হরেক রকমের ফুল, ফল ও সবজির সমারোহ বাড়ির ছাদজুড়ে। মনোমুগ্ধকর বাগানটিতে আছে নাম না জানা দেশি-বিদেশি গাছের সমারোহ। ছাদের এক কোণ থেকে অন্য কোণ পর্যন্ত নানা গাছের সমন্বয়ে এক মায়াবী পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। রাজধানীর বনশ্রী এলাকায় নিজ বাড়িতে এই শখের বাগান গড়ে তুলেছেন এশা ও লামিয়া নামের দুই খালাতো বোন। বাড়ির ছাদে ফল-ফুল ও শাক-সবজির বাগান গড়ে তুলে সাড়া ফেলেছেন তারা। বৃক্ষপ্রেমীদের কাছে বাড়িটি এখন অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত। লামিয়া বলেন, ‘শহুরে যানজটের ফাঁকে স্নিগ্ধতা পেতে বাড়ির ছাদে সবুজের মাঝে কৃষির নির্যাস পেতেই আমাদের এই পরিকল্পনা।’
Advertisement
বৃক্ষপ্রেমী এশা জানান, ছাদ বাগান করার শখ তার বাবার কাছ থেকে তার মধ্যে এসেছে। তিনি বলেন, ‘আমার বাবা সরকারি চাকরি করতেন। সেই সুবাদে রাজধানীর বাইরে আমি বেশি থেকেছি। বাবাকে দেখতাম অনেক সবজির বাগান করতেন। শীতের সময় রং-বেরঙের ফুল গাছ লাগাতেন। এসব দেখতে দেখতে নিজেরও শখ জাগে, আমার নিজের বাগান থাকবে। বারান্দা-ছাদে সুন্দর সুন্দর গাছ লাগাবো।’
এশা ও লামিয়া বলেন, ‘আমাদের ছাদ বাগানে প্রায় সব ধরনের গাছ আছে। ফুলের মধ্যে গোলাপ, বেলি, নয়নতারা বাদেও দেশি-বিদেশি ফুল গাছ ও ক্যাক্টাস, ঘৃতকুমারি আছে। সবজির মধ্যে বেগুন, টমেটো, লাউ, করলা, চিচিঙ্গা ইত্যাদি আছে। ফলের মধ্যে ড্রাগন, লিচু, পেঁপে, আম, বরই, পেয়ারা, লেবু আছে। এ ছাড়া মরিচ ও আখ আছে। কিছুদিন আগে তেতুল গাছ লাগানো হয়েছে।’
ছাদে গাছ লাগালে মাটির সঙ্গে গাছের সরাসরি সংযোগ থাকে না। তাই নিতে হয় একটু বাড়তি যত্ন। মিলেমিশে পরিবারের সবাই গাছের যত্ন নেন। এমনই জানাচ্ছিলেন দুই বোন। তারা বলেন, ‘বাড়তি যত্নে গোবর সার দেওয়া হয়। পাশাপাশি পটাশিয়াম ও ইউরিয়া ইত্যাদি প্রয়োগ করা হয়।’
Advertisement
আরও পড়ুন
ঝিনাইদহে বাড়ছে ড্রাগনের ফুল ও ফল কমলা চাষে সফল হলেন আব্দুল হালিমপোকামাকড় রোধে কোনো পদক্ষেপ নিয়েছেন কি না জানতে চাইলে এশা বলেন, ‘একবার আমাদের গাছে পোকা ধরেছিল; তখন বাবা কীটনাশক এনে দিয়েছিলেন। এ ছাড়া নিয়মিত আগাছা পরিষ্কার করতে হয়। বিশেষ করে শীতকালে গাছের আগাছা অনেক বেড়ে যায়। তখন নিড়ানি দিয়ে পরিষ্কার করতে হয়। আর নিয়মিত গাছে পানি দিচ্ছি।’
নিজের হাতে যত্ন নিয়ে উৎপাদিত ফল-ফলাদি ও সবজি খাওয়ার অনুভূতি জানাচ্ছিলেন লামিয়া। তিনি বলেন, ‘আমাদের একবার প্রচুর ড্রাগন ফল হয়েছিল। তখন আমরা আশেপাশের সবাইকে দিয়ে খেয়েছিলাম। ভালোই লাগে যখন একদম ভেজালমুক্ত সতেজ সবজি বা ফল খাওয়া হয়। একটা আত্মতৃপ্তি আসে। উৎসাহ পাই আরও বেশি বেশি গাছ লাগানোর।’
রাজধানীতে একসময় যে পরিমাণ গাছ ছিল, এখন সে পরিমাণে নেই। তাই পরিবেশের স্বাভাবিক তাপমাত্রা বজায় রাখতে বেশি গাছ লাগানোর স্বপ্ন দেখেন দুই বোন। তারা বলেন, ‘রাজধানীর বুকে জায়গা কমে যাচ্ছে। তাই বিকল্প হিসেবে ছাদ বাগান অনেক কার্যকর। প্রতিটি বাড়ির ছাদে বাগান করা হলে উষ্ণতা যেমন কমবে, পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায়ও ভূমিকা রাখবে। সবুজ রং কিন্তু আমাদের দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে, এটি গবেষণায়ও প্রমাণিত।’
Advertisement
ছাদ বাগান নিয়ে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা জানতে চাইলে এশা ও লামিয়া বলেন, ‘আমাদের শখ আরও বেশি করে গাছ লাগানো। ছাদজুড়ে সবুজের পরিমাণ আরও বাড়িয়ে তুলতে চাই। এ ছাড়া বেলকনিতে গাছ লাগাবো। পাশাপাশি পছন্দের বাগান বিলাস, অপরাজিতা, মাধবীলতা এনে লাগানোর পরিকল্পনা আছে।’
এসইউ/এমএস