রাজধানীর রমনার বটমূলে পহেলা বৈশাখে বোমা হামলার ঘটনায় দায়ের করা দুই মামলার চূড়ান্ত নিষ্পত্তি আজও হয়নি। ১৫ বছর আগে ২০০১ সালের ১৪ এপ্রিল বর্ষবরণের অনুষ্ঠানে বর্বর বোমা হামলায় ১০ জন নিহত এবং বহু মানুষ আহত হয়। ওই ঘটনায় দায়েরকৃত মামলায় দুই বছর আগে বিচারিক (নিম্ন) আদালতে রায় হলেও এখন তা হাইকোর্টে চূড়ান্ত নিষ্পত্তির জন্য অপেক্ষায় রয়েছে।ওই ঘটনায় দায়ের হত্যা মামলায় জঙ্গি নেতা মুফতি আবদুল হান্নানসহ আট আসামিকে বিচারিক (নিম্ন) আদালতের দেয়া ফাঁসি ও কারাদণ্ডাদেশের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিলের শুনানি আগামী মে মাসে শেষ হবে বলে আশা করছেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী।গত ১৩ এপ্রিল হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট বেঞ্চের কার্যতালিকার ২১৬ নম্বরে ডেথ রেফারেন্স ও আপিল শুনানির জন্য ছিল। তবে ১৪ এপ্রিল পহেলা বৈশাখ বৃহস্পতিবার থেকে আগামী ১ মে পর্যন্ত হাইকোর্টে অবকাশ থাকবে। ২ মে থেকে উচ্চ আদালতের নিয়মিত কার্যক্রম শুরু হবে।এছাড়া বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে করা মামলাটি নিম্ন আদালতে কবে শেষ হবে তা নিশ্চিত করে বলতে পারছেন না রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী। এতে করে প্রায় সোয়া যুগ ধরে বিচারের অপেক্ষায় আছে গুরুত্বপূর্ণ এ মামলা দুটি।মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল শেখ মনিরুজ্জামান কবির জাগো নিউজকে বলেন, বর্ষবরণে রমনা বটমূলে বোমা হামলার ঘটনার হত্যা মামলার আসামিদের ডেথ রেফারেন্স ও জেল আপিল শুনানির জন্য হাইকোর্টের কার্যতালিকায় এসেছে গত ৭ এপ্রিল। তবে সুপ্রিম কোর্টের গ্রীষ্মকালিন অবকাশ শুরু হওয়ায় আপিল শুনানি শুরু করা যায়নি।বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি আমির হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চে এ মামলা শুনানির জন্য অপেক্ষায় রয়েছে।সুপ্রিম কোর্টের অতিরিক্ত রেজিস্ট্রার সাব্বির ফয়েজ জাগো নিউজকে বলেন, বিচারিক আদালতের রায় ও মামলার নথিপত্রসহ ডেথ রেফারেন্স শাখায় পৌঁছার পর রায়ের পেপারবুক তৈরি করা হয়েছে। আদালতের ছুটির পর আগামী মাসে শুনানি অনুষ্ঠিত হবে।অপরদিকে বিস্ফোরক দ্রব আইনে করা মামলার কার্যক্রম চলেছে ঢাকার দ্রুত বিচার আদালতে। মামলায় ৮৪ সাক্ষীর মধ্যে ৯ জন তাদের সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ বিষয়ে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী আব্দুল্লাহ আবু বলেন, বিস্ফোরক দ্রব্য আইনের মামলাটি সাক্ষ্য গ্রহণ পর্যায়ে রয়েছে। তবে কার্যক্রম কবে শেষ হবে তা বলা যাচ্ছে না।২০১৪ সালের ২৩ জুন ঢাকার দ্বিতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ রুহুল আমিন বোমা হামলার ঘটনায় দায়ের করা হত্যা মামলার রায় ঘোষণা করেন। রায়ে আটজনকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়।মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্তরা হলো- মুফতি আব্দুল হান্নান, মাওলানা আকবর হোসেন, আরিফ হাসান সুমন, মাওলানা তাজউদ্দিন, হাফেজ জাহাঙ্গীর আলম বদর, মাওলানা আবু বকর ওরফে মাওলানা হাফেজ সেলিম হাওলাদার, মাওলানা আবদুল হাই ও মাওলানা শফিকুর রহমান।এছাড়া যাবজ্জীবন দণ্ড প্রাপ্তরা হলো- শাহাদাত উল্লাহ জুয়েল, মাওলানা সাব্বির, শওকত ওসমান ওরফে শেখ ফরিদ, মাওলানা আব্দুর রউফ, মাওলানা ইয়াহিয়া ও মাওলানা আবু তাহের।দণ্ডপ্রাপ্তদের একইসঙ্গে প্রত্যেককে ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানা প্রদানেরও আদেশ দেয়া হয়েছে। অনাদায়ে তাদের আরো এক বছর সাজা ভোগ করতে হবে।মামলায় মোট ১৪ আসামির মধ্যে ৫ জন শুরু থেকে পলাতক রয়েছে। বাকি আসামিরা গ্রেফতার হয়ে কারাগারে রয়েছে।কারাগারে আটক আসামিরা হলো- মুফতি আবদুল হান্নান, আরিফ হাসান সুমন, শাহাদত উল্লাহ ওরফে জুয়েল, হাফেজ মাওলানা আবু তাহের, মাওলানা আবদুর রউফ, মাওলানা সাব্বির ওরফে আবদুল হান্নান সাব্বির, মাওলানা শওকত ওসমান ওরফে শেখ ফরিদ, হাফেজ মাওলানা ইয়াহিয়া ও মাওলানা আকবর হোসাইন।এছাড়া পলাতক আসামিরা হলো, মাওলানা তাজউদ্দিন, হাফেজ জাহাঙ্গীর আলম বদর, মাওলানা আবু বকর, মুফতি শফিকুর রহমান এবং মুফতি আবদুল হাই।২০০১ সালের ১৪ এপ্রিল রমনা বটমূলে বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে বোমা হামলার ঘটনা ঘটে। এতে ঘটনাস্থলেই ৯ জনের মৃত্যু হয়। পরে হাসপাতালে মারা যান আরো ১ জন। পরে নীলক্ষেত পুলিশ ফাঁড়ির সার্জেন্ট অমল চন্দ্র চন্দ ওইদিনই রমনা থানায় হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে দুটি মামলা করেন।এফএইচ/এমএমজেড/আরএস/পিআর
Advertisement