দেশজুড়ে

৩ বছর ধরে অসহায় নারীর বয়স্কভাতা যাচ্ছিল মেম্বারের মেয়ের মোবাইলে

নোয়াখালীর চাটখিল উপজেলার বদলকোট ইউনিয়নে রৌশন আরা বেগম (৬৭) নামের এক অসহায় নারীর বয়স্কভাতার টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে রহিমা আক্তার বিউটি নামের ওই ইউনিয়নের সাবেক সংরক্ষিত মহিলা মেম্বারের বিরুদ্ধে।

Advertisement

বিউটি গত তিন বছর ধরে জালিয়াতির মাধ্যমে নিজের মেয়ের মোবাইল নম্বর ব্যবহার করে ওই টাকা তুলে নেওয়ার প্রমাণ পেয়েছে উপজেলা প্রশাসন। এতে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের যোগসাজশ থাকতে পারে বলে ধারণা স্থানীয়দের।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বদলকোট ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের দক্ষিণ বদলকোট গ্রামের মৃত সিরাজুল হক দেওয়ানের স্ত্রী রৌশন আরা বেগম ২০২১ সালে বয়স্কভাতার জন্য আবেদন করেন। কিন্তু তখন স্থানীয় ইউপি সদস্য বিউটি ভাতা হয়নি বলে জানান ওই নারীকে। কিন্তু গত তিন বছর ওই নারীর আইডি ব্যবহার করে মেয়ে রুবি আক্তারের মোবাইল নম্বর দিয়ে ভাতা তুলে নিয়েছেন বিউটি মেম্বার।

উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের সমাজকর্মী রফিক উল্যাহ জাগো নিউজকে বলেন, ‘সম্প্রতি রৌশন আরা বেগম আবারও বয়স্কভাতার জন্য আবেদন করলে বিষয়টি ধরা পড়ে। এতে দেখা যায়, ২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে তার ভাতা চালু আছে। তিনি ভাতা না পাওয়ার কথা জানালে চেক করে টাকা তুলে নেওয়ার নম্বরে ফোন দিলে তা সাবেক মহিলা মেম্বার রহিমা আক্তার বিউটির মেয়ে ধরেন। পরে রৌশন আরা বেগমের ছেলে ইউসুফ দেওয়ান বিষয়টি লিখিতভাবে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে অভিযোগ করেন।’

Advertisement

অভিযোগকারী ইউসুফ দেওয়ান জাগো নিউজকে বলেন, ‘লিখিত অভিযোগ দেওয়ার পর বদলকোট ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সোলায়মান শেখ আমাদের নিয়ে বৈঠক করেন। এতে বিউটি মেম্বারকে দোষী সাব্যস্ত করে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করেন এবং ছয় হাজার টাকা আমাদের নগদ দেন। পরে আমাদের অভিযোগ প্রত্যাহার করে নিতে চেয়ারম্যান নির্দেশ দেন।’

টাকা তোলার নম্বরে জাগো নিউজ থেকে ফোন দিলে তা বিউটি মেম্বারের মেয়ে রুবি আক্তার রিসিভ করেন। তিনি বলেন, ‘আমি কুমিল্লায় শ্বশুরবাড়ি আছি। আমার মা বলেছে, বয়স্কভাতার এ টাকা আমার শাশুড়ির। তাই তুলে নিতাম। এখন সমস্যা হওয়ায় টাকা ফেরত দেওয়া হয়েছে বলে শুনেছি।’

অভিযুক্ত সাবেক মেম্বার রহিমা আক্তার বিউটি জাগো নিউজকে বলেন, ‘রৌশন আরা বেগমের ভাতা আমার সময় করা হয়েছিল। কিন্তু তার টাকা কীভাবে আমার মেয়ের মোবাইলে আসে আমি তা জানি না। এখন চেয়ারম্যান বলায় আমি ছয় হাজার টাকা দিয়ে এসেছি। চেয়ারম্যান বলেছেন, বাকি চার হাজার টাকা দিয়ে দিতে। আমি উনাকে পরে দিয়ে দেবো।’

এ বিষয়ে বদলকোট ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সোলায়মান শেখ জাগো নিউজকে বলেন, ‘কীভাবে এ সমস্যা হলো আমি কিছুই জানি না। তবে বিষয়টি প্রমাণিত হওয়ার পর দুই পক্ষকে ডেকে মীমাংসা করে দিয়েছি। বিউটি মেম্বার ১০ হাজার টাকা ওই ভাতাভোগী নারীকে দিয়েছেন। জনসম্মুখে ওই মেম্বারকে তিরস্কারও করা হয়েছে।’

Advertisement

উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা আলী হোসাইন জাগো নিউজকে বলেন, ‘জালিয়াতি ধরা পড়ার পর আমরা আসল ব্যক্তির মোবাইল নম্বর সংশোধন করে দিয়েছি। বিষয়টি স্থানীয়ভাবে মীমাংসার কথা জানিয়েছেন অভিযোগকারী। আমি লিখিতভাবে জানাতে বলেছি। তবে বিষয়টি স্থানীয়ভাবে মীমাংসাযোগ্য নয়।’

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফাহমিদা মুস্তফা জাগো নিউজকে বলেন, এটা একটা ‘ডিজিটাল চুরি’। আধুনিক যুগে এমন ঘটনা সরকারের সুন্দর কার্যক্রমকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। এ ঘটনায় সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যানকে বাদী হয়ে মামলা করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। অন্যথায় প্রশাসনের পক্ষ থেকে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ইকবাল হোসেন মজনু/এসআর/জেআইএম