আজ (১৪ মার্চ) তৃতীয় রমজান দিবাগত রাতে ইশার পর চতুর্থ দিনের তারাবিহ নামাজে আমাদের দেশের মসজিদগুলোতে কোরআনের পঞ্চম পারার শেষার্ধ ও ষষ্ঠ পারা তিলাওয়াত করা হবে। সুরা নিসার ৮৮ নং আয়াত থেকে শুরু হয়ে তিলাওয়াত হবে সুরা মায়েদার ৮২ নং আয়াত পর্যন্ত।
Advertisement
পবিত্র কোরআনের এ অংশে দৈনন্দিন জীবন সংশ্লিষ্ট গুরুত্বপূর্ণ যে বিধিবিধান আলোচিত হয়েছে:
১. কেউ যখন সফরে বের হয়, তখন নামাজে কসর করতে পারে অর্থাৎ চার রাকাত বিশিষ্ট ফরজ নামাজগুলো দুরাকাত পড়তে পারে। আল্লাহ বলেন,
وَ اِذَا ضَرَبۡتُمۡ فِی الۡاَرۡضِ فَلَیۡسَ عَلَیۡکُمۡ جُنَاحٌ اَنۡ تَقۡصُرُوۡا مِنَ الصَّلٰوۃِ
Advertisement
আর যখন তোমরা যমীনে সফর করবে, তখন তোমাদের সালাত কসর করাতে কোন দোষ নেই। (সুরা নিসা: ১০১)
কেউ যদি ৪৮ মাইল (৭৭.২৩২ কিলোমিটার) রাস্তা অতিক্রম করে কোনো জায়গায় যাওয়ার উদ্দেশ্যে নিজের এলাকার লোকালয় থেকে বের হয়, ইসলামি শরিয়তের পরিভাষায় তাকে মুসাফির বলা হয় এবং নামাজ কসর করা ও রোজায় ছাড় পাওয়াসহ মুসাফিরের যাবতীয় বিধিবিধান তার ব্যাপারে প্রযোজ্য হয়।
২. ‘কালালাহ’ অর্থাৎ যার সন্তান নেই, বাবা-মাও বেঁচে নেই তার মিরাস বণ্টনের বিধান বর্ণনা করে আল্লাহ তাআলা বলেন, یَسۡتَفۡتُوۡنَکَ قُلِ اللّٰهُ یُفۡتِیۡکُمۡ فِی الۡکَلٰلَۃِ اِنِ امۡرُؤٌا هَلَکَ لَیۡسَ لَهٗ وَلَدٌ وَّ لَهٗۤ اُخۡتٌ فَلَهَا نِصۡفُ مَا تَرَکَ ۚ وَ هُوَ یَرِثُهَاۤ اِنۡ لَّمۡ یَکُنۡ لَّهَا وَلَدٌ فَاِنۡ کَانَتَا اثۡنَتَیۡنِ فَلَهُمَا الثُّلُثٰنِ مِمَّا تَرَکَ وَ اِنۡ کَانُوۡۤا اِخۡوَۃً رِّجَالًا وَّ نِسَآءً فَلِلذَّکَرِ مِثۡلُ حَظِّ الۡاُنۡثَیَیۡنِ یُبَیِّنُ اللّٰهُ لَکُمۡ اَنۡ تَضِلُّوۡا وَ اللّٰهُ بِکُلِّ شَیۡءٍ عَلِیۡمٌ
তারা তোমার কাছে সমাধান চায়। বল, ‘আল্লাহ তোমাদেরকে সমাধান দিচ্ছেন ‘কালালাহ’ সম্পর্কে। কোন ব্যক্তি যদি মারা যায় এমন অবস্থায় যে, তার কোন সন্তান নেই এবং তার এক বোন রয়েছে, তবে সে যা রেখে গিয়েছে বোনের জন্য তার অর্ধেক, আর সে (নারী) যদি সন্তানহীনা হয় তবে তার ভাই তার উত্তরাধিকারী হবে। কিন্তু যদি তারা (বোনেরা) দুজন হয়, তবে সে যা রেখে গিয়েছে তাদের জন্য তার দুই তৃতীয়াংশ। আর যদি তারা কয়েক ভাই বোন পুরুষ ও নারী হয়, তবে পুরুষের জন্য দুই নারীর অংশের সমান হবে। আল্লাহ তোমাদেরকে ব্যাখ্যা দিচ্ছেন, যাতে তোমরা পথভ্রষ্ট না হও এবং আল্লাহ প্রতিটি বিষয় সম্পর্কে সর্বজ্ঞ। (সুরা নিসা: ১৭৬)
Advertisement
৩. নামাজের জন্য অজুর মাধ্যমে পবিত্রতা অর্জন করা জরুরি। অজুর ফরজ চারটি: ১ চেহারা ধৌত করা, ২. উভয় হাত কনুইসহ ধৌত করা, ৩. মাথার কমপক্ষে এক চতুর্থাংশ মাসাহ করা ৪. উভয় পা টাখনুসহ ধৌত করা। কারো ওপর যদি গোসল ফরজ হয়, তাহলে শুধু অজু করলে হবে না বরং গোসল করে পবিত্র হতে হবে। অজু বা গোসল ফরজ অবস্থায় অজু ও গোসল করার জন্য পানি না পাওয়া গেলে বা পানি ব্যবহার করা সম্ভব না হলে তায়াম্মুমের মাধ্যমে পবিত্র হওয়া যায়। আল্লাহ তাআলা বলেন,
یٰۤاَیُّهَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡۤا اِذَا قُمۡتُمۡ اِلَی الصَّلٰوۃِ فَاغۡسِلُوۡا وُجُوۡهَکُمۡ وَ اَیۡدِیَکُمۡ اِلَی الۡمَرَافِقِ وَ امۡسَحُوۡا بِرُءُوۡسِکُمۡ وَ اَرۡجُلَکُمۡ اِلَی الۡکَعۡبَیۡنِ وَ اِنۡ کُنۡتُمۡ جُنُبًا فَاطَّهَّرُوۡا وَ اِنۡ کُنۡتُمۡ مَّرۡضٰۤی اَوۡ عَلٰی سَفَرٍ اَوۡ جَآءَ اَحَدٌ مِّنۡکُمۡ مِّنَ الۡغَآئِطِ اَوۡ لٰمَسۡتُمُ النِّسَآءَ فَلَمۡ تَجِدُوۡا مَآءً فَتَیَمَّمُوۡا صَعِیۡدًا طَیِّبًا فَامۡسَحُوۡا بِوُجُوۡهِکُمۡ وَ اَیۡدِیۡکُمۡ مِّنۡهُ مَا یُرِیۡدُ اللّٰهُ لِیَجۡعَلَ عَلَیۡکُمۡ مِّنۡ حَرَجٍ وَّ لٰکِنۡ یُّرِیۡدُ لِیُطَهِّرَکُمۡ وَ لِیُتِمَّ نِعۡمَتَهٗ عَلَیۡکُمۡ لَعَلَّکُمۡ تَشۡکُرُوۡنَ
হে মুমিনগণ, যখন তোমরা নামাজে দাঁড়াতে চাও, তখন তোমাদের মুখ ও কনুই পর্যন্ত হাত ধৌত কর, মাথা মাসেহ কর এবং টাখনু পর্যন্ত পা (ধৌত কর)। আর যদি তোমরা অপবিত্র থাক, তবে ভালোভাবে পবিত্র হও। আর যদি অসুস্থ হও কিংবা সফরে থাক অথবা যদি তোমাদের কেউ পায়খানা থেকে আসে অথবা তোমরা যদি স্ত্রী সহবাস কর অতঃপর পানি না পাও, তবে পবিত্র মাটি দ্বারা তায়াম্মুম কর; তোমাদের মুখ ও হাত মাটি দ্বারা মাসেহ কর। আল্লাহ তোমাদের উপর কোন সমস্যা সৃষ্টি করতে চান না, বরং তিনি চান তোমাদের পবিত্র করতে এবং তার নেয়ামত তোমাদের ওপর পূর্ণ করতে, যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন কর। (সুরা মায়েদা: ৬)
৪. যথাযথ সাক্ষ্য প্রমাণের ভিত্তিতে কারো বিরুদ্ধে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ সম্পদ চুরির অপরাধ প্রমাণিত হলে ইসলামি রাষ্ট্রের রাষ্ট্রীয় দণ্ড হলো ওই চোরের হাত কেটে দেওয়া। আল্লাহ তাআলা বলেন,
وَالسَّارِقُ وَ السَّارِقَۃُ فَاقۡطَعُوۡۤا اَیۡدِیَهُمَا جَزَآءًۢ بِمَا کَسَبَا نَکَالًا مِّنَ اللّٰهِ وَ اللّٰهُ عَزِیۡزٌ حَکِیۡمٌ
আর পুরুষ চোর ও নারী চোর তাদের উভয়ের হাত কেটে দাও তাদের অর্জনের প্রতিদান ও আল্লাহর পক্ষ থেকে শিক্ষণীয় আযাবস্বরূপ এবং আল্লাহ মহা পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়। (সুরা মায়েদা: ৩৮)
ওএফএফ/এএসএম