আজ পবিত্র মাহে রমজানের রহমতের দশকের ৬ষ্ঠ রোজা। বিশ্ব মুসলিম উম্মাহ আল্লাহর সান্নিধ্য লাভের উদ্দেশ্যে পবিত্র মাহে রমজানের রহমতের দশকের দিনগুলো বিশেষ ইবাদতের মধ্য দিয়ে অতিবাহিত করছেন।
Advertisement
মহান আল্লাহপাক মুসলমানের ওপর বছরে একবার একমাস রোজা রাখাকে ফরজ করেছেন। কেননা, রোজা মানুষের মধ্যে এক ধরনের বিনয়, ধৈর্য, সহ্য-ক্ষমতার সৃষ্টি করে থাকে। আর মানুষ তার নিজের নাফসের সংশোধনও করে থাকে।
যে ব্যক্তি রোজা রেখে বৃথা কাজকর্ম করে, মিথ্যা কথা বলে, ধোকা দেয়, ব্যবসায় বেশি মুনাফা আদায় করে, সেটি তার জন্য রোজা নয়। বরং শুধুমাত্র উপবাস থাকারই নামান্তর। আমাদের প্রিয়নবি (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি মিথ্যা কথা বলা এবং এর ওপর আমল করা থেকে বিরত থাকেনা আল্লাহতায়ালার জন্য তার উপবাস থাকা এবং পিপাসার্ত থাকার কোনো প্রয়োজন নেই। অর্থাৎ তার রোজা রাখা বেকার বলে গণ্য হবে’ (বোখারি, কিতাবুস সওম)। অর্থাৎ যখন মানুষ রোজার প্রকৃত উদ্দেশ্য থেকে গাফেল হয়ে যায় তখন সে শুধু নিজেকে উপবাসই রাখে যা আল্লাহতায়ালার জন্য কোন প্রয়োজন নেই। আল্লাহ মানুষের অন্তর দেখেন, কোন নিয়তে সে রোজা রাখছে এটাই মূল বিষয়।
হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, মহানবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহ থেকে বর্ণনা করেন-‘প্রত্যেক আমলের কাফফারা রয়েছে; আর সাওম বা রোজা হচ্ছে আমার জন্য। আমি তার (রোজার) প্রতিদান দেব।’ (বুখারি ও মুসনাদে আহমদ)হজরত আবু সাঈদ খুদরি রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি-‘যে রমজানের রোজা পালন করল, তার সীমারেখা ঠিক রাখল এবং যা থেকে বিরত থাকা দরকার তা থেকে বিরত থাকল, (তাহলে) তার আগের সব পাপ মোচন করা হবে।’ (মুসনাদে আহমদ, বায়হাকি, ইবনে হিব্বান)
Advertisement
প্রত্যেক প্রাপ্ত বয়স্ক, বুদ্ধিমান, সুস্বাস্থ্যের অধিকারী সমগ্র মুসলমান নারী-পুরুষদের ওপর রমজানের রোজা রাখা ফরজ। মুসাফির ও অসুস্থ ব্যক্তিদের রোজা না রাখার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। অর্থাৎ মানুষ সফরে থাকলে ও অসুস্থ থাকলে রোজা রাখবে না। বরং রমজানের পরে পরবর্তী রমজানের পূর্বে এ রোজা রাখবে এবং গণনা পূর্ণ করতে হবে। যারা চির রোগী, দুর্বল এবং যাদের রমজানের পরেও রোজা রাখার শক্তি নাই, সন্তানদের দুধ দানকারী মায়েরা এবং গর্ভবতী মহিলারা যাদের পক্ষে রোজা রাখা একেবারেই অসম্ভব তারা তাদের তৌফিক অনুযায়ী ফিদিয়া দিবে। এ বিষয়ে আমরা ৩য় রমজানে আলোচনা করেছি।
রোজার ফযিলত ও গুরুত্ব সম্পর্কে হাদিসে উল্লেখ রয়েছে, হজরত আবু হুরায়রা (রা.) কর্তৃক বর্ণিত, রসুল করিম (সা.) বলেছেন, ‘ইবনে আদমের প্রতিটি নেক আমল বাড়িয়ে দেয়া হবে। দশগুণ থেকে সাতশত গুণ প্রতিদান দেয়া হবে। কিন্তু রোজার ব্যাপারে আল্লাহতায়ালা বলেন, রোজা আমার জন্য রাখা হয়। আর এর জন্য আমি নিজে এর প্রতিদান দিব। (অথবা আমি স্বয়ং এর প্রতিদান হয়ে যাব) কেননা রোজাদার তার চাহিদা এবং খাবার খাওয়া আমার জন্য ছেড়ে দেয়।’
তিনি (সা.) আরেক স্থানে বলেন, ‘যে ব্যক্তি রোজাদার আর সে যদি চুপ থাকে তাহলে সেটাও তার জন্য ইবাদত, তার ঘুমও ইবাদত হিসাবে গণ্য করা হবে। তার দোয়া গ্রহণীয় হবে। আর তার আমলের প্রতিদান বাড়িয়ে দেয়া হবে’।
হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেন, মহানবি (সা.) বলেন, ‘যখন রমজান আসে তখন জান্নাতের দরজা খুলে দেয়া হয় এবং জাহান্নামের দরজা বন্ধ করে দেয়া হয়। আর শয়তানকে শিকলাবদ্ধ করা হয়’ (বুখারি)।
Advertisement
হজরত নবি করিম (সা.) আমাদেরকে বুঝিয়ে দিয়েছেন, যারা রমজান মাসে প্রবেশ করেছে এবং আন্তরিকতার সাথে রোজা রাখছে, তাদের চেহারায় এক পবিত্র পরিবর্তন দেখা যায়, তাদের আত্মা নূরানী হয়ে যায় এবং তার জন্য জান্নাতের দরজা খুলে দেয়া হয়। আর শয়তানকেও শিকল দিয়ে বেঁধে রাখা হয়। কিন্তু যদি কোনো ব্যক্তি রমজান থেকে কল্যাণ না উঠায় তাহলে এই রোজা তার কোনো কাজে লাগবে না। আমাদেরকে পবিত্র রমজান মাসে অনেক বেশি যিকরে এলাহী, তওবা, ইস্তেগফার এবং দরূদ শরীফ পাঠ করা উচিত।
মহানবি (সা.) বলেন, ‘যিকরে এলাহি করা এবং যিকরে এলাহি না করা ব্যক্তির উদাহরণ হচ্ছে জীবিত এবং মৃত ব্যক্তির ন্যায়’ (বুখারি, কিতাবুদ দাওয়াত)। হাদিস পাঠে আরো জানা যায়, আমাদের প্রিয়নবি করিম (সা.) দিনে ৭০ বারের অধিক দুরূদ শরীফ পাঠ করতেন।
তাই আমাদের প্রত্যেকের উচিত হবে, পবিত্র এ মাসে অযথা কোনো সময় নষ্ট না করে আল্লাহর ধ্যানে মগ্ন হওয়া। এছাড়া এই পবিত্র মাসে ফিতরানা, ফিদিয়া আদায় করা ছাড়াও বেশি বেশি দান, সদকা-খয়রাত করা। আল্লাহপাক আমাদেরকে এই পবিত্র মাহে রমজানে বৃথা কাজকর্ম থেকে দূরে থাকার তৌফিক দান করুন, আমিন।
লেখক: প্রাবন্ধিক ও গবেষক।masumon83@yahoo.com
এইচআর/এমএস