আন্তর্জাতিক

ভারতের রাজনৈতিক দলগুলোকে অর্থ দেয় যেসব ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠান

ভারতের নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটে রাজনৈতিক দলগুলোকে অনুদান বা চাঁদা দেওয়া প্রতিষ্ঠানের নাম প্রকাশ করা হয়েছে। তাছাড়া যেসব রাজনৈতিক দল তাদের দাতার কাছ থেকে কী পরিমাণ অর্থ পেয়েছে তাও প্রকাশ করেছে ভারতীয় নির্বাচন কমিশন। ভারতের জাতীয় নির্বাচনের মাত্র মাস দুয়েক আগে এসব তথ্য জনসম্মুখে আনা হলো।

Advertisement

সোমবার ভারতের সুপ্রিম কোর্ট স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়াকে (এসবিআই) দেশটির জাতীয় নির্বাচন কমিশনের কাছে নির্বাচনী বন্ডের তথ্য জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন। সেই নির্দেশ মেনেই মঙ্গলবার (১৩ মার্চ) নির্বাচন কমিশনে নির্বাচনী বন্ডের তথ্য জমা দেয় এসবিআই।

বুধবার এসবিআই সুপ্রিম কোর্টকে জানায়, গত পাঁচ বছরে তারা বিভিন্ন মূল্যের মোট ২২ হাজার ২১৭টি নির্বাচনী বন্ড বিক্রি করেছে। আর ২০১৯ সালের ১ এপ্রিল থেকে ২০২৪ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যে রাজনৈতিক দলগুলো ২২ হাজার ৩০টি বন্ড ভেঙে অর্থ তুলে নিয়ে গেছে।

বৃহস্পতিবার (১৫ মার্চ) ভারতের নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটে নির্বাচনী বন্ডের ক্রেতা ও যে দলগুলো যেসব বন্ড পেয়েছে, তার তালিকা প্রকাশ করা হয়। সেই তালিকাতেই দেশটির রাজনৈতিক দলগুলোর শীর্ষ চাঁদা দাতাদের নাম উঠে এসেছে।

Advertisement

জানা গেছে, গত পাঁচ বছর ধরে ভারতের রাজনৈতিক দলগুলোকে তহবিল যোগানো শীর্ষ দাতাদের মধ্যে রয়েছে বেদান্ত লিমিটেড, ভারতীয় এয়ারটেল, আরপিএসজি গ্রুপ ও এসেল মাইনিংয়ের মতো কিছু বৃহত্তম ভারতীয় কোম্পানি।

স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়া বলেছে, ২০১৮ সালে স্কিম শুরু হওয়ার পর থেকে ৩০ ধাপে ১৬ হাজার ৫১৮ কোটি রুপির নির্বাচনী বন্ড জারি করে তারা। বন্ড কেনায় শীর্ষে রয়েছে বিতর্কিত লটারি ব্যবসায়ী মার্টিন সান্তিয়াগোর সংস্থা ‘ফিউচার গেমিং অ্যান্ড হোটেল সার্ভিসেস’। তারা মোট ১ হাজার ৩৬৮ কোটি রুপির নির্বাচনী বন্ড কিনেছে।

৯৬৬ কোটি রুপির নির্বাচনী বন্ড কিনে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে বিখ্যাত তেলেগু ব্যবসায়ী কৃষ্ণা রেড্ডির প্রতিষ্ঠান ‘মেঘা ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেড’। মূলত হায়দরাবাদ ভিত্তিক এই কোম্পানিটি একাধিক সরকারি প্রকল্পের কার্যাদেশ পেয়েছে। মেঘা ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের সহায়ক সংস্থা ‘ওয়েস্টার্ন ইউপি পাওয়ার ট্রান্সমিশন কো লিমিটেডও ২২০ কোটি রুপির নির্বাচনী বন্ড কিনেছে।

ভারতের রাজনৈতিক দলগুলোকে গত পাঁচ বছর ধরে তহবিল যোগানো শীর্ষ দাতা কোম্পানির মধ্যে রয়েছে বেদান্ত লিমিটেড, ভারতী এয়ারটেল, আরপিএসজি গ্রুপ ও এসেল মাইনিংসহ অন্যান্য বৃহত্তম ভারতীয় কোম্পানি। তবে আশ্চর্যের বিষয় হলো, গত কয়েক বছরে ফিউচার গেমিং অ্যান্ড হোটেল সার্ভিসেসসহ বন্ড কেনায় শীর্ষ ৩০টি সংস্থার ১৪টিতেই তল্লাশি অভিযান চালিয়েছে সিবিআই, ইডি কিংবা আয়কর দপ্তরের (আইটি) কর্মকর্তারা।

Advertisement

জানা গেছে, অধিকাংশ কোম্পানি ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) বন্ড কিনেছে। অর্থাৎ কোম্পানিগুলোর অর্থের সবচেয়ে বড় অংশ পেয়েছে নরেন্দ্র মোদীর দল। এখন পর্যন্ত ৬ হাজার ৬১ কোটি রুপি মূল্যের নির্বাচনী বন্ড পেয়েছে তারা। আর ২০১৮ থেকে ২০২৪ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত ব্যক্তি ও কোম্পানিগুলো ভারতের রাজনৈতিক দলগুলোকে ১২ হাজার কোটি রুপি অনুদান দিয়েছে দাতা প্রতিষ্ঠানগুলো। এর ৫০ শতাংশেরই বেশি পেয়েছে মোদীর বিজেপি।

অন্যদিকে, বিজেপির পরপরই রয়েছে মমতা ব্যানার্জীর সর্বভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেস (এআইটিসি) ও ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস (আইএনসি)। ১৬ হাজার ৯ কোটি রুপির বন্ড পেয়ে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস ও ১৪ হাজার ২১ কোটি রুপির বন্ড পেয়ে তৃতীয় স্থানে রয়েছে কংগ্রেস।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি জানিয়েছে, নরেন্দ্র মোদী ভারতের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর ২০১৮ সালে চালু হওয়া নির্বাচনী বন্ডের মাধ্যমে দাতার পরিচয় ও অর্থের পরিমাণ গোপন রেখে রাজনৈতিক দলগুলোকে চাঁদা দেওয়ার সুযোগ করে দেওয়া হয়েছিল। এসবিআই এই পুরো বিষয়টি দেখভালের দায়িত্বে ছিল।

এই প্রক্রিয়ায় রাজনৈতিক দলগুলোকে চাঁদা দিতে ইচ্ছুক ব্যক্তি বা কোম্পানি স্টেট ব্যাঙ্ক থেকে নির্দিষ্ট অঙ্কের আর্থিক বন্ড কিনে সেটি ওই দলকে দিয়ে দেবেন। আর বন্ড ব্যাংকে জমা দিয়ে অর্থ তুলে নেবে রাজনৈতিক দলগুলো। এই প্রক্রিয়া ব্যক্তি ও কোম্পানিগুলোকে বেনামে রাজনৈতিক দলগুলোকে অনির্দিষ্ট পরিমাণ চাঁদা দেওয়ার সুযোগ করে দেয়।

রাজনৈতিক দলগুলোকে চাঁদা দেওয়ার এই পদ্ধতিই নির্বাচনী বন্ড নামে পরিচিত হয়। কিন্তু কারা রাজনৈতিক দলগুলোকে কী পরিমাণ চাঁদা দিচ্ছে তা এই প্রক্রিয়ার কারণে জনগণ জানতে পারছে না আর তাতে তাদের অধিকার ক্ষুণ্ণ হচ্ছে বলে আদালতে রিট করে ভারতের বিরোধীদলীয় আইনজীবীরা ও একটি সুশীল সমাজ গোষ্ঠী।

এর জবাবে ভারতের সুপ্রিম কোর্ট গত মাসে নির্বাচনী বন্ডকে ‘অসাংবিধানিক’ ঘোষণা করে এটি নিষিদ্ধ করে।

চাঁদা দেওয়ার এই প্রক্রিয়াটি বাতিলের সিদ্ধান্ত বিজেপি ও ভারতের অন্য প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য একটি বিপত্তি হিসেবে দেখা হচ্ছে। আসছে মে মাসে ভারতে জাতীয় নির্বাচন শুরু হচ্ছে। তার আগে আদালতের এ সিদ্ধান্তে এ প্রক্রিয়ার সুবিধাভোগী অনেকগুলো রাজনৈতিক দল চাপে পড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

সূত্র: এনডিটিভি, হিন্দুস্তান টাইমস ও অন্যান্য

এসএএইচ