দেশজুড়ে

‘আমার জীবনের বিনিময়ে হলেও ছেলেরে ফেরত চাই’

‘আমার ছেলে বাবার সঙ্গে শ্রমিক হিসেবে মাটি কাটার কাজ করতো। সব ছেলে এখনো মানুষের বাড়িতে শ্রমিকের কাজ করে। যে কাজ পায় সেই কাজই করে। প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমি আমার ছেলেরে ভিক্ষা চাই। আমার ছেলেকে ফিরিয়ে দাও। আমার জীবনের বিনিময়ে হলেও আমার ছেলেরে ফেরত চাই।’

Advertisement

এভাবেই বিলাপ করছেন আর বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন ভারত মহাসাগরে জলদস্যুর কবলে পড়া বাংলাদেশের পতাকাবাহী জাহাজ এমভি আবদুল্লাহর প্রকৌশলী রোকন উদ্দিনের মা লুৎফুন্নাহার।

সবশেষ মঙ্গলবার (১২ মার্চ) ভোরে মায়ের সঙ্গে কথা হয় রোকন উদ্দিনের। প্রায় ২০ মিনিটের কথায় বাবার ঋণের টাকা পরিশোধের কথা বলেছিলেন মাকে।

আহাজারি করতে করতে মা লুৎফুন্নাহার বলেন, ‘এক বছর আগে আমার ছেলেকে বিয়ে করাইছি। তার বাচ্ছা অইবো। কী অইবো আমার? তারে পড়াশোনা করাইছি, এই ঋণ এখনো শোধ করতে পারি নাই। জমিজমা বন্ধক। তার ভাই, বাবা এখনো কামলা (মানুষের বাড়িতে শ্রম) দেয়। আমার কী অইবো?’

Advertisement

বুধবার (১৩ মার্চ) বিকেলে নেত্রকোনা সদর উপজেলার ঠাকুরাকোনা ইউনিয়নের বাঘরুয়া গ্রামে গিয়ে দেখা যায় এ দৃশ্য। ছেলের এমন খবরে নির্বাক বাবা মিরাজ আলী। তিনি কোনো কথা বলতে পারছিলেন না।

মোজাম্বিকের মাপুতু বন্দর থেকে সংযুক্ত আরব আমিরাতে যাওয়ার পথে মঙ্গলবার বাংলাদেশ সময় দুপুর দেড়টায় জাহাজটিতে উঠে নিয়ন্ত্রণ নেয় সোমালিয়ার জলদস্যুরা। জাহাজটিতে ৫৫ হাজার টন কয়লা রয়েছে। জাহাজে থাকা ২৩ নাবিকের সবাই বাংলাদেশি। জাহাজটি চট্টগ্রামের কবির গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান এস আর শিপিং লিমিটেডের মালিকানাধীন।

রোকন উদ্দিন চট্টগ্রাম মেরিন একাডেমিতে পড়াশোনা শেষ করে ২০১৪ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর প্রকৌশলী হিসেবে এক বছর ট্রেনিং করেন। এর পরের বছর ১৫ জুন কর্মস্থলে যোগদান করেন। গত বছর মার্চে টাঙ্গাইলে স্কুলশিক্ষিকা তানিয়া আক্তারকে বিয়ে করেন।

জাহাজে জিম্মি তৃতীয় প্রকৌশলী রোকন উদ্দিনের বড় বোন শাহামিনা আক্তার বলেন, ‘আমার ভাবি এখন সন্তানসম্ভবা। আমরা টাকা-পয়সা, চাকরি কিচ্ছু চাই না। সরকারের কাছে আবেদন, যেন সবাইকে সুস্থভাবে ফেরত দেওয়া হয়। আমরা তাদের সুস্থভাবে ফেরত চাই।’

Advertisement

স্থানীয় ইউপি সদস্য এখলাস উদ্দিন বলেন, রোকনরা তিন ভাই ও এক বোন। দরিদ্র পরিবারের চার সন্তানের মধ্যে তৃতীয় ইঞ্জিনিয়ার রোকন উদ্দিন। ভাই, বাবা এখনো দিনমজুর হিসেবে কাজ করেন। যে কোনো মূল্যে রোকনকে ফেরত চান তারা।

নেত্রকোনা সদর উপজেলার ঠাকুরাকোনা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুর রাজ্জাক বলেন, মিরাজ আলী অনেক কষ্ট করে ছেলে রুকন উদ্দিনকে পড়াশোনা করিয়ে মানুষ করেছেন। এই সন্তান ছাড়া তার আর কোনো সম্পদ নেই। জিম্মি সবাইকে আমরা সুস্থ শরীরে ফেরত চাই।

এইচ এম কামাল/এসআর/এএসএম