আন্তর্জাতিক

গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনে থামছে না লাশের সারি

ইসরায়েলি বাহিনীর আগ্রাসনে গাজায় যেন লাশের সারি থামছেই না। বেশ কিছু ভিডিও এবং প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে আল জাজিরা জানিয়েছে, গাজার কেন্দ্রীয় দেইর আল বালাহ শহরে ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় কমপক্ষে ১২ জন নিহত হয়েছে। এছাড়া আহত হয়েছে আরও বেশ কয়েকজন। এর মধ্যে বেশ কয়েকজন শিশুও রয়েছে। খবর আল জাজিরার। 

Advertisement

অবশেষে জাবালিয়া এবং গাজা সিটিতে নিরাপদেই ১৩টি ত্রাণবাহী ট্রাক পৌঁছাতে সক্ষম হয়েছে। গত চার মাসের মধ্যে প্রথমবারের মতো দক্ষিণাঞ্চল থেকে গাজা উপত্যকার উত্তরাঞ্চলে কোনো ধরনের সহিংসতা ছাড়াই ত্রাণবাহী ট্রাক প্রবেশ করলো।

গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের সীমান্তে প্রবেশ করে আকস্মিক হামলা চালায় ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস। এরপরেই গাজায় পাল্টা আক্রমণ চালায় ইসরায়েলি বাহিনী। গাজার হামাস-নিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় এখন পর্যন্ত কমপক্ষে ৩১ হাজার ৫৫৩ জন নিহত হয়েছে। এছাড়া আহত হয়েছে আরও ৭৩ হাজার ৫৪৬ জন।

শনিবার মধ্য গাজার একটি বাড়িতে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। এতে অন্তত ৩৬ জন নিহত হয়। ওই বাড়িটি নুসিরাত শরণার্থী ক্যাম্প থেকে বেশি দূরে নয়। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইসরায়েলের হামলায় একটি বাড়ি ধ্বংস হয়েছে। নিতহদের মধ্যে বেশ কয়েকজন শিশুও রয়েছে।

Advertisement

এদিকে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু রাফায় সেনাবাহিনীকে অভিযানের অনুমোদন দিয়েছেন। এমন পরিস্থিতিতে বেশ কয়েকটি দেশ থেকে ইসরায়েলকে সতর্ক করা হয়েছে। রাফায় ইসরায়েলের এই অভিযানের বিরুদ্ধে সতর্কতা জানিয়েছে জাতিসংঘ, জার্মানি ও নেদারল্যান্ডস। যুক্তরাষ্ট্রও ইসরায়েলকে সতর্ক করেছে বলে জানা গেছে।

অন্যদিকে হামাসের দেওয়া নতুন যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে দখলদার ইসরায়েল। শুক্রবার (১৫ মার্চ) যুদ্ধবিরতির ওই প্রস্তাব নিয়ে যুদ্ধকালীন মন্ত্রিসভার সঙ্গে বৈঠক শেষে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু বলেন, হামাসের নতুন প্রস্তাবে এখনো অনেক অযৌক্তিক দাবি রয়েছে। তবে যুদ্ধবিরতি প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে ইসরায়েলি প্রতিনিধিদের কাতারে পাঠাবেন বলে জানিয়েছেন তিনি।

গাজায় ত্রাণ সহায়তা পাওয়ার জন্য জড়ো হওয়া লোকজনের ওপরও হামলা চালাচ্ছে ইসরায়েলি বাহিনী। গাজার উত্তরাঞ্চলে এ ধরনের হামলায় কমপক্ষে ২০ জন নিহত হয়েছে। এছাড়া আহত হয়েছে আরও দেড় শতাধিক মানুষ। এই হামলাকে একটি নতুন পূর্বপরিকল্পিত হত্যাযজ্ঞ বলে অভিহিত করেছে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।

ছবি: এএফপি

Advertisement

পাঁচ মাসের বেশি সময় ধরে গাজায় ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে যুদ্ধ চলছে। ইসরায়েলের হামলায় এরই মধ্যে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে পুরো গাজা। ইসরায়েলের হামলা থেকে বাদ পড়েনি ধর্মীয় স্থাপনাও। ফলে রমজান মাসেও নামাজের স্থান পাচ্ছেন না গাজাবাসী।

গাজার ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত গাজায় অবস্থিত এক হাজার ২০০ মসজিদের মধ্যে অন্তত এক হাজার মসজিদ পুরোপুরি বা আংশিকভাবে ধ্বংস করা হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, গত ৭ অক্টোবরের পর ইসরায়েলের হামলায় ইমাম, মুয়াজ্জিন ও হাফেজসহ শতাধিক ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব নিহত হয়েছেন।

গাজার বাসিন্দারা জানিয়েছেন, রমজান মাসের তারাবিহ নামাজের জন্য পর্যাপ্ত জায়গা পাওয়া যাচ্ছে না, কারণ মসজিদগুলো ধ্বংস করা হয়েছে। এমনকি ওযু করার জন্যও মিলছে না পানি।

আরও পড়ুন:

ত্রাণের অপেক্ষায় থাকা ফিলিস্তিনিদের ওপর হামলা, নিহত ২০ গাজায় এক হাজার মসজিদ ধ্বংস, রমজানে নামাজের জায়গার অভাব হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্রের সফল পরীক্ষা চালালো হুথি

সম্প্রতি মার্কিন সিনেটর চাক শুমার ইসরায়েলে নতুন নির্বাচনের আহ্বান জানিয়েছেন। ইসরায়েলের বর্তমান চরমপন্থী সরকার এবং দেশটির প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু ‌‘শান্তি প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে বাধা’ বলে অভিহিত করেছেন তিনি।

টিটিএন