সোমালিয়ার জলদস্যুদের হাতে জিম্মি বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আবদুল্লাহর নাবিক ও ক্রুদের ফিরে পেতে জাহাজটির মালিকপক্ষ কেএসআরএম গ্রুপের চট্টগ্রাম অফিসে ভিড় করছেন স্বজনরা। এসময় কেএসআরএমের পক্ষ থেকে আশ্বস্ত করা হয়, যে কোনো মূল্যে নাবিক ও ক্রুদের সুস্থ অবস্থায় উদ্ধার করা হবে।
Advertisement
ঘটনার পর থেকেই নাবিকদের স্বজনরা কেএসআরএমের অফিসে যোগাযোগ শুরু করেন। বুধবার (১৩ মার্চ) সকালে অনেকেই চট্টগ্রাম নগরের আগ্রাবাদে কবির গ্রুপের অফিসে আসেন।
কবির গ্রুপের অফিসে যারা আসেন তাদের কারও বাবা, কারও সন্তান বা স্বজন জলদস্যুদের হাতে জিম্মি। এসময় তাদের অনেককেই জিম্মি স্বজনদের ছবি প্রদর্শন করতে দেখা যায়।
এমভি আবদুল্লাহর ফোর্থ ইঞ্জিনিয়ার তানভীর আহমেদের পরিবারও আসে কবির গ্রুপের অফিসে। ছেলে আবদুল্লাহর ছবি হাতে দাঁড়িয়ে ছিলেন তার মা পঞ্চাশোর্ধ্ব জোৎস্না বেগম।
Advertisement
তিনি বলেন, ‘সর্বশেষ গতকাল সন্ধ্যায় কথা হয়েছে। এরপর থেকে মোবাইল ফোন বন্ধ। আমরা কর্তৃপক্ষের কাছে আমাদের সন্তানদের ফেরত চাইতে এসেছি।’
স্বামীর খোঁজে এসেছিলেন জিম্মি নাবিক নুরউদ্দিনের স্ত্রী জান্নাতুল ফেরদৌস। তিনি বলেন, ‘অডিও বার্তায় জানিয়েছেন তাদের জাহাজ সোমালিয়ার উপকূলের দিকে নিয়ে যাচ্ছে দস্যুরা। জাহাজে তখন অস্ত্রশস্ত্রসহ ৫০ জনের মতো জলদস্যু ছিল। তাদের মুক্ত করতে আমরা যেন মালিকপক্ষের সঙ্গে দ্রুত যোগাযোগ করি- এই কথা বলেছেন নুরউদ্দিনে।’
আরও পড়ুন
জিম্মি নাবিকদের সুস্থ ফেরত আনতে আমরা বদ্ধপরিকর বাংলাদেশি জাহাজটি সোমালিয়া উপকূলে, দায়িত্ব নেবে অন্য জলদস্যুরা টাকা না দিলে মেরে ফেলবে, শুনে মূর্ছা যাচ্ছেন অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীফেরদৌসের মতোই স্বামীর খোঁজে আসেন নাবিক শফিকুল ইসলামের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী। তিনি বলেন, ‘আমরা টাকা-পয়সা কিছু চাই না, শুধু সন্তানকে তার বাবার চেহারাটা দেখাতে চাই।’
Advertisement
এসময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন কেএসআরএম গ্রুপের মিডিয়া উপদেষ্টা মিজানুল ইসলাম। জাগো নিউজকে তিনি বলেন, ‘বুধবার সকালেও নাবিকদের সঙ্গে কথা হয়েছে। সবাই ভালো আছেন। আমরা জলদস্যুদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করছি। যে কোনো মূল্যে নাবিক ও ক্রুদের সুস্থ অবস্থায় উদ্ধার করার বিষয়ে জোর দিচ্ছি। সবাইকে নিরাপদে ফিরিয়ে আনতে যা যা দরকার সব করবো।’
জলদস্যুদের হাতে জিম্মি নাবিকরা
জিম্মি নাবিকদের মধ্যে রয়েছেন- জাহাজের মাস্টার মোহাম্মদ আবদুর রশিদ। তিনি চট্টগ্রাম নগরীর গোসাইলডাঙ্গা এলাকার বাসিন্দা। চিফ অফিসার আতিক উল্লাহ খানের বাড়ি চন্দনাইশ উপজেলার বরকলে, সেকেন্ড অফিসার মোজাহেরুল ইসলাম চৌধুরী সাতকানিয়া উপজেলার বাসিন্দা, থার্ড অফিসার এন মোহাম্মদ তারেকুল ইসলাম ফরিদপুর জেলার মধুখালি উপজেলার বাসিন্দা। ডেক ক্যাডেট সাব্বির হোসাইন টাঙ্গাইল জেলার নাগরপুর থানার বাসিন্দা, চিফ ইঞ্জিনিয়ার এ এস এম সাইদুজ্জামান নওগাঁ সদর উপজেলার বাসিন্দা, সেকেন্ড ইঞ্জিনিয়ার মো. তৌফিকুল ইসলাম ও থার্ড ইঞ্জিনিয়ার মো. রোকন উদ্দিন খুলনা জেলার সোনাডাঙ্গা উপজেলার বাসিন্দা, ফোর্থ ইঞ্জিনিয়ার তানভীর আহমেদ ও ইলেকট্রিশিয়ান ইব্রাহীম খলিল উল্লাহ ফেনী জেলার বাসিন্দা, ইঞ্জিন ক্যাডেট আইয়ুব খান লক্ষ্মীপুর জেলার রায়পুর থানার বাসিন্দা।
এছাড়া ক্রু দের মধ্যে মো. শরিফুল ইসলামের বাড়ি চট্টগ্রাম নগরের বন্দর থানা এলাকায়। মো. আসিফুর রহমানের বাড়ি চট্টগ্রামের লোহাগাড়া, মোশাররফ হোসেন শাকিল ও আইনুল হকের বাড়ি মিরসরাই উপজেলায়। মো. সাজ্জাদ হোসেন, নুর উদ্দিন ও মোহাম্মদ সামসুদ্দিনের বাড়ি কর্ণফুলী উপজেলায়। এছাড়া মো. আনোয়ারুল হকের বাড়ি নোয়াখালীর কোম্পানিগঞ্জ, জয় মাহমুদের বাড়ি নাটোরের বাগাতিপাড়া থানায়, মো. নাজমুল হকের বাড়ি সিরাজগঞ্জ জেলার কামারকান্দা থানায় এবং মো. আলী হোসেনের বাড়ি বরিশালের বানারীপাড়ায়।
এদিকে, আজ বুধবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্তর্জাতিক নারী দিবস-২০২৪ এর সমাপনী অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ‘জিম্মি জাহাজের সঙ্গে তৃতীয়পক্ষের মাধ্যমে যোগাযোগের চেষ্টা চলছে। তবে এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো যোগাযোগ হয়নি।’
এর আগে দুপুরে সচিবালয়ে মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ বলেন, ‘যেকোনও মূল্যে জিম্মি নাবিকদের ফিরিয়ে আনতে কাজ চলছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, নৌবাহিনী এবং আমরা যৌথভাবে কাজ করছি।’
এএজেড/কেএসআর/এমএস