্যায় উদ্বেগ প্রকাশ করে তিনি বলেন, কেন শিক্ষার্থীরা আত্মহত্যা করছে, তা গভীর চিন্তার বিষয়। এ নিয়ে কলেজ, বিশ্ববিবদ্যালয় পর্যায়ে মনোবিজ্ঞানের ওপর জোর দেওয়া দরকার। কাউন্সিলিং করা দরকার।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে মনোবিজ্ঞান নামে একটি বিভাগ রয়েছে বেশ আগে থেকে। ফিজিক্যাল সাইকোলজি নামে আরেকটি বিভাগ খোলা হয়েছে। মেন্টাল হেলথ নামে একটি সেন্টারও করেছি। মানসিকভাবে বিপর্যস্ত কোনো শিক্ষার্থীর খবর পেলে আমরা তাকে কাউন্সিলিং করার চেষ্টা করছি। এটি আমাদের দায়। একজন শিক্ষকের উচিত প্রত্যেক শিক্ষার্থীর সঙ্গে বন্ধুসুলভ আচরণ করে তাদের মানসিকভাবে শক্ত করে তোলা। শিক্ষার্থীরা বরাবরই একজন শিক্ষকের কাছে শিশুসন্তানের মতো। শিক্ষার্থীরা নানা ভুলে পথ হারাতে পারে। বিভ্রান্ত হতে পারে। শিক্ষককে এসব বিষয়ে আন্তরিক হয়ে কথা বলতে হবে।’

সময় বদলে যাচ্ছে। আগের মতো মন মানসিকতা শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিরাজ করছে না, তা আমরাও টের পাচ্ছি। হঠাৎ মন ভেঙে যাচ্ছে। সম্পর্ক ভেঙে গেলেই আত্মহননের পথে পা বাড়াতে নেই। সময়ের ব্যবধানে সব ঠিক হয়ে যায়। প্রতিকূল পরিস্থিতি মোকাবিলা করার শিক্ষাই বিশ্ববিদ্যালয়গুলো দিয়ে থাকে। চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করেই শিক্ষার্থীরা নিজেদের আলোকিত করবে।’

Advertisement

‘বিশ্ববিদ্যালয়ে আত্মহত্যা আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। আগে এমন ছিল না। এটি গভীর যত্নের সঙ্গে দেখা দরকার। সবাইকে এ ব্যাপারে সজাগ থাকা দরকার। সরকার বা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ওপর চেয়ে থাকাই সমাধান নয়। পরিবার হচ্ছে বড় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। সবাই মিলে একটি সমাজ বা রাষ্ট্র। সরকারের ওপর দায় দিয়েই সব এড়ানো যায় না।’ বলছিলেন গোলাম সাব্বির সাত্তার।

 

শিক্ষার্থীরা নানাভাবেই শিক্ষকদের ওপর নির্ভর করে। তারা তো শিখতে আসে। এটি কোনোভাবেই শিক্ষার্থীর দুর্বল কোনো বিষয় নয়। আমি মনে করি, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী অবন্তির আত্মহত্যার মতো প্রতিটি ঘটনার তদন্তসাপেক্ষে বিচার হওয়া জরুরি।

 

নিজের বিশ্ববিদ্যালয় প্রসঙ্গে বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে যৌন নিপীড়ন প্রতিরোধে একটি সেল গঠন করা হয়েছে। এ ধরনের অভিযোগ পেলে আমরা সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নিচ্ছি। এ ব্যাপারে উচ্চ আদালতের একটি নির্দেশনা আছে। যতদিন আইন না হয়েছে, ততদিন এ নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করার কথা।

এটি আসলে নির্ভর করে স্ব-স্ব প্রতিষ্ঠানের ওপর। আমি দায়িত্ব নেওয়ার পর যে কটি অভিযোগ এসেছে, তাৎক্ষণিকভাবে তার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। অন্তত এই প্রশ্নে কোনো ছাড় হতে পারে না। একজন শিক্ষক হিসেবে আমি মনে করি, প্রত্যেক শিক্ষকের উচিত শিক্ষার্থীরা তার কাছে কীভাবে নিরাপদ থাকতে পারে, তার শিক্ষা দেওয়া।

শিক্ষার্থীরা নানাভাবেই শিক্ষকদের ওপর নির্ভর করে। তারা তো শিখতে আসে। এটি কোনোভাবেই শিক্ষার্থীর দুর্বল কোনো বিষয় নয়। আমি মনে করি, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী অবন্তির আত্মহত্যার মতো প্রতিটি ঘটনার তদন্তসাপেক্ষে বিচার হওয়া জরুরি।

এএসএস/এএসএ/জিকেএস